Advertisment

Special to the Express | পরতে পরতে রহস্য! IC 814 বিমান হাইজ্যাক, কীভাবে রহস্যভেদ করল মুম্বই পুলিশ?

IC814 hijacking case: ২৪ ডিসেম্বর ১৯৯৯! নেপালের কাঠমান্ডু বিমানবন্দর থেকে উড়ার মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে কাঠমাণ্ডু থেকে দিল্লিগামী ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের IC 814 বিমানটিকে হাইজ্যাক করা হয়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
IC814 hijacking case

২৪ ডিসেম্বর ১৯৯৯! নেপালের কাঠমান্ডু বিমানবন্দর থেকে উড়ার মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে কাঠমাণ্ডু থেকে দিল্লিগামী ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের IC 814 বিমানটিকে হাইজ্যাক করা হয়।


 Calls to Pakistan & a plan to target Thackeray’s Matoshree: Netflix- এ অনুভব সিনহার ওয়েব সিরিজ IC 814  রিলিজের পর আবারও এই হাইজ্যাকিং নিয়ে শুরু হয়েছে জোর চর্চা। এটি এমন একটি ঘটনা যা কেবল ভারত নয়, নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে। কিন্তু আপনি কী জানেন মুম্বই পুলিশ এই মামলায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। কান্দাহার  হাইজ্যাকিং বিশ্বের এমন বিশেষ কয়েকটি টনার মধ্যে একটি  যেটি পুলিশ প্রমাণ সহ নিষ্পত্তি করেছে। মুম্বই পুলিশের তৎকালীন যুগ্ম কমিশনর ডি শিবনন্দন এই মামলায় মুম্বই পুলিশের ভূমিকা এবং কীভাবে এই মামলার নিষ্পত্তি হয়েছিল সে বিষয়ে অনেক তথ্য সামনে এনেছেন। 

Advertisment

২৪ ডিসেম্বর ১৯৯৯! নেপালের কাঠমান্ডু বিমানবন্দর থেকে উড়ার মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে কাঠমাণ্ডু থেকে দিল্লিগামী ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের IC 814 বিমানটিকে হাইজ্যাক করা হয়। এবিষয়ে তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে জারি করা হয় হাই অ্যাালার্ট। সে সময় মুম্বই পুলিশের যুগ্মকমিশনর ছিলেন ডি শিবনন্দন। তিনি মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চেরও প্রধান ছিলেন। সে সময় এইচ মেন্ডনকা  ছিলেন মুম্বই পুলিশের কমিশনর। তিনি শিবনন্দনকে হাইজ্যাকের বিষয়ে যাবতীয় তথ্য দেন। পুরো ইউনিটকে হাই অ্যালার্ট করেন। 

শিবনন্দন তার 'ব্রহ্মাস্ত্র' গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে ঘটনার পরের দিন ছিল বড়দিন। আমি ক্রাফোর্ড মার্কেটে মুম্বই পুলিশের হেডকোয়াটার্সে ছিলাম। প্রায় ১১টা বাজে। মহারাষ্ট্র ক্যাডারের আইপিএস হেমন্ত কারকারে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। এরপর তাকে RAW-র মুম্বই অফিসে পোস্ট করা হয়। হেমন্ত কারকারে আমাকে বলেন, RAW একটি ফোন নম্বর পেয়েছে যেটির লোকেশন মুম্বইতে এবং সেই ফোন থেকে পাকিস্তানের একটি নম্বরে অনবরত কল করা হচ্ছে। হেমন্ত কারকারে আমাকে সেই ফোন নম্বর দিতেই আমি কাজ শুরু করি। 

এবিষয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কারকারে। ফোন নম্বর পেয়েই একাধিক টিম গড়া হয়। আরও তথ্য পেতে সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছে টিম পাঠানো হয়। অন্য দলকে ওই নম্বরের উপর নজর রাখতে বলা হয়। কল যিনি করছেন তাকে খুজে বের করার দায়িত্ব দেওয়া হয় আরেকটি টিমকে। পুলিশ জানতে পারে নম্বরটি জুহু ও মালাডের মধ্যেকার । টাওয়ার সিগন্যাল ছিল ওই এলাকায়। জনাকীর্ণ এলাকা হওয়ায় সেই সময় পুলিশকে বিশেষ কৌশল নিতে হয়। 

কীভাবে রহস্যভেদ?

ক্রাইম ব্রাঞ্চ টানা তিন দিন ফোন ট্র্যাপ করেও সঠিক তথ্য পায়নি। ভারত সরকার ছাড়াও বিশ্বের নজর ছিল ঘটনার দিকে। একটা বিষয় পুলিশ লক্ষ্য করে।  সব কলে গবাদি পশুর আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল।  আজানের শব্দও শোনা যায় কল চলাকালীন। এটি হয়ে ওঠে পুলিশের কাছে অন্যতম ক্লু। গোটা এলাকা তল্লাশি চালালেও কোন তথ্য পায় নি পুলিশ। 

২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যত খালি হাতেই পুলিশকে বসে থাকতে হয়।  তখন সন্ধ্যা ৬টা। মোবাইল নম্বর যে টিম পর্যবেক্ষণ করছিল তারা ফোন চালু করার একটা অ্যালার্ট পান মুম্বই থেকে ওই ব্যক্তি তার পাক হ্যান্ডেলারকে জানায় তার টাকা ফুরিয়ে গিয়েছে। শিবনন্দন জানান ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে বলা হয় তাকে। এটা ক্লু হয়ে ওঠে পুলিশের কাছে। 

 

সিঙ্গাপুর সফরে মোদী, সেমিকন্ডাক্টর থেকে স্বাস্থ্য, একাধিক চুক্তি সাক্ষর দুই দেশের

প্রায় ৪৫ মিনিট পর ফোন আসে। ফোন যিনি করছেন তিনি জইশ-ই মহম্মদের জঙ্গি ছিলেন।  তিনি মুম্বইয়ে উপস্থিত ব্যক্তির ঠিকানা জানতে চাইলেন তিনি যোগেশ্বরী পূর্বের এক ঠিকানা দেন। সেই জঙ্গি  তাকে জানায় এক লাখ টাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাওলার মাধ্যমে টাকা পৌঁছে  দেওয়া হবে।  ওই ব্যক্তিকে রাত ১০ টায় মুম্বইয়ে মহম্মদ আলি রোডে অবস্থিত শালিমার হোটেলে যেতে বলা হয়। নীল জিন্স আর ডোরা কাটা জামা পরা এক ব্যক্তি তাকে টাকা দেবে বলেও জানানো হয়। এরপরই ফোন কেটে দেওয়া হয়। 

তৎপর হয়ে ওঠেন ক্রাইম ব্রাঞ্চের আধিকারিকরা। হোটেলের চারপাশে সাদা পোশাকে পুলিশ তার পজিশন নেয়। কেউ টাকা নিতে এলে তাকে ওয়াচ করা হবে বলেই ঠিক করে পুলিশ। তবে এটাও ঠিক হয় সেখানে তাকে ধরা হবে না। মোট ৬টা টিম অপারেশনে নামে। রাত ১০টা নাগাদ সেখানে এক ব্যক্তি আসেন। তার পরনে ছিল নীল জিন্স ডোরাকাটা শার্ট। কিছু সময় হোটেলে থাকার পর নীল জিন্স পরা ব্যক্তি দক্ষিণ মুম্বইয়ে ট্যাক্সি নিয়ে চলে যান।  কিছুসময় পর যে টাকা নিতে আসে সেও ট্যাক্সি ধরেন। তাকে ধাওয়া করা শুরু করে পুলিশ। মুম্বই সেন্ট্রাল রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছে এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন তিনি। ট্রেনে ওঠার পরও ক্রাইম ব্রাঞ্চের অফিসাররা তাকে ফলো করতে থাকেন। যোগেশ্বরীতে পৌঁছালে  ট্রেন থেকে তিনি নেমে যান ওই ব্যক্তি।  এরপর তিনি একটি অটোতে ওঠেন। বশিরবাগ এলাকায় ওই ব্যক্তি নামেন ঘন বস্তির ভিতরে যেতে শুরু করেন তিনি। এরপর তিনি বস্তির একটি ঘরে ঢোকেন। অপর একজন দরজা বন্ধ করে দেন। সাদা পোশাকে টানা দু'দুন তার উপর নজর দারি চালায় পুলিশ। 

 

আজই সুপ্রিমে স্বস্তি কেজরিওয়ালের? শুরু শুনানি, কী যুক্তি আপ সুপ্রিমোর?

সবুজ সংকেত পেয়েই মুম্বই পুলিশের কমাণ্ডো ও ক্রাইম ব্রাঞ্চের অফিসাররা ঘটনাস্থলে হানা দেয়। সব কিছু এত নিখুঁত ভাবে করা হয়েছিল যে জঙ্গিরা টের পায়নি। দল রফিক মহম্মদ, আব্দুল লতিফ আদানি প্যাটেল, মুস্তাক আহমেদ আজমি ও গোলাপ সিং বাহাদুর মান কে গ্রেফতার করে। উদ্ধার হয় দুটি এ কে ৫৬ , অ্যাসলট রাইফেল, হ্যাণ্ড গ্রেনেড, ৬টি পিস্তল, ১,৭২,০০০ টাকা নগদ। মুম্বইয়ে বড় ধরণের হামলা চালানোর প্ল্যান ছিল তাদের।  তাদের কাছে থেকে উদ্ধার হয় বাল ঠাকরের বাংলো মাতোশ্রীর মানচিত্র। এরপর যোগেশ্বরী ও মালাডের দুটি জায়গায় অভিযান চালিয়ে এক নেপালি দম্পতিকে ধরা হয়। তাদের থেকেও উদ্ধার করা হয় হ্যান্ড গ্রেনেড, ২-৩টি পিস্তল, ১০ হাজার মার্কিন ডলার। পুলিশ জানতে পারে যে ব্যক্তি টাকা সংগ্রহ করতে ও ফোন করছিলেন তার নাম আব্দুল প্যাটেল। তিনি ছিলেন গোটা চক্রান্তের মাথা। 

RG Kar Protest: আরজি-কর প্রতিবাদে চড়াও পুলিশ! বেধড়ক 'মার' আন্দোলনকারীদের, তুলকালাম-কাণ্ড বারাসতে

কান্দাহার বিমান ছিনতাই নিয়ে সারা বিশ্বে তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল। মুম্বই পুলিশের এই পদক্ষেপ তাতে এক নতুন মাত্রা যোগ করে ক্রাইম ব্রাঞ্চের হাতে ধরা পড়া মহম্মদ আসিফ ওরফে বাব্লু ও  রফিক আহমেদ ছিলেন পাক নাগরিক। গোপাল সিং মান ছিলেন নেপালি নাগরিক।  অন্যরা কাশ্মীর ভিত্তিক হরকাত উল আনসুর জঙ্গি গোষ্ঠির সদস্য ছিলেন। জানা যায় যোগেশ্বরী এলাকায় আরও তিন পাক নাগরিক ছিলেন। তাদের গ্রেফাতার করা যায় নি। জেরার ছিনতাইকারীদের নামও উঠে আসে।  তাদের নাম ছিল ইব্রাহিম আতহার, শহীদ আখতার সাঈদ, সানি আহমেদ কাজি, মিস্ত্রি  জহুর ইব্রাহিম, ও শাকির। এই প্রথম যখন ছিনতাইকারীদের পরিচয় বিশ্বের সামনে আনা হয়।  জানা যায় ১৯৯৯ সালের জুলাই থেকে মুম্বাইয়ের ঘাঁটি তৈরি করে জঙ্গিরা। যারা হাইজ্যাকিং করে তারা জাল পাসপোর্টের মাধ্যেম মুম্বই থেকে নেপালে গিয়ে বিমানটিকে হাইজ্যাক করে। কিছু ট্রাভেল এজেন্সির যোগসাজশও প্রকাশ্যে আসে। 

RG Kar Case: 'ঘরে মেয়ের দেহ শায়িত, টাকার অফার করে পুলিশ', মারাত্মক অভিযোগ নির্যাতিতার বাবার

pakistan Mumbai Police Mumbai Terror Attack Union territory Terrorism Terror Funding
Advertisment