Tirole Khyapakali Temple: A Centuries-Old Shrine Where Miracles Still Happen: বাংলার আনাচ-কানাচে আছে অজস্র দৈবস্থান। যেখানে প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে ছুটে যান অসংখ্য ভক্ত। তাঁদের অনেকেই এই সব মন্দির বা ধর্মীয় স্থান থেকে উপকৃত হয়েছেন। অনেকে তো আবার বংশ পরম্পরায় উপকৃত হয়েই চলেছেন। মনস্কামনা পূরণ হওয়ায় নিজেরা ছোট থেকে যান এই সব মন্দিরে। পরিবারের অতি ঘনিষ্ঠ লোকজনকেও নিয়ে যান। তবে, সবটাই গোপনে। বাইরে কাউকে কিছু বলেন না। এরকমই এক মন্দিরের কথা পড়ুন এই লেখায়।
এই মন্দির সম্পর্কে একটা কথা প্রচলিত আছে। তা হল- এখানে এলে নাকি সব জায়গা থেকে নিরাশ হওয়া মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীরাও সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন। এই মন্দিরে যেতে গেলে হাওড়া স্টেশন থেকে ধরতে হয় গোঘাট লোকাল। নামতে হবে আরামবাগে। হাওড়া থেকে গোঘাট লোকালে আরামবাগ যেতে লাগে ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট। মধ্যে পড়বে ২৩টি স্টেশন।
আরও পড়ুন- হাত নয়, মুখ দেখেই বলেন ভূত-বর্তমান, ভবিষ্যৎ! অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন বিশু বাবা আলোড়ন তুলেছেন মাতৃসাধক কমলাকান্তের গ্রামে
আরামবাগ স্টেশনে নামার পরে যেতে হবে স্টেশনের ১নং প্ল্যাটফর্মে। সেখান থেকে একটু হেঁটেই লেভেল ক্রসিং। স্টেশন থেকে টোটো ধরলে মন্দিরে যেতে নেবে ১০০ টাকা ভাড়া। আর, একটু হেঁটে লেভেল ক্রসিং মোড় থেকে গিয়ে টোটো ধরলে নেবে জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়া। সময় নেবে ২০ মিনিট। থামবে তিরোল কালীতলা মোড়ে। তার পাশের রাস্তা দিয়ে যেতে হবে মন্দিরে। তিরোল কালীতলা মোড়েই রয়েছে তিরোল বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে তারকেশ্বরের (Tarakeshwar) বাস ছাড়ে। তিরোল থেকে তারকেশ্বর যেতে লাগে ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট।
আরও পড়ুন- সেরে উঠছে দুরারোগ্য ব্যাধি, পূরণ হচ্ছে মনস্কামনা, বারুইপুরের হনুমান মন্দিরে ঢল নামছে ভক্তদের
এখানকার মন্দিরটি ৬০০ বছরেরও বেশি পুরোনো। নাম হল, তিরোল ক্ষ্যাপাকালী মন্দির। এই মন্দিরে ভক্তরা দূর-দূরান্ত থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীদের নিয়ে ছুটে আসেন। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই, বিদেশ থেকেও মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীদের নিয়ে চিকিৎসার জন্য এখানে ছুটে আসেন ভক্তরা। মন্দিরের কাছেই রয়েছে দশকর্মা ভাণ্ডার। সেখানেই পুজোর যাবতীয় সামগ্রী পাওয়া যায়। এখনও এই মন্দিরে ছাগবলি প্রথা চালু আছে।
কথিত আছে, এক সাধু (Hindu) এই দেবীর পুজো কাছেই এক জঙ্গলে করতেন। মৃত্যুপথযাত্রী সাধু স্বপ্নাদেশ পেয়ে তিরোলের তৎকালীন জমিদার চক্রবর্তীদের হাতে দেবীর আরাধনার ভার দিয়ে গিয়েছিলেন। তারপর থেকে গত ৬০০ বছর ধরে এই মন্দিরে দেবী ক্ষ্যাপাকালীর আরাধনা চলছে। মূল গর্ভগৃহের পিছনে রয়েছে মন্দিরের নিজস্ব পুকুর। সেই পুকুরের জলেই মন্দিরের যাবতীয় কাজকর্ম চলে। মন্দিরে আসা রোগীরা এই পুকুরের জলে স্নান করে পবিত্র হয়ে গর্ভগৃহে দেবীর কাছে যান।
এসেছিলেন সারদামণিও
কথিত আছে শ্রীরামকৃষ্ণের স্ত্রী সারদামণি তাঁর মানসিক ভারসাম্যহীন বউদিকে নিয়েও এসেছিলেন দেবী ক্ষ্যাপাকালীর মন্দিরে। তিনি দেবীর কৃপায় সম্পূর্ণ সুস্থও হয়ে গিয়েছিলেন। এরপর সারদামণি তাঁর মানসিক ভারসাম্যহীন ভাইঝিকে নিয়েও এখানে সুস্থ করার জন্য এসেছিলেন। এখানকার দেবী হলেন সিদ্ধেশ্বরী কালীমাতা। কিন্তু, মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীদের সুস্থ করে তোলেন জন্য ভক্তরা তাঁকে ডাকেন ক্ষ্যাপাকালী নামে। মন্দিরে জাগ্রত দেবীর দুই পাশে রয়েছেন ডাকিনী এবং যোগিনী। মানসিক ভারসাম্যহীনদের পাশাপাশি মৃগী রোগীরাও মাত্র একবছরের মধ্যে এই দেবীর কৃপায় সুস্থ হয়ে যান।
আরও পড়ুন- অলৌকিক রহস্যে ঘেরা, আজও অগণিত ভক্তের আকর্ষণের কেন্দ্রে গড় চণ্ডীধাম
এখানকার নিয়ম হল, কিছু খাওয়ার আগে রোগীকে দেবীর পুজোর বেলপাতা যা মন্দির থেকেই দেওয়া হয়, সেটা খেতে হয়। আর, এখান থেকে বালাও রোগীর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। দেবী পরিধান করেন লোহার বালা। তেমনই আলাদা অনেকগুলো বালা পুজো করে রোগীদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। রোগীরা সুস্থ হয়ে গেলে, নিজের হাতের সেই বালা খুলে মন্দিরের নির্দিষ্ট জায়গায় ঝুলিয়ে রাখেন। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটগল্প তিরোলের বালাতেও এই ক্ষ্যাপাকালী মন্দিরের কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন- যে মন্দির থেকে খালি হাতে ফেরেন না ভক্তরা, পূরণ হয় মনস্কামনা, সারে দুরারোগ্য রোগও
তারকেশ্বরের দশঘড়ায় বিশ্বাস পরিবারের দুর্গাপুজোয় দুর্গাপ্রতিমাকে পরানো মুকুট দীপাবলির সময় দেবী ক্ষ্যাপাকালীকে পরানো হয়। স্বপ্নাদেশ অনুসারে এখানে এমনটাই রীতি চলে আসছে। পাশাপাশি, দীপাবলির সময় দেবীর প্রিয় সানাই বাজানোর রীতিও রয়েছে এই মন্দিরে। এখানকার দেবীর বিগ্রহ মাটির তৈরি। যা স্বপ্নাদেশ অনুসারে ২০-২৫ বছর অন্তর বদলানো হয়। প্রতিদিন সকাল ১১টায় পুজো শুরু হয় মন্দিরে। সন্ধ্যাবেলায় হয় সন্ধ্যা আরতি। প্রতিমাসের অমাবস্যায় হয় দেবীর বিশেষ আরাধনা। এছাড়া এখানে দীপাবলির কালীপুজোতেও বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়।