Drinking Sattu Sharbat on an Empty Stomach: অনেকেই সকালে উঠে চা, কফি বা শুধু জল খান। কিন্তু সকালে (morning) খালি পেটে যদি ছাতুর শরবত পান (Drinks) করেন, তাহলে শরীর পাবে এক প্রাকৃতিক সুপারফুডের গুণ। ছাতু অর্থাৎ ভাজা ছোলার গুঁড়োতে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, ফাইবার, আয়রন এবং ম্যাগনেশিয়াম। এতদিন আমরা এমনটাই জেনে এসেছি। কিন্তু, সেটাই কী সব? তাহলে, সবটাই ভালো করে দেখে নেওয়া যাক।
ছাতুর শরবতের স্বাস্থ্য উপকারিতা
১. শক্তি বাড়ায়
সকালে ছাতু খেলে দিন শুরু হয় একপ্রকার প্রাকৃতিক এনার্জি বুস্ট দিয়ে। এতে থাকা জটিল কার্বোহাইড্রেট ধীরে ধীরে শক্তি ছড়ায়, ফলে ক্লান্তি কম হয়।
২. হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
ছাতুর ফাইবার পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং গ্যাস-অম্বলের সমস্যা দূর করে।
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে
ছাতুর শরবত খেলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে, ফলে অহেতুক খিদে কমে যায়। এটি ওজন কমানোর একটি কার্যকর ঘরোয়া উপায়।
৪. ব্লাড সুগার ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
ছাতুতে থাকা সলিউবল ফাইবার শরীরে শর্করা ও কোলেস্টেরলের নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, যা ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৫. গরমে শরীর ঠান্ডা রাখে
ছাতু একটি প্রাকৃতিক কুল্যান্ট হিসেবে কাজ করে। এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং হিটস্ট্রোকের সম্ভাবনা কমায়।
ছাতুর শরবত তৈরির পদ্ধতি:
উপকরণ:
-
২ টেবিল চামচ ছাতু
-
১ গ্লাস ঠান্ডা জল
-
১ চিমটি বিট লবণ
-
১ চা চামচ লেবুর রস
-
স্বাদমতো মধু বা চিনি
প্রণালী: সব উপকরণ একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে নিন। চাইলে বরফ যোগ করুন। সকালে খালি পেটে পান করুন।
ছাতুর ক্ষতিকারক দিক বা সাইড এফেক্ট:
১. গ্যাস ও অম্বলের সমস্যা
– ছাতুতে ফাইবার ও প্রোটিনের পরিমাণ বেশি। অতিরিক্ত খেলে অনেকের হজমে সমস্যা হতে পারে।
– পেট ফাঁপা, গ্যাস, বমি বমি ভাব বা অম্বলের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২. কিডনির ওপর চাপ
– ছাতুতে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন থাকে। যাঁদের কিডনির সমস্যা রয়েছে বা কিডনি দুর্বল, তাঁদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত প্রোটিন খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।
৩. হজমের সমস্যা
– হঠাৎ করে বেশি ছাতু খেলে বা সঠিকভাবে না খেলে হজমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
– বিশেষ করে যাঁরা ফাইবারে অভ্যস্ত নন, তাঁদের ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়েরিয়াও হতে পারে।
৪. ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা
– ছাতু যদিও ওজন কমাতে সাহায্য করে, তবে গুড় বা চিনি মিশিয়ে অতিরিক্ত খেলে তা ক্যালোরি বাড়িয়ে দিতে পারে।
– ফলে ওজন বেড়ে যেতে পারে, বিশেষ করে যদি শরীরচর্চা না করা হয়।
৫. অ্যালার্জির ঝুঁকি
– কারও কারও শরীরে ছোলা বা ছাতুতে অ্যালার্জি হয়।
– এর ফলে ত্বকে ফুসকুড়ি, চুলকানি বা পেট খারাপের মত সমস্যা হতে পারে।
আরও পড়ুন- রান্নাঘরে রাখুন ময়দার এই ৫ বিকল্প, শুধু নিজেই না, পরিবারের লোকজনের জন্যও হাসপাতালে কম ছুটতে হবে
৬. ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে (বিশেষ ক্ষেত্রে)
– যদি ছাতুর সঙ্গে চিনি বা গুড় বেশি পরিমাণে মেশানো হয়, তবে তা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
– তাই ডায়াবেটিক রোগীদের ছাতু সাবধানে খেতে হবে।
আরও পড়ুন- গরমে রোজ টকদই খাচ্ছেন, জানেন শরীরে কী হতে পারে?
কীভাবে নিরাপদে খাওয়া উচিত?
-
দিনে ১ বার বা সর্বোচ্চ ২ বার খান।
-
প্রথমবার খেলে অল্প পরিমাণে শুরু করুন (১-২ চামচ ছাতু)।
-
হালকা গরম জল বা দুধে মিশিয়ে খান, খুব ঠান্ডা পানীয় এড়ানো ভালো।
-
মধু বা গুড় মেশাতে পারেন, তবে পরিমাণ কম রাখুন।
আরও পড়ুন- গরমে সবাই ক্লান্তিতে ধুঁকছেন, পুষ্টির চাহিদা মেটাতে এই ১০ খাবার খাওয়ার পরামর্শ ডায়েটিশিয়ানদের
কাদের সাবধানে ছাতু খাওয়া উচিত?
-
কিডনি রোগী
-
উচ্চ প্রোটিন যাঁদের শরীরে সমস্যা তৈরি করতে পারে
-
যাঁদের অ্যালার্জির প্রবণতা আছে
-
গ্যাস বা অম্বলের রোগী
-
ডায়াবেটিক রোগীদের গুড়/চিনি ছাড়া ছাতু খাওয়া উচিত
আরও পড়ুন- রোদ থেকে ফিরে এই এক গ্লাস পানীয়! শীতল হয়ে যাবে শরীর
খালি পেটে রোজ একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলতে চাইলে, ছাতুর শরবত হতে পারে আপনার আদর্শ সঙ্গী। এটি শুধু শরীর ঠান্ডা রাখে না, বরং আপনার শক্তি, হজম ও ওজন, সবকিছুরই ভারসাম্য রক্ষা করে। ঠিকমতো খেলে ঘরোয়া, সহজ ও কার্যকর খাবার হিসেবে ছাতু হতে পারে গরমকালে আপনার হেলদি হিরো!