Homemade curry leaves hair mask for black hair: সুন্দর, পরিষ্কার স্ক্যাল্পে করিপাতার পেস্ট লাগানোর দৃশ্য। (প্রতীকী ছবি)
Haircare Lifestyle: পাকা চুল আমাদের শরীরের প্রাকৃতিক বার্ধক্য প্রক্রিয়ার একটি স্বাভাবিক অংশ হলেও বর্তমানে কমবয়সীদের মধ্যেও এটি একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনিয়মিত জীবনযাপন, মানসিক চাপ, অপুষ্টি, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং অতিরিক্ত কেমিক্যালযুক্ত হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহারের কারণে অনেকেই অল্প বয়সেই চুল পাকা দেখতে পান। চুলের গোঁড়ার মেলানিন উৎপাদন কমে গেলে চুল তার স্বাভাবিক কালো রঙ হারিয়ে ধূসর বা সাদা হতে শুরু করে।
Advertisment
প্রাকৃতিকভাবে চুল কালো রাখার জনপ্রিয় উপাদান কারিপাতা
এই সমস্যার প্রাকৃতিক সমাধান হিসেবে করিপাতা বা কারিপাতা এক অসাধারণ ভেষজ উপাদান। কারিপাতায় রয়েছে ভিটামিন B, C, আয়রন, অ্যামিনো অ্যাসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট—যা চুলের রঙ ধরে রাখতে, চুলের গোঁড়া মজবুত করতে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। নিয়মিত কারিপাতা পেস্ট বা তেল ব্যবহার করলে পাকা চুলের গতি ধীর করা যায় এবং চুল হয় ঘন, মজবুত ও স্বাভাবিকভাবে কালো।
প্রথমে একটি প্যানে অর্ধেক কাপ নারকেল তেল নিন। তারপর এককাপ করি পাতা সেই নারকেল তেলে ফেলে ভালো করে ফুটিয়ে নিন। তেলের রং ঘন না হওয়া পর্যন্ত ফোটাতে থাকুন। তারপর ওভেন বন্ধ করে ওই ফোটানো তরলটা ঠান্ডা করুন। তেল ঠান্ডা হওয়ার পর ভালো করে ছেঁকে নিন। আর, সেটা একটি প্লাস্টিক বা কাচের শিশিতে ভরে রাখুন।
প্রথম এই তেল নিন। তারপর তাতে এক কাপের এক চতুর্থাংশ মেহেন্দি গুঁড়ো মেশান। এরপর এটা আপনার চুলে লাগান। ওই অবস্থায় মাথায় ২ ঘণ্টা জল দেবেন না। ২ ঘণ্টা পর মাথা ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
অ্যালার্জি পরীক্ষা করুন: করিপাতা ব্যবহারের আগে পেস্ট বা তেলটি হাতের কনুইতে অল্প করে লাগিয়ে ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করুন। যদি চুলকানি, র্যাশ বা জ্বালা হয়, তাহলে এটি মাথায় ব্যবহার করবেন না।
কেমিক্যালযুক্ত পণ্যের সঙ্গে মেশাবেন না: করিপাতা পেস্ট বা তেল ব্যবহারের সময় সস্তা বা রাসায়নিকযুক্ত শ্যাম্পু বা সিরাম ব্যবহার করলে এর কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।
প্রয়োগের ফ্রিকোয়েন্সি:
অতিরিক্ত ব্যবহার নয়: সপ্তাহে ২–৩ বার করিপাতা হেয়ার প্যাক বা তেল ব্যবহার করাই যথেষ্ট। অতিরিক্ত ব্যবহার করলে মাথার ত্বক শুষ্ক বা অতিরিক্ত তেলতেলে হয়ে যেতে পারে।
ফলাফল (কতদিনে কাজ করে):
গড়ে ৩–৪ সপ্তাহে ফল মিলতে শুরু করে।
চুল শক্ত ও ঘন হয়, ধূসরতা কমে।
কার্যকরী টিপস:
তাজা করিপাতা ব্যবহার করুন: সবসময় তাজা ও সবুজ করিপাতা সংগ্রহ করে ব্যবহার করুন, এতে পুষ্টিগুণ অক্ষত থাকবে।
নারকেল তেলের সঙ্গে ফুটিয়ে ব্যবহার করুন: করিপাতা ও নারকেল তেল একসঙ্গে ১০–১৫ মিনিট ফুটিয়ে ছেঁকে নিন। এই তেল মাথায় ম্যাসাজ করলে চুলের গোড়া হবে শক্ত ও কালো।
মেহেন্দি অথবা আমলকির সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করুন: পাকা চুল কমাতে করিপাতার পেস্টের সঙ্গে মেহেন্দি পাতার পেস্ট বা শুকনো আমলকি গুঁড়ো মিশিয়ে প্যাক তৈরি করা আরও বেশি কার্যকরী হতে পারে।
মাইল্ড হারবাল শ্যাম্পু ব্যবহার করুন: করিপাতা হেয়ার প্যাক বা তেল ব্যবহারের পর হারবাল বা সালফেট-মুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করা ভালো।
পর্যাপ্ত ঘুম এবং জল পান করুন: বাহ্যিক যত্নের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্যও ঠিক রাখা জরুরি। প্রতিদিন ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম এবং পর্যাপ্ত জল খাওয়া পাকা চুল প্রতিরোধে সহায়ক।
এই সতর্কতা ও টিপস মেনে চললে করিপাতার পূর্ণ উপকারিতা আপনি নিশ্চিন্তে পেতে পারেন।
উপকার কী হবে?
এই যেটা তৈরি করলেন, সেটা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক বা ভেষজ। তাই, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে চিন্তা করার কোনও দরকার নেই। রাসায়নিক মেশানো বাজারি প্যাকেটে ভরা রঙের নিয়মিত ব্যবহার আপনার চুলের আসল সৌন্দর্য নষ্ট করে দিতে পারে। কিন্তু, কারিপাতা দিয়ে যেটা ঘরে বানালেন, সেটা প্রাকৃতিক। তাই, এর ব্যবহারে চুলের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার কোনও ভয়ও নেই। আজই এই কারিপাতা প্যাক ব্যবহার করে দেখুন! আপনার ফলাফল আমাদের সঙ্গে শেয়ার করুন।