/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/30/kumari-puja-2025-09-30-08-13-58.jpg)
Kumari Pujo: কুমারী পুজো।
Durga Puja 2025: ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতির ইতিহাসে কুমারী পূজা কেবলমাত্র ধর্মীয় আচার নয়। এটি মানব জীবনের নৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের প্রতিফলন। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন— 'নারীর মধ্যেই দেবী আছে, তাঁকে সম্মান করো, পূজা কর, এতে শক্তি ও নৈতিকতা উভয়ই বিকশিত হয়।'
কুমারী পূজার ধারণা অতি প্রাচীন
কুমারী পূজার ধারণা অত্যন্ত প্রাচীন। ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের দেবীসূক্তে অম্ভৃক ঋষির কন্যা, ব্রহ্মবিদুষী বাক, আত্মাকে বিশ্বেশ্বরী ও জগৎ জননী হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি ঘোষণা করেছিলেন— 'আমিই সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের ঈশ্বরী, উপাসকগণের ধনদায়িনী, নির্গুণা ভগবতী রূপে অবস্থান করি।' এই ধারণাই পরে পৌরাণিক যুগে আরও বিস্তৃত রূপ নিয়েছে।
আরও পড়ুন- দুর্গাপূজায় থিমের ছড়াছড়ি, প্রতিমা তৈরি হচ্ছে নানা জিনিস দিয়ে, শাস্ত্রে কী বলা আছে?
শ্রীশ্রীচণ্ডীর নারায়ণী স্তুতিতে ইন্দ্র-সহ দেবতারা দেবীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন— 'বিদ্যা সমস্তা স্তব দেবী ভেদা, স্ত্রীয় সমস্তা সকলা জগৎসু।' অর্থাৎ, জগতে যত বিদ্যা ও নারী আছেন, সবাই দেবীরই রূপ। তাই নারী পূজা মানেই দেবী পূজা, আর কুমারী পূজা তারই প্রতিফলন। শ্রীমদ্দেবীভাগবতে (তৃতীয় স্কন্ধ, ২৬ অধ্যায়, ৩৬-৪২ শ্লোক) কুমারী পূজার স্পষ্ট উল্লেখ আছে। তাতে বলা আছে, ৩ থেকে ১০ বছর বয়সি কন্যাকে দেবীর বিভিন্ন রূপ হিসেবে পূজা বিধিসম্মত।
আরও পড়ুন- রাহুর অশুভ প্রভাব কাটাতে দুর্গার এই রূপের জুড়িমেলা ভার! কীভাবে করবেন আরাধনা?
এই বিভিন্ন বয়সের কুমারীদের আবার বিভিন্ন নামও আছে। যেমন-
৩ বছরের কুমারী – ত্রিমূর্তি
৪ বছরের কুমারী – কল্যাণী
৫ বছরের কুমারী – রোহিণী
৬ বছরের কুমারী – কালিকা
৭ বছরের কুমারী – চণ্ডিকা
৮ বছরের কুমারী – শাম্ভবী
৯ বছরের কুমারী – দুর্গা
১০ বছরের কুমারী – সুভদ্রা
আরও পড়ুন- দেবী দুর্গার কলাবউ! এর প্রতিটি পাতার আড়ালে লুকিয়ে আছে মহাশক্তির রহস্য?
শাস্ত্রে বলা হয়েছে কুমারী পূজা করলে ভক্ত নানা রকম কল্যাণ লাভ করেন— যেমন ত্রিমূর্তি পূজাতে চতুর্বর্গ লাভ (ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ) হয়। কল্যাণী পূজাতে বিদ্যা, বিজয়, রাজ্য লাভ হয়। কালিকা পূজাতে শত্রুনাশ হয়। চণ্ডিকা পূজাতে ঐশ্বর্য লাভ হয়। শাম্ভবী পূজাতে হয় দারিদ্রমুক্তি। দুর্গা পূজাতে হয় দুর্গম কর্মসিদ্ধি। সুভদ্রা পূজায় হয় মনোস্কামনা পূরণ। পুরাণে মূলত কন্যাকে বস্ত্র ও অলঙ্কার দান করে সম্মান দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে তন্ত্রে কুমারী পূজা সর্বাধিক বেশি দেখা যায়। রুদ্রযামল, শ্রীচক্র তন্ত্র ও যোগিনী তন্ত্রে একে দেবীর প্রত্যক্ষ উপাসনা বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন- দুর্গাপূজায় পঞ্চমী থেকেই এখন 'মহা' শব্দটা জুড়ে দেওয়ার চল, শাস্ত্র কী বলে?
দুর্গাপূজা হোক কিংবা নবরাত্রি, কুমারী পূজা ছাড়া পূজার মহিমা যেন অসম্পূর্ণ। মৃন্ময়ী দেবীমূর্তির পাশাপাশি জীবন্ত কুমারী রূপে দেবীকে আরাধনা করার মধ্যে দিয়ে এই পূজা সম্পূর্ণতা লাভ করে। ১ থেকে ১৬ বছরের বালিকাদের মধ্যে যারা ঋতুমতী হয়নি তাদেরকেই মূলত পূজার যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।