/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/15/kumortuli-kali-2025-10-15-02-30-17.jpg)
Bagbazar Siddheshwari Kali Temple: বাগবাজার সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির।
Bagbazar Siddheshwari Kali Temple: কলকাতার উত্তরাংশে বাগবাজারে লুকিয়ে আছে এক প্রাচীন দেবালয় — সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির। প্রায় তিন শতাব্দী আগে আগত এক তপস্বী, কালীবর ব্রহ্মচারী, দেবীর আদেশে এখানে এসেছিলেন। কথিত আছে, দেবী তাঁকে স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন — আদিগঙ্গার তীরে “পঞ্চ মুন্ডি আসনে” দেবীর তন্ত্র মতে প্রতিষ্ঠা করতে হবে এক দেবালয়।
কালীবর ব্রহ্মচারী প্রতিষ্ঠিত
তপস্বী কালীবর তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বাংলার দক্ষিণ প্রান্তে পৌঁছান। দেবীর নির্দেশ মেনে তিনি এগিয়ে চললেও, একসময়ে এসে স্থান নির্ধারণে তাঁর এক ভুল ঘটে। বাগবাজারকেই তিনি আদিগঙ্গার তীর ভেবে বসেন। এই ভুলই পরিণত হয় এক অলৌকিক ঘটনায়। সেই সময় বাগবাজার ছিল জঙ্গল, পুকুর আর নিম্নভূমিতে ভরা এক জনহীন এলাকা — কিন্তু তপস্যার জন্য উপযুক্ত।
আরও পড়ুন- ১৫০ বছরের পুজো, মনস্কামনা হয় পূরণ, জাগ্রত কেওড়াতলা শ্মশানকালীর এই কাহিনি জানেন?
এই নির্জন স্থানে কালীবর ব্রহ্মচারী বহু বছর ধরে কঠোর তপস্যা করেন। অবশেষে দেবী তাঁকে দিব্য দর্শন দেন এবং এখানেই তিনি সিদ্ধিলাভ করেন। তাই দেবীর নাম হয় সিদ্ধেশ্বরী কালী — যিনি সকল সাধনার সিদ্ধিদাত্রী। সেই সময় কলকাতার উত্তর প্রান্ত ছিল দস্যুদের আস্তানা। তবুও এই স্থানে প্রতিদিন পূজা হত, আর দেবীর আশীর্বাদে সাধু ও স্থানীয় মানুষজন নিরাপদ থাকতেন বলেই প্রচলিত বিশ্বাস।
আরও পড়ুন- দেবীর ভোগ ডিম! জানুন ৪৫০ বছরের প্রাচীন কালীমন্দিরের আশ্চর্য কাহিনি!
পরবর্তীতে জমিদার গোবিন্দরাম মিত্র প্রথমবার মন্দিরটির সংস্কার করেন। ১৭৩৭ সালের ভয়াবহ ঝড়েও এই মন্দির অলৌকিকভাবে অক্ষত ছিল। দেবী কালী-র বিগ্রহও অক্ষুণ্ণ ছিল। এই ঘটনাকে আজও বাগবাজারের লোকেরা দেবীর কৃপা বলে মানেন। এরপর চিতপুরের দুই ভাই শ্যাম মল্লিক ও বিনোদবিহারী মল্লিক এবং অভয়চরণ মিত্রের উদ্যোগে মন্দিরটি নতুন রূপে পুনর্নির্মাণ করা হয়।
আরও পড়ুন- রঘুর নামে দক্ষিণবঙ্গের নানা প্রান্তে কালীমন্দির! কোনটা সত্যি আর গল্প, বোঝা দায়
মন্দিরে নিত্যপূজা অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রতিদিন সকালে পাঁচটায় মঙ্গলআরতির মাধ্যমে পূজা শুরু হয়। মন্দির খোলা থাকে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২:৩০ এবং বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯:৩০ পর্যন্ত। বিকেলে দেবীকে আমিষ ভোগ নিবেদন করা হয়। এখানে তিনটি প্রধান উৎসব পালিত হয় — দীপান্বিতা অমাবস্যার কালীপূজা, রটন্তী কালীপূজা, ফলহারিণী কালীপূজা। তাছাড়া বুদ্ধপূর্ণিমার দিনে ফুলদোল উৎসবও অনন্য আড়ম্বরে পালিত হয়। দেবী ও ঘাট নানা রঙের ফুলে সাজানো হয়, যা দেখতে ভিড় করেন অসংখ্য ভক্ত।
আরও পড়ুন- কেন দেবীকে দক্ষিণা কালী বলা হয়? জানুন এর আসল রহস্য
আজও বাগবাজারের এই প্রাচীন মন্দির শুধু পূজার স্থান নয়, এটি এক ঐতিহ্য — যেখানে ধর্ম, ইতিহাস ও সংস্কৃতি মিশে গেছে। কলকাতার কোলাহলের মাঝে এই স্থান যেন শান্তির এক আশ্রয়, যেখানে দেবী কালী তাঁর ভক্তদের আশীর্বাদে রক্ষা করেন।