Khudiram Bose: ওপরের যে ছবিটি দেখছেন, তা তোলা ১৯০৮ সালের এপ্রিল মাসে। ব্রিটিশ বিচারক কিংসফোর্ড সেই সময় একের পর এক বিপ্লবীকে কড়া শাস্তি দিচ্ছিলেন। তাঁকে মারার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলেন ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী। ৩০ এপ্রিল কিংসফোর্ডের গাড়িতে বোমা মারতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ক্ষুদিরাম ধরা পড়েন। সেই সময় ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড অন্য একটা গাড়িতে বসেছিলেন। আর, ক্ষুদিরাম যে গাড়িতে বোমা মেরেছিলেন, সেই গাড়িতে ছিলেন দুই ব্রিটিশ মহিলা। বোমার আঘাতে তাঁদের মৃত্যু হয়েছিল। তাঁরা হলেন মিসেস কেনেডি ও তাঁর কন্যা। ছবির পিছনে দেখা যাচ্ছে আহত অবস্থায় বসে আছেন যে ফিটন গাড়িতে ক্ষুদিরাম বসু বোমা মেরেছিলেন, সেই গাড়ির সহিস। আর পুলিশের মধ্যে ধুতি পরা যে ছেলেটি দাঁড়িয়ে আছে, তিনিই হলেন ক্ষুদিরাম বসু।
ক্ষুদিরাম বসু ছিলেন কেশপুরের ছেলে
ক্ষুদিরাম বসু ১৮৮৯ সালের ৩ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির মেদিনীপুর শহরের কাছাকাছি কেশপুর থানার মৌবনী (হাবিবপুর) গ্রামে জন্মেছিলেন। তাঁর বাবা ত্রৈলোক্যনাথ বসু ছিলেন নাড়াজোলের তহসিলদার। মায়ের নাম ছিল লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী। ক্ষুদিরাম ছিলেন সবার ছোট। তাঁর তিন দিদি ছিল। লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবীর দুই ছেলে অকালে মারা গিয়েছিলেন। ক্ষুদিরামের মৃত্যুর আশঙ্কায় তিনি কুসংস্কার থেকে তাঁর ছেলেকে নিজের বড় মেয়ের কাছে তিন মুঠো খুদের বিনিময়ে বিক্রি করেছিলেন। খুদের বিনিময়ে বিক্রি করেছিলেন বলেই শিশুটির নাম রাখা হয়েছিল ক্ষুদিরাম। তাঁর যখন পাঁচ বছর বয়স সেই সময় তাঁর মা মারা যান। এর একবছর পর তাঁর বাবাও মারা যান।
আরও পড়ুন- ১৫ না ১৬ আগস্ট, এবার কবে পড়েছে জন্মাষ্টমী? জেনে নিন পূজার সঠিক সময়সূচি
এবং
আরও পড়ুন- পৃথিবীর এই দেশে একটিও সাপ নেই! নাম শুনলে চমকে যাবেন
ক্ষুদিরামের ফাঁসি হয়েছিল ১৯০৮ সালের ১১ আগষ্ট। সেসময় ঘড়িতে ছিল ভোর ৪টা। ক্ষুদিরামের আইনজীবী ছিলেন উপেন্দ্রনাথ সেন। তিনি পরে জানান, ফাঁসির মঞ্চে ক্ষুদিরাম নির্ভীকভাবে উঠে গিয়েছিলেন। তাঁর মধ্যে কোনও ভয় বা অনুশোচনা ছিল না। সেসব শুনে বাঁকুড়ার লোককবি পীতাম্বর দাস গান লিখেছিলেন, 'একবার বিদায় দে-মা ঘুরে আসি।'
আরও পড়ুন- বসার ভঙ্গির ভুলেই কি বাড়ছে ব্যথা? ভুল করেও এভাবে বসে থাকবেন না!
আরও পড়ুন- বর্ষাকালে ঘরে লাগান এই ৫ গাছ, মশা ঝটপটিয়ে উড়ে পালাবে
ক্ষুদিরামের যখন ফাঁসি হয়েছিল, সেই সময় তাঁর বয়স ছিল ১৮ বছর ৭ মাস ১১ দিন। জেলার তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, মৃত্যুর আগে শেষ ইচ্ছা কী? ক্ষুদিরাম বসু জানিয়েছিলেন, তিনি ভালো বোমা বানাতে পারেন। মৃত্যুর আগে সেটাই ভারতবাসীকে শিখিয়ে যেতে চান। শুধু তাই নয়, তাঁর মৃত্যুদণ্ডের ঘোষণা শুনে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে নাকি হেসে উঠেছিলেন ক্ষুদিরাম। যা দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন বিচারক। তিনি প্রশ্ন করেছিলেন ক্ষুদিরামের মৃত্যুদণ্ড শুনে কেন ভয় করছে না? উত্তর ক্ষুদিরাম বলেছিলেন যে তিনি গীতাপাঠ করেছেন। তাই তাঁর মৃত্যুভয় নেই। এমনটাই ক্ষুদিরামের আত্মীয়-প্রতিবেশী এবং বন্ধুদের জানিয়েছিলেন তাঁর আইনজীবী।