/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/04/kojagari-lakshmi-puja-2025-2025-10-04-15-17-46.jpg)
Kojagari Lakshmi Puja 2025: কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা।
Kojagari Lakshmi Puja 2025: বাংলা আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয় কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা। এই পূজার নাম এসেছে এক বিশ্বাস থেকে — 'কে জাগতি?' অর্থাৎ, কে আজ রাতে জেগে আছে দেবী লক্ষ্মীর আরাধনায়? লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, এই রাতে দেবী লক্ষ্মী পৃথিবীতে নেমে আসেন এবং যিনি রাত জেগে ভক্তিসহকারে তাঁর পূজা করেন, দেবী তাঁর ঘরে ধন-সম্পদ ও শান্তি বর্ষণ করেন।
কাঠের জলচৌকিতে দেবীর সরা স্থাপন করা হয়
এই পূজায় প্রথমে কাঠের জলচৌকিতে দেবীর সরা স্থাপন করা হয়। কলাপাতায় ধান, মুদ্রা, হলুদ, পাকা হরিতকি, কড়ি, পানের পাতা ও সোনা দিয়ে সাজানো হয় আসন। পূজায় ১৪টি পাত্রে রাখা হয় উপাচার — এই সংখ্যা সম্পূর্ণতার প্রতীক। এরপর পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে জল দানের রীতি রয়েছে। দেবীর ঘটে পবিত্র জল, ধান ও পদ্মফুল স্থাপন রাখা হয়।
আরও পড়ুন- কবে কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা, ৬ না ৭ অক্টোবর, কতক্ষণ থাকবে পূর্ণিমা?
বৈদিক যুগে কিন্তু লক্ষ্মী ধনের দেবী ছিলেন না। বরং উর্বরতার প্রতীক ছিলেন সরস্বতী নদী। ছিলেন শস্যদায়িনী। পরে আর্য সমাজ কৃষিকাজে পারদর্শী হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে উর্বরতার দেবী রূপে লক্ষ্মীকে মান্যতা দেয়। দুর্বাসা মুনির অভিশাপে দেবী লক্ষ্মী যখন ইন্দ্রপুরী ত্যাগ করেন, তখন পৃথিবীও শ্রীহীন হয়ে পড়ে। সমুদ্র মন্থনের ফলে পুনরায় দেবী শ্রীরূপে আবির্ভূতা হন। তখনই বিষ্ণু তাঁকে পত্নীরূপে গ্রহণ করেন — এই শ্রীই পরে মহালক্ষ্মী রূপের সঙ্গে একাকার হয়ে যান।
আরও পড়ুন- পুজোর ছুটিতে ঘুরে আসুন ঝান্ডি, মোহময়ী দৃশ্য আর কাঞ্চনজঙ্ঘা মন ভরাবেই
ঋগ্বেদের শ্রীসূক্তে বলা হয়েছে- 'হিরণ্যবর্ণাং হরিণীং সুবর্ণরজতস্রজাম্, চন্দ্রাং হিরণ্ময়ীং লক্ষ্মীং জাতবেদো ম আবহ।।' এই মন্ত্রের মাধ্যমে আহ্বান করা হয় সুবর্ণবর্ণা, পদ্মাসনা, চঞ্চলা কিন্তু কল্যাণদাত্রী লক্ষ্মীকে। নারদীয় পুরাণে উল্লেখ আছে— আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে উপবাস করে, সন্ধ্যায় চন্দ্রোদয়ের সময় তামা বা মাটির ঘটে লক্ষ্মীকে স্থাপন করে পূজা করতে হয়। এই আচারে একলক্ষ বা তার সমপরিমাণ ঘিয়ে ঢালা প্রদীপ জ্বালানোর বিধান আছে। পরে ব্রাহ্মণ ভোজন, নাচ-গানে রাত জাগা এবং সকালে স্নান করে পূজা শেষ করতে হয়।
আরও পড়ুন- রাহুর অশুভ প্রভাব কাটাতে দুর্গার এই রূপের জুড়িমেলা ভার! কীভাবে করবেন আরাধনা?
বাঙালি ঘরে লক্ষ্মী দেবীকে ধনের দেবী নয়, বরং ঘরের মেয়ের মতই পূজা করা হয়। শান্ত, স্নিগ্ধ, দ্বিভুজা রূপে তিনি 'গৃহলক্ষ্মী'। বৃহস্পতিবারে নারীরা তাঁকে ধান, দুধ, কলা এবং মিষ্টি নিবেদন করেন। এই উপাসনায় দেবীকে বলা হয়— 'পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ-সৃণিভির্যাম্যসৌম্যয়োঃ, পদ্মাসনাস্থাং ধ্যায়েচ্চ শ্রিয়ং ত্রৈলোক্যমাতরম্।।'
আরও পড়ুন- আসছে বছর আবার হবে! কিন্তু আগামী তিন বছর কবে দুর্গা, লক্ষ্মী, কালীপুজো? দেখে নিন এখানে
সব মিলিয়ে বলা যায় যে লক্ষ্মী কেবল ধনের প্রতীক নন, তিনি ঐশ্বর্য, সৌন্দর্য, জ্ঞান ও শান্তির প্রতীক। কোজাগরী পূর্ণিমার জ্যোৎস্না যেমন মন ও প্রকৃতিকে শুদ্ধ করে, তেমনি দেবী লক্ষ্মীর উপাসনা মানবজীবনে আলো এবং মঙ্গল আনে।