Kiriteshwari Shaktipeeth Murshidabad: দেবী সতীর মুকুট পড়েছিল, পবিত্র সতীপীঠের অজানা ইতিহাস!

Kiriteshwari Shaktipeeth Murshidabad: কিরীটিশ্বরী সতীপীঠ মুর্শিদাবাদের অন্যতম প্রাচীন শক্তিপীঠ। এখানে দেবী সতীর কিরীট পতিত হয়েছিল বলে বিশ্বাস। জানুন, রানি ভবানীর স্থাপত্য সম্পর্কে।

Kiriteshwari Shaktipeeth Murshidabad: কিরীটিশ্বরী সতীপীঠ মুর্শিদাবাদের অন্যতম প্রাচীন শক্তিপীঠ। এখানে দেবী সতীর কিরীট পতিত হয়েছিল বলে বিশ্বাস। জানুন, রানি ভবানীর স্থাপত্য সম্পর্কে।

author-image
IE Bangla Lifestyle Desk
New Update
Kiriteshwari Shaktipeeth: কিরীটিশ্বরী সতীপীঠ।

Kiriteshwari Shaktipeeth: কিরীটিশ্বরী সতীপীঠ।

Kiriteshwari Shaktipeeth Murshidabad: বাংলার মাটিতে ছড়িয়ে আছে একাধিক সতীপীঠ। সেইসব পবিত্র স্থানের মধ্যেই অন্যতম একটি হল কিরীটিশ্বরী সতীপীঠ (Kiriteshwari Shaktipeeth)। মুর্শিদাবাদ জেলার আজিমগঞ্জের কাছে অবস্থিত এই শক্তিক্ষেত্র কেবল ধর্মীয় নয়, ইতিহাস, স্থাপত্য, লোকবিশ্বাস—সব দিক থেকেই অনন্য। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, এখানে দেবী সতীর কিরীট বা মুকুট পতিত হয়েছিল। সেই কারণেই এর নাম, 'কিরীটিশ্বরী' বা 'মুকুটেশ্বরী'।

Advertisment

সতীপীঠের পৌরাণিক কাহিনি

পুরাণ মতে, সতী স্বয়ং শিবের পত্নী। পিতৃগৃহে দক্ষযজ্ঞে নিজের অপমান সহ্য করতে না পেরে সতী আত্মাহুতি দেন। ভগবান শিব শোকে পাগল হয়ে সতীর দেহ কাঁধে তুলে তাণ্ডব শুরু করেন। দেবতাদের অনুরোধে বিষ্ণু মহাসুদর্শন চক্র নিক্ষেপ করে সতীর দেহকে বিভক্ত করেন। দেহের বিভিন্ন অঙ্গ ও অলঙ্কার পৃথিবীর নানা স্থানে পতিত হয়। যেখানে সতীর মুকুট পতিত হয়েছিল, সেখানেই সৃষ্টি হয় কিরীটিশ্বরী সতীপীঠ।

আরও পড়ুন- কবে জগদ্ধাত্রী পুজো? কীভাবে শুরু হল এই পুজো?

দেবী ও ভৈরব

এখানে দেবীকে 'কিরীটেশ্বরী' বা 'বিমলা' রূপে পূজা করা হয়। দেবীর ভৈরব রূপ হলেন, 'সম্বর্ত'। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, একসময় এই ভৈরবমূর্তি চুরি হয়ে যায়, বর্তমানে সেটি মুর্শিদাবাদ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে। পীঠ নির্ণয় তন্ত্রে এই স্থান সম্পর্কে বলা হয়েছে— 'ভুবনেশী সিদ্ধিরূপা কিরীট-সহ কিরীটতঃ, দেবতা মিলা নাম্নি সংবর্ত ভৈরবস্তুথা।' 

Advertisment

আরও পড়ুন- ছট পুজোয় দেবতাকে কী ভোগ দেওয়া হয়, কীভাবে তা তৈরি হয়?

মন্দিরের ইতিহাস ও স্থাপত্য

কিরীটিশ্বরী সতীপীঠের বর্তমান মন্দিরটি প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো। ইতিহাস বলছে, প্রাচীন মন্দিরটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে নাটোরের রানী ভবানী আনুমানিক ১১০৪ বঙ্গাব্দে নতুন মন্দির নির্মাণ করান। পরে যোগেন্দ্রনারায়ণ রায় আনুমানিক ১৩৩৭ বঙ্গাব্দে মন্দিরের সংস্কার করেন। মন্দিরের স্থাপত্যে হিন্দু, বৌদ্ধ ও ইসলামিক শিল্পরীতির অসাধারণ সংমিশ্রণ দেখা যায়। বর্তমানে এই অঞ্চলে তিনটি মন্দির, 'মায়ের মন্দির' বলে পরিচিত। সেটা হল- প্রাচীন মূল মন্দির, পুরোনো ধ্বংসাবশেষের ওপর নির্মিত নতুন মন্দির, গ্রামে অবস্থিত 'গুপ্ত মন্দির'। প্রথম দুটি মন্দির একই মাঠে অবস্থিত এবং একটি উন্নয়ন কমিটির অধীনে পরিচালিত। 

আরও পড়ুন- ছট পুজো কী, কেন আর কীভাবে পালিত হয় এই উৎসব?

দেবীর রূপ ও পূজা-পদ্ধতি

পুরোনো মন্দিরে একটি উঁচু পাথরের বেদীর উপর কালো শিলারূপে দেবীকে পূজা করা হয়। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, এই বেদীই দেবীর 'করোটি রূপ'। বেদীর পিছনে বৌদ্ধধর্মীয় শ্রীযন্ত্র খোদাই করা আছে। পৌষ মাসে এখানে একটি বিশেষ বুদ্ধমুখী মূর্তি রূপে দেবীর পূজা হয়, যা বছরের অন্য সময় দর্শন করা যায় না। নতুন মন্দিরে একটি মুকুট-আকৃতির শিলাখণ্ডের পূজা হয়। ভোরবেলা শিলারূপে দেবীকে স্নান করানো হয়—এই সময়ই দেবীর পূর্ণ রূপ দর্শন করার সুযোগ মেলে। সবচেয়ে রহস্যময় অংশ হল গুপ্ত মন্দির। কথিত আছে, দেবীর মূল 'কিরীট' এখানেই সুরক্ষিত রাখা আছে। প্রতিবছর দুর্গাঅষ্টমীতে পুরোহিত মশাই চোখে কাপড় বেঁধে দেবীর আবরণ পরিবর্তন করেন। স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন, কেউ যদি সরাসরি দেবীর কিরীট দর্শন করেন, তিনি দৃষ্টি হারান। 

আরও পড়ুন- সাবধান! কথার জালে ভোলানো, এই রাশির জাতক-জাতিকাদের কাছে বাঁ হাতের খেল

ভোগ ও সংস্কার

কিরীটিশ্বরী সতীপীঠে প্রতিদিনই মাছ-সহ অন্নভোগ দেওয়া হয়। ভক্তরা আগে থেকে ফোনে জানালে তাঁদের জন্য ভোগের ব্যবস্থা রাখা হয়। এখানকার ভোগপ্রসাদ খুবই বিখ্যাত। তবে মনে রাখতে হবে—এটি প্রত্যন্ত গ্রামের মধ্যে অবস্থিত, আশপাশে হোটেল বা খাবারের দোকান নেই, তাই প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়া উচিত।

কীভাবে পৌঁছবেন?

রেলপথে হাওড়া থেকে আজিমগঞ্জ, লালবাগ কোর্ট রোড বা ডাহাপাড়া ধাম স্টেশন পর্যন্ত ট্রেন ধরে আসা যায়। সেখান থেকে টোটো বা গাড়িতে প্রায় ৪–৫ কিমি পথ। জলপথে মুর্শিদাবাদ ঘাট থেকে নৌকায় সাহানগর বা সাহাপাড়া নেমে টোটোয় মন্দিরে পৌঁছানো যায়। সড়কপথে বহরমপুর থেকে পলসন্ডা হয়ে লালবাগের পথে মন্দিরে যাওয়া যায়। যাত্রাপথ কিছুটা সময়সাপেক্ষ হলেও, ভক্তদের মতে এই পবিত্র স্থানে পৌঁছলে সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।

কিরীটিশ্বরী সতীপীঠ কেবল একটি ধর্মীয় স্থান নয়, এটি এক অনন্য ঐতিহ্যের প্রতীক। এখানে দেবীর প্রতিটি রূপের সঙ্গে মিশে আছে ইতিহাস, লোককথা, ভক্তি আর সংস্কারের গাঁথা। যে কেউ একবার এই স্থানে গেলে দেবীর শক্তি ও শান্তির স্পর্শ অনুভব করেন বলেই ভক্তদের দাবি।

Shaktipeeth Kiriteshwari