Dakshina Kali: দেবীকে কেন দক্ষিণা কালী বলা হয়? জানুন এর আসল রহস্য!

Dakshina Kali: দেবী কালীর সবচেয়ে জনপ্রিয় রূপ হল, 'দক্ষিণা কালী'। জানুন কেন দেবীকে দক্ষিণা বলা হয়, এর পেছনে কী ব্যাখ্যা রয়েছে, সেই ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নিন।

Dakshina Kali: দেবী কালীর সবচেয়ে জনপ্রিয় রূপ হল, 'দক্ষিণা কালী'। জানুন কেন দেবীকে দক্ষিণা বলা হয়, এর পেছনে কী ব্যাখ্যা রয়েছে, সেই ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নিন।

author-image
IE Bangla Lifestyle Desk
New Update
Dakshina Kali

Kali: দক্ষিণা কালী এবং মহাকালী।

Dakshina Kali Pujo: হিন্দু ধর্মে দেবী কালিকা হলেন শক্তির সর্বোচ্চ প্রকাশ — সময়, সৃষ্টি ও বিনাশের প্রতীক। তাঁর একাধিক রূপের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত ও পূজ্য রূপ হল দক্ষিণা কালী। কিন্তু কেন তাঁকে ‘দক্ষিণা কালী’ বলা হয়? এই নামের মধ্যে লুকিয়ে আছে গভীর অর্থ ও তাৎপর্য।

Advertisment

‘কালিকা’ নামের অর্থ

‘কালিকা’ শব্দটি সংস্কৃত মূল “কাল” ধাতু থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ সময় বা মহাকাল। ‘কা’ – ব্রহ্ম, ‘লা’ – বিশ্বাত্মা, ‘ই’ – সূক্ষ্মতর চেতনা, ‘কা’ – অনন্ত। অর্থাৎ দেবী হলেন ব্রহ্ম, অনন্ত, সূক্ষ্ম ও বিশ্বাত্মক — সময় ও শক্তির এক চূড়ান্ত রূপ।

আরও পড়ুন- দেবী জাগ্রত, আজও নিশুতি রাতে বন্ধ মন্দির থেকে ভেসে আসে চণ্ডীপাঠের শব্দ!

Advertisment

‘দক্ষিণা’ নামের উৎপত্তি
‘দক্ষিণা কালী’ নামের ব্যাখ্যা তিনভাবে করা হয় — পুরাণ, তন্ত্র ও দর্শনের দৃষ্টিকোণ থেকে।

আরও পড়ুন- কলকাতার সবচেয়ে সস্তা লাইটের বাজার, দীপাবলির আগেই জমজমাট!

পুরাণ অনুযায়ী: 

দক্ষিণ দিকের অধিপতি হলেন যমরাজ, অর্থাৎ মৃত্যুর দেবতা। দেবী কালীর নাম শুনে যমরাজও ভয় পান — কারণ কালী মৃত্যুরও অধিষ্ঠাত্রী। তাই দেবীকে বলা হয় ‘দক্ষিণা কালী’, অর্থাৎ দক্ষিণ দিক জয়ী কালী। এই প্রসঙ্গে রামপ্রসাদ সেনের শ্যামাসংগীতের  একটি বিখ্যাত লাইন রয়েছে, 'সে যে মুক্তকেশীর (মন রে আমার) শক্ত বেড়া, তার কাছেতে যম ঘেঁসে না।'

আরও পড়ুন- কলকাতার এই ঐতিহাসিক মন্দির, আজও হয় জীবন্ত দেবীর আরাধনা!

তান্ত্রিক মতে:

‘দক্ষিণা’ মানে পূর্ণতা বা সম্পূর্ণ দান। যেভাবে যজ্ঞের পরে দক্ষিণা না দিলে কর্ম অসম্পূর্ণ থাকে, তেমনি মা কালীই কর্মের পরিণতি — মুক্তি দান করেন। এজন্য তাঁকে ‘দক্ষিণা’ বলা হয়। রুদ্রযামল তন্ত্র মতে, ভগবতী ত্রিপুরসুন্দরীর রূপান্তরই দক্ষিণা কালী। দক্ষিণামূর্তি ভৈরব দ্বারা পূজিতা হওয়ায় তিনি ‘দক্ষিণা কালী’ নামে খ্যাত। এই রূপে দেবী ভক্তকে দ্রুত ফল ও মোক্ষ প্রদান করেন।

আরও পড়ুন- অজান্তেই 'অশুভ' দেবদেবীর মূর্তি রেখে বাড়াচ্ছেন বিপদ? সুখের বদলে বাড়বে অশান্তি!

শৈব দর্শন অনুযায়ী:

শিবকে বলা হয় ‘দক্ষিণা পুরুষ’, আর তাঁর শক্তি কালী হলেন ‘বামা’। যখন বামা শক্তি দক্ষিণ পুরুষকে জয় করেন, অর্থাৎ শক্তি চেতনাকে ধারণ করে, তখনই মহামুক্তি ঘটে। তাই দেবী ‘দক্ষিণা কালী’ নামে পরিচিত হন। 

দেবীর মূর্তি গাঢ় নীল বা শ্যামবর্ণ, মুখে রক্তের ছোঁয়া, গলায় মুণ্ডমালা। চারটি হাতের— একহাতে খড়্গ (শক্তি), অন্য হাতে সদ্যছিন্ন মুণ্ড (অহং-এর প্রতীক), তৃতীয় হাতে বরমুদ্রা (অনুগ্রহ), চতুর্থ হাতে অভয় মুদ্রা (রক্ষা)। তাঁর ডান পা শিবের বুকে, যা বোঝায় করুণা ও জ্ঞান। বাম পা শিবের বুকে থাকলে তা হয় শ্মশানকালী — ভয়ঙ্কর রূপ। তাই দক্ষিণা কালী গৃহস্থ উপাসনার জন্য শান্ত ও সৌম্য রূপ। 

ষোড়শ শতকে তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ স্বপ্নাদেশ পান দেবীর এক শান্ত, প্রসন্ন রূপ প্রতিষ্ঠার। তিনি ভোরবেলায় এক মহিলাকে দেখেন যিনি জিহ্বা বের করে ডান পা সামনে রেখে দাঁড়িয়ে। সেই নারীর রূপ অনুসারেই দক্ষিণা কালীর মূর্তি গড়ে ওঠে। এর আগে পর্যন্ত কালী যন্ত্রে পূজিতা হতেন, মূর্তিতে নয়। দক্ষিণা কালী মানুষের অহং ছিন্ন করে মুক্তি দান করেন। তাঁর গলায় মুণ্ডমালা জ্ঞানচক্রের প্রতীক, আর কোমরের হাতে তৈরি বস্ত্র কর্মফলের পরিত্যাগ বোঝায়। তাঁর জিহ্বা আসক্তির প্রতীক, দাঁত সত্যের প্রতীক — সত্য দ্বারা আসক্তি নিয়ন্ত্রণের বার্তা দেয় এই রূপ।

Kali pujo