/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/28/anandashankar-ray-2025-10-28-01-20-29.jpg)
Anandashankar Ray: অন্নদাশঙ্কর রায়।
Anandashankar Ray: বাংলা সাহিত্যের আকাশে যেসব নক্ষত্র চিরকাল দীপ্ত, তাদের অন্যতম অন্নদাশঙ্কর রায়। একাধারে শিক্ষাবিদ, সমাজসংস্কারক, প্রাবন্ধিক, কবি ও মানবতাবাদী এই মানুষটি তাঁর লেখার মাধ্যমে বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন— 'ভালোবাসা, সততা আর মানবিকতার মধ্যেই জাতির প্রকৃত শক্তি লুকিয়ে আছে।'
'খুকু ও খোকা'-র জন্ম
১৯৪৭ সালের এক সাধারণ দিনে, এই অসাধারণ কবিতার জন্ম হয়। ফেব্রুয়ারির এক সকালে ছোট্ট খুকু খেলতে খেলতে তেলের শিশি ভেঙে ফেলেছিল। মা রেগে যান, আর সেই রাগ থেকেই উঠে আসে বাবার সেই প্রশ্ন— 'তেলের শিশি ভাঙল বলে খুকুর পরে রাগ করো, তোমরা যে সব বুড়ো খোকা, ভারত ভেঙে ভাগ করো — তার বেলা?' এই কয়েকটি পংক্তিতে ধরা আছে সময়ের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি — দেশভাগের যন্ত্রণা এবং মানবিকতার হারানো সুর।
আরও পড়ুন- সূর্যদেব ও ‘ছটি মাইয়া’র পূজা, ভক্তদের ভিড়ে ভরল বেলুড় মঠ!
জন্ম ও শিক্ষা
অন্নদাশঙ্কর রায়ের জন্ম ১৫ মার্চ, ১৯০৪ সালে ওড়িশার ঢেঙ্কানলে। শৈশব থেকেই ছিলেন মেধাবী ও অনুসন্ধিৎসু। পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন, পরে ভারতের প্রথম আইসিএস পরীক্ষায় প্রথম হয়ে ইতিহাস গড়েন। সরকারি চাকরিতে যুক্ত থাকলেও তাঁর মনের গভীরে ছিল সাহিত্য, সমাজ ও মানুষকে নিয়ে ভাবনা।
আরও পড়ুন- কীভাবে বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠল চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো?
সাহিত্য ও সমাজচেতনা
তাঁর লেখা শুধু ছড়া বা প্রবন্ধ নয়, ছিল এক গভীর দার্শনিক মননের প্রকাশ। প্রধান গ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে— 'সত্যাসত্য', 'অজ্ঞাতবাস', 'কলঙ্কবতী', 'দুঃখমোচন', 'মর্ত্যের স্বর্গ', 'অসমাপিকা', 'যার যেথা দেশ', ইত্যাদি। দেশভাগ, সাম্প্রদায়িকতা ও বিভেদের বিরুদ্ধে লেখাই ছিল তাঁর প্রতিবাদের অস্ত্র। তিনি লিখেছিলেন— 'যুদ্ধ জাহাজ জঙ্গী মোটর, কামান বিমান অশ্ব উট, ভাগাভাগির ভাঙাভাঙির, চলছে যেন হরির লুট — তার বেলা?'
আরও পড়ুন- কাল শেষ দিন, কখন দেবেন ছটের অর্ঘ্য? দেখে নিন শুভ মুহূর্ত
প্রশাসন থেকে সাহিত্যজগতে
দেশভাগের পর তিনি প্রশাসনিক পদে থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান জানান। মতবিরোধের কারণে ১৯৫০ সালে তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। এরপর শুরু হয় তাঁর সাহিত্যজীবনের পূর্ণ বিকাশ।
আরও পড়ুন- ছটপুজোয় প্রিয়জনকে এই শুভেচ্ছাবার্তা আর গানের লিংক পাঠান, জীবনে আপনাকে ভুলবে না!
শান্তিনিকেতনের সাহিত্য মেলা
১৯৫৩ সালে অন্নদাশঙ্কর রায় শান্তিনিকেতনে আয়োজন করেন এক ঐতিহাসিক 'সাহিত্য মেলা'। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিমবঙ্গের কবি, সাহিত্যিকরা একসঙ্গে মিলিত হন— মানবতা ও ভাষার বন্ধনে।
পুরস্কার ও সম্মান
তিনি পেয়েছেন সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার (১৯৬২), আনন্দ পুরস্কার (দু'বার), রবীন্দ্র পুরস্কার, নজরুল পুরস্কার, দেশিকোত্তম সম্মান-সহ বহু স্বীকৃতি।
প্রয়াণ ও উত্তরাধিকার
২০০২ সালের ২৮ অক্টোবর, ৯৮ বছর বয়সে তিনি পরলোকে গমন করেন। তবু তাঁর লেখা আজও প্রাসঙ্গিক, কারণ তা সময়ের ওপরে গিয়ে মানবতার কথা বলে। অন্নদাশংকর রায় আমাদের শিখিয়েছেন, মনুষ্যত্বই শ্রেষ্ঠ পরিচয়।
/indian-express-bangla/media/agency_attachments/2024-07-23t122310686z-short.webp)
Follow Us