Morbid Obesity: ৪৫ বছর বয়সি এক ব্যক্তি হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি হন। হৃদরোগের সম্ভাবনা থাকলেও পরীক্ষায় জানা যায়, তাঁর রক্তে শর্করা, কোলেস্টেরল (cholesterol) ও ইউরিক অ্যাসিড মাত্রার বাইরে। তাঁর ওজন ছিল ৯৮ কেজি, যেটা সরাসরি বুঝিয়ে দেয়, পরিস্থিতি ভয়াবহ, এটা মরবিড স্থূলতার জের। শেষ পর্যন্ত তিনি ওজন কমিয়ে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে সাময়িক রক্ষা পান।
মরবিড স্থূলতা কী?
যখন একজন ব্যক্তির বডি মাস ইনডেক্স (BMI) ৪০-এর বেশি হয়, তখন তাকে মরবিড স্থূলতার মধ্যে ফেলা হয়। তবে শুধু BMI দিয়ে সব কিছু বোঝা যায় না। পেটের চর্বি বা ভিসেরাল ফ্যাট, কোমরের মাপ—পুরুষদের ক্ষেত্রে ৪০ ইঞ্চি ও নারীদের ক্ষেত্রে ৩৫ ইঞ্চি ছাড়ালেই স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বাড়ে। কোমর-হিপ অনুপাত যদি পুরুষদের ক্ষেত্রে ০.৯ ও নারীদের ক্ষেত্রে ০.৮৫ এর বেশি হয়, তাহলেও সমস্যা দেখা দেয়।
মরবিড স্থূলতার কারণ
মরবিড স্থূলতা সাধারণত জীবনযাপন সম্পর্কিত ভুল অভ্যাস থেকে হয়। যেমন:
-
অতিরিক্ত চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবার
-
একটানা বসে থাকা ও নড়াচড়ার অভাব
-
রাতজাগা ও ঘুমের ঘাটতি
-
প্রক্রিয়াজাত খাবার ও কৃত্রিম পানীয়
-
অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও কর্টিসল হরমোনের জের
- এছাড়া জেনেটিক কারণও থাকতে পারে।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
এই রোগীর ক্ষেত্রে প্রথমেই নেওয়া হয় লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট। হঠাৎ করে ভারী ব্যায়ামের বদলে ধীরে ধীরে চলাফেরা শুরু করতে হয়। তাঁর জন্য উপযুক্ত ওয়াটার এরোবিক্স— যা ওজন কমাতে সহায়ক আবার শরীরে চাপও কমায়।
আরও পড়ুন- এবারের বুদ্ধ পূর্ণিমা, যুদ্ধের আবহে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, অসম ও বাংলাদেশে কীভাবে উদযাপিত হবে?
খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন:
-
প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্টফুড, প্যাকেটজাত খাবার বাদ
-
বেশি প্রোটিন ও ফাইবার যুক্ত খাবার বাদ দিতে হবে
-
প্রতিদিন খাওয়ার ক্যালোরি হিসেব করে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে
-
চিনি ও কার্বোহাইড্রেট কমিয়ে ধীরে ধীরে ১০০০ ক্যালোরি পর্যন্ত ঘাটতি তৈরি করতে হবে
আরও পড়ুন- ত্রিপুরায় জুম চাষ ঠিক কী অবস্থায় দাঁড়িয়ে, আদৌ কোনও ভবিষ্যৎ আছে?
পানীয় ও অভ্যাসে বদল:
-
পর্যাপ্ত জলপান বাদ দিতে হবে
-
ধীরে ধীরে অ্যালকোহল ত্যাগ করতে হবে
-
রাতের খাবারের সময় মদ্যপান সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখতে হবে
আরও পড়ুন- সাক্ষাৎ যমদূত! স্নান করতে গেলে মৃত্যু নিশ্চিত, এই প্রাণীর বিষ সায়ানাইডের চেয়ে ১,২০০ গুণ শক্তিশালী!
ওজন কমানো ও মনোবল
যখন রোগী বুঝতে পারেন যে তিনি নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন, তখন তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়ে। ফলে ওষুধ ও থেরাপি আরও কার্যকর হয়। কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে ওজন কমানোর ওষুধ বা বেরিয়াট্রিক সার্জারির দরকার হতে পারে।
আরও পড়ুন- রাতারাতি মুছে দেবে বয়সের ছাপ, জেনে নিন কীভাবে কাজ করে অ্যান্টি-এজিং ক্রিম
মরবিড স্থূলতা শুধু একটি শারীরিক সমস্যা নয়, এটি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ফ্যাটি লিভার ও উচ্চ রক্তচাপের মতো জটিল রোগের দরজা খুলে দেয়। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা, খাদ্যাভ্যাস ও মানসিক দৃঢ়তায় এটি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। ওই ৪৫ বছরের রোগীর মত, সকলেরই স্বাস্থ্য সচেতনতার এই নতুন ইনিংস আজ থেকেই শুরু করা উচিত।