/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/19/kali-puja-bhog-in-bengal-2025-2025-10-19-21-22-00.jpg)
Kali Puja Bhog in Bengal 2025: কালীপুজোয় কোন কালী মন্দিরে দেওয়া হয় কেমন ভোগ?
Kali Puja 2025: বাংলার কালীপুজো মানেই অমাবস্যার রাতে দেবী কালী আরাধনা, ধূপ, দীপ, মন্ত্রোচ্চারণ ও বিশেষ ভোগ নিবেদন। শাক্তধর্মে বিশ্বাস, দেবী কালী ভোগের মাধ্যমে ভক্তের হৃদয়ে আসীন হন। ভোগ শুধু খাদ্য নয়—এ এক আধ্যাত্মিক সমর্পণের প্রতীক। কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন কালী মন্দিরে কালীপুজোর রাতে কী ভোগ নিবেদন করা হয়, তার ঝলক দেখে নেওয়া যাক।
১. কালীঘাট কালী মন্দির
কলকাতার প্রাচীনতম কালীতীর্থ কালীঘাটে কালীপুজোর রাতে বিশেষ নিশিপুজো হয়। সকালে নিরামিষ ভোগে থাকে সাদাভাত, ঘি, ডাল, পাঁচরকম ভাজা ও শুক্তো। রাতে দেবীকে নিবেদন করা হয় ঘিয়ের পোলাও, ডালনা, মাছের কালিয়া, পাঁঠার মাংস, চালের পায়েস ও নানা মিষ্টি। ভোগের প্রতিটি উপাদান পেঁয়াজ-রসুনবিহীন হয়। রাতে দেবী লক্ষ্মীর উদ্দেশে নিরামিষ ভোগে নিবেদন করা হয়—লুচি, বেগুনভাজা, দুধ ও সন্দেশ।
আরও পড়ুন- জাগ্রত ঘাঘরবুড়ি দেবীর আশীর্বাদে কাটে বিপদ, পূর্ণ হয় মনস্কামনা!
২. দক্ষিণেশ্বর ভবতারিণী কালী মন্দির
রানি রাসমণি প্রতিষ্ঠিত এই তীর্থে শ্রীরামকৃষ্ণের দেখানো পথে কালীপুজো হয়। দেবী ভবতারিণীর ভোগ খুবই সাধারণ—সাদাভাত, ঘি, পাঁচরকম ভাজা, শুক্তো, তরকারি, পাঁচরকম মাছ (কই, রুই, ভেটকি, পার্শে, গলদা), চাটনি, পায়েস ও মিষ্টি। বলি-প্রথা নেই, তাই মদ বা আমিষ নয়, বরং ডাবের জলই দেবীকে নিবেদন করা হয়।
আরও পড়ুন- কালীপুজোর আনন্দে ভাসছেন আপনিও, কিন্তু জানেন কি দেবী কালীর কত রূপ?
৩. তারাপীঠ কালী মন্দির
বীরভূমের তারাপীঠে সারাবছর মা তারা রূপে পুজিতা হলেও কালীপুজোর রাতে মা কালী রূপেই দেবীর আরাধনা করা হয়। নিশিপুজোর আগে দেবীকে স্নান করিয়ে বেনারসী ও সোনার গয়নায় সাজানো হয়। বিশেষ ভোগে থাকে খিচুড়ি, পোলাও, পাঁচ রকম ভাজা, তিন রকম তরকারি, বলির মাংস, পোড়া শোল মাছ, চাটনি, পায়েস ও মিষ্টি। সন্ধ্যার আরতিতে লুচি ও মিষ্টি নিবেদন করা হয়।
আরও পড়ুন- দেবী যেন জ্যান্ত! প্রতিমার পায়ে কাঁটা ফুটিয়ে রক্ত বের করে এনেছিলেন এই সাধক
৪. আদ্যাপীঠ কালী মন্দির
দক্ষিণেশ্বর সংলগ্ন আদ্যাপীঠে মা আদ্যাশক্তির পুজো হয়। এখানে কালীপুজোর রাতে দেবীর উদ্দেশে ভোগে দেওয়া হয় খিচুড়ি, ঘি-পোলাও, লাবড়া, ডালনা, চাটনি, পায়েস ও নানা ফলমূল। শাক্তমতে বলি-প্রথা এখানে নেই, বরং ভক্তদের মধ্যে নিরামিষ প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
আরও পড়ুন- কালী যেখানে ধন্বন্তরী! 'রোগহারিণী কালী'র কাহিনি জানেন?
৫. ঠনঠনিয়া সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির
প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো এই মন্দিরে উদয়নারায়ণ ব্রহ্মচারী পঞ্চমুণ্ডির আসনে পুজো শুরু করেন। কালীপুজোর রাতে ভোগে থাকে লুচি, পটলভাজা, ধোঁকা, আলুর দম, মিষ্টি ও পায়েস। এখানে ভোগের রীতি এখনও তন্ত্রমতে চলে।
৬. ফিরিঙ্গি কালী মন্দির
ঊনবিংশ শতাব্দীর কবিয়াল অ্যান্টনির সঙ্গে যুক্ত এই মন্দিরে নিরামিষ ভোগে থাকে খিচুড়ি, পোলাও, পাঁচ রকম তরকারি, আমসত্ত্ব, খেজুর, চাটনি ও মিষ্টি। বিশেষ আকর্ষণ—চুনো মাছের টক—যা দেবীকে নিবেদন করা হয় বলি প্রথার প্রতীক হিসেবে।
৭. টালিগঞ্জের করুণাময়ী কালী মন্দির
সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের প্রতিষ্ঠিত এই কালীমন্দিরে দেবীকে কুমারী রূপে পুজো করা হয়। ভোগে থাকে লুচি, ছোলার ডাল, ফুলকপির তরকারি, লাল শাকের ভাজা, খিচুড়ি, সাত রকম মাছের পদ (গলদা, ইলিশ, ভেটকি, কাতলা, পার্শে, ট্যাংরা, পাবদা), চাটনি, পায়েস ও পান-সুপারি।
৮. বাগবাজার সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির
তন্ত্রসাধক কালীবর ব্রহ্মচারী প্রতিষ্ঠিত এই মন্দিরে আজও শোভাবাজার রাজবাড়ি থেকে সবজি ও সামগ্রী আসে। ভোগে থাকে খিচুড়ি, সাদা ভাত, পাঁচরকম ভাজা, ডাল, ডালনা, মাছের ঝোল, চাটনি, পায়েস ও মিষ্টি। সিদ্ধেশ্বরী তন্ত্রমতে এখানে পুজো হয়।
৯. কালীকৃষ্ণ টেগোর স্ট্রিটের পুঁটে কালী
জনশ্রুতি, একবার হোমের সময় পুঁটিমাছ হোমকুণ্ডে পড়ায় দেবীকে 'পুঁটে কালী' বলা হয়। ভোগে দুটি ভাগ থাকে—নিরামিষ ও আমিষ। নিরামিষ ভোগে কচুরি, খিচুড়ি, পোলাও, তরকারি ও পায়েস; আমিষ ভোগে থাকে পুঁটি, রুই, ইলিশ, বোয়াল ও ভেটকি মাছের পদ।
১০. শোভাবাজার রাজবাড়ির কালীপুজো
নবকৃষ্ণ দেবের আদেশে শুরু হওয়া এই রাজবাড়ির কালীপুজো এখনও রাজকীয় ঐতিহ্যে পালিত হয়। ভোগে থাকে ঘিয়ের পোলাও, পাঁচ রকম ভাজা, ফুলকপি, আলুর দম, মাছের কালিয়া, পায়েস ও নানা রকম মিষ্টি। রাতে রাজবাড়ির উঠোন জুড়ে হয় 'অন্নভোগ বিতরণ'।
কালীপুজোর ভোগের সাংস্কৃতিক অর্থ
এই ভোগ শুধু দেবীর খাবার নয়। এ এক আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য। প্রতিটি কালী মন্দিরের ভোগে তাই ধরা থাকে স্থানীয় রন্ধনশৈলী, আচার ও ভক্তির প্রকাশ। নিরামিষ থেকে আমিষ—সব ভোগই শেষ পর্যন্ত মাতৃরূপী শক্তির প্রতি সমর্পণ করেই তৈরি হয়।