/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/05/hemantkumar-basu-subhashchandra-basu-2025-10-05-11-24-15.jpg)
Hemantkumar Basu-Subhashchandra Basu: হেমন্তকুমার বসু ও সুভাষচন্দ্র বসু।
Freedom Fighter Hemantakumar Basu: হেমন্তকুমার বসু নামটি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায়। তিনি শুধু ফরোয়ার্ড ব্লকের নেতাই ছিলেন না, ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসুর ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা, সমাজসেবক এবং সত্যিকারের দেশপ্রেমিক। ১৮৯৫ সালের ৫ অক্টোবর উত্তর কলকাতায় জন্ম নেওয়া এই বিপ্লবী ১৯৭১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি কলকাতার রাজপথে এক নৃশংস হত্যাকাণ্ডে প্রাণ হারান।
শৈশব থেকেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে
১৯০৭ সালে জনসেবামূলক কাজে অংশ নেন এবং ১৯০৮ সালে অনুশীলন সমিতি বেআইনি ঘোষিত হলে গোপনে বিপ্লবী দলে কাজ শুরু করেন। ১৯১৩ সালে ছাত্রাবস্থায় বর্ধমানে বন্যাদুর্গতদের ত্রাণকার্যে অংশ নেন এবং ১৯১৪ সালে রাসবিহারী বসু ও বাঘা যতীনের নেতৃত্বে ব্রিটিশবিরোধী অভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা নেন।
আরও পড়ুন- কাজে লাগান জ্যোতিষীর এই টিপস, দিনকে করুন সফল!
এই সময়েই তাঁর সঙ্গে সুভাষচন্দ্র বসুর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ১৯২১ সালে কলেজ ত্যাগ করে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন এবং গ্রেফতার হন। পরে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের স্বরাজ পার্টিতে যুক্ত হয়ে কলকাতা কর্পোরেশনের নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন।
আরও পড়ুন- কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো কেন রাতেই করা হয়? কারণ জানলে আশ্চর্য হবেন!
১৯৩০ সালের মহিষবাথান লবণ আন্দোলন ও ১৯৩১ সালের আইন অমান্য আন্দোলনে অংশ নিয়ে একাধিকবার গ্রেফতার হন। মুক্তির পরও তিনি পুনরায় আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯৩৪ সালে স্বাধীনতা দিবস পালনের কারণে তাঁকে ফের কারাগারে পাঠানো হয়। তাঁর দৃঢ় মনোবল ও নেতৃত্বে বহু তরুণ স্বাধীনতা সংগ্রামী অনুপ্রাণিত হন।
আরও পড়ুন- কবে কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা, ৬ না ৭ অক্টোবর, কতক্ষণ থাকবে পূর্ণিমা?
১৯৩৮ সালের হরিপুরা কংগ্রেস অধিবেশনে সুভাষচন্দ্র বসুর পাশে দাঁড়িয়ে তিনি কংগ্রেস নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেন। ১৯৩৯ সালে ফরোয়ার্ড ব্লকের বঙ্গীয় প্রাদেশিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি বামপন্থী দলগুলিকে একত্রিত করার চেষ্টা করেন এবং একাধিকবার গ্রেফতার হন।
আরও পড়ুন- দুর্গাপূজার পর কতদিন শুভ বিজয়া বলা যায়? জেনে নিন সঠিকটা কী?
স্বাধীনতার পর ১৯৪৬ সালে তিনি রাজ্য বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৮ সালে কংগ্রেস ত্যাগ করেও আবার নির্বাচনে জয়ী হন। পরবর্তী নির্বাচনে প্রতিবারই ফরোয়ার্ড ব্লক প্রার্থী হিসেবে জয় লাভ করেন। ১৯৬৭ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের পূর্তমন্ত্রী পদে কাজ করেন। তিনি গোয়া মুক্তি আন্দোলন, ট্রাম শ্রমিক আন্দোলন এবং খাদ্য আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে বহুবার কারাবরণ করেছেন। তাঁর জীবন ছিল একটানা সংগ্রামের প্রতীক।
১৯৭১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি কলকাতার রাজপথে প্রকাশ্য দিবালোকে একদল যুবক হেমন্তকুমার বসুকে হত্যা করে। এই নৃশংস ঘটনা গোটা রাজ্যে শোকের ছায়া ফেলে দেয়। দেশপ্রেমিক, মানবিক, আপসহীন নেতা হিসেবে তাঁর মৃত্যু আজও ইতিহাসে এক বেদনাদায়ক অধ্যায়।
আজও পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিসরে হেমন্তকুমার বসু এক অনুপ্রেরণার নাম। তাঁর নিষ্ঠা, সাহস ও আদর্শ স্বাধীন ভারতের রাজনৈতিক চরিত্রে অমোচনীয় দাগ রেখে গেছে। তাঁর নামে স্মৃতিস্তম্ভ, রাস্তা ও বিদ্যালয় আজও স্মরণ করিয়ে দেয় — এক সময় এক নেতা ছিলেন, যিনি দেশ ও মানুষের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। কারণ হেমন্তকুমার বসু (Hemantakumar Basu) কেবল একটি নাম নয়, এক ইতিহাস। স্বাধীনতার জন্য তাঁর অবদান, নেতৃত্ব ও ত্যাগ আজও প্রাসঙ্গিক। তিনি ছিলেন এক 'অজাতশত্রু' রাজনীতিক — যিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দেশের মানুষের পাশে ছিলেন।