/indian-express-bangla/media/media_files/2025/08/18/mahajati-sadan-foundation-2025-08-18-20-17-59.jpg)
Mahajati Sadan Foundation: মহাজাতি সদনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল এই দিনে।
Mahajati Sadan Foundation: কলকাতার ঐতিহাসিক স্থাপত্য ও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের স্মারক হিসেবে মহাজাতি সদনের নাম আজও বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। বাঙালির আবেগ, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে মহাজাতি সদন শুধু একটি ভবন নয়, এটি একটি ইতিহাসের দলিল।
১ টাকার লিজে মিলেছিল জমি
১৯৩৭ সালের মে মাসে সুভাষচন্দ্র বসু ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু নৃপেন্দ্রচন্দ্র মিত্র দেশপ্রেমিকদের নিয়ে এক সভা করেন। সেই সভাতেই সুভাষচন্দ্র কলকাতায় একটি বড় প্রেক্ষাগৃহ তৈরির পরিকল্পনা প্রকাশ করেন। খুব শীঘ্রই তিনি কলকাতা পৌরসংস্থার কাছ থেকে মধ্য কলকাতার সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ এবং হ্যারিসন রোডের সংযোগস্থলে ৩৮ কাঠা জমি পান মাত্র ১ টাকার লিজে। এই প্রেক্ষাগৃহের নামকরণের জন্য তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অনুরোধ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ নাম দিয়েছিলেন 'মহাজাতি সদন'। ভবনের নকশা তৈরির দায়িত্ব পেয়েছিলেন শান্তিনিকেতনের বিশিষ্ট স্থপতি সুরেন্দ্রনাথ কর।
আরও পড়ুন- নেতাজির বিমান দুর্ঘটনা! আদৌ এর কোনও সত্যতা আছে?
১৯৩৯ সালের ১৯ অগস্ট এক ঐতিহাসিক দিনে, সুভাষচন্দ্র বসুর আহ্বানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাজাতি সদনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডা. বিধানচন্দ্র রায়-সহ বিশিষ্টজনেরা। রবীন্দ্রনাথ তাঁর বক্তৃতায় বলেছিলেন: 'আজ এই মহাজাতি সদনে আমরা বাঙালী জাতির যে শক্তি প্রতিষ্ঠা করবার সংকল্প করেছি তা সেই রাষ্ট্রশক্তি নয়, যে শক্তি শত্রুমিত্র সকলের প্রতি সংশয় কণ্টকিত। এখানে আসুক জ্ঞানের তপস্যা, সৃষ্টিশক্তির কল্পনা ও জনসেবার আত্মনিবেদন।'
আরও পড়ুন- আজকের দিনে! ১৯১০ সালে বাংলায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর সৃষ্টি 'গীতাঞ্জলি'
১৯৪১ সালে সুভাষচন্দ্র দেশত্যাগ করলে মহাজাতি সদনের নির্মাণ থেমে যায়। ব্রিটিশ সরকার তাঁর নামে থাকা জমির লিজ বাতিল করে দেয়। পরে শরৎচন্দ্র বসু ও নৃপেন্দ্রচন্দ্র মিত্র আদালতে রায় জিতে নেন। স্বাধীনতার পর ১৯৪৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় 'মহাজাতি সদন বিল' পাস হয়। অবশেষে মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের উদ্যোগে কাজ শুরু হয় এবং ১৯৫৮ সালের ১৯ অগস্ট মহাজাতি সদনের উদ্বোধন হয়।
আরও পড়ুন- অটলবিহারী বাজপেয়ীর লেখা কবিতা থেকে ৫টি লাইন, যা ফিরিয়ে দেবে আপনার আত্মবিশ্বাস!
চারতলা এই ভবনের কেন্দ্রে রয়েছে ১৩০০ আসন বিশিষ্ট প্রেক্ষাগৃহ। একতলায় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়ে স্থায়ী প্রদর্শনী। দোতলায় ২০৪টি সাদা-কালো আলোকচিত্র। তিনতলায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবন নিয়ে ৭২টি আলোকচিত্র। প্রবেশপথে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সুভাষচন্দ্র বসুর আবক্ষ মূর্তি। ১০০ আসন বিশিষ্ট সভাকক্ষ। এছাড়া, প্রায় ৫৫০ স্বাধীনতা সংগ্রামীর প্রতিকৃতি মহাজাতি সদনের বিশেষ আকর্ষণ।
আরও পড়ুন- শ্রীরামকৃষ্ণের ৫টি জীবনমন্ত্র, যেগুলো আজকের ব্যস্ত জীবনে মানসিক শান্তি এনে দেবে
বাঙালির কাছে মহাজাতি সদন শুধু একটি ভবন নয়, এটি ইতিহাসের সাক্ষী। এখানে একত্র হয়েছে তিন মহামানব—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুভাষচন্দ্র বসু ও বিধানচন্দ্র রায়ের স্বপ্ন এবং উদ্যোগ। এই স্থান আজও ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত এক প্রতীক। আর, তাই মহাজাতি সদন আজও বাঙালির গর্ব। স্বাধীনতার ইতিহাস জানতে, দেশপ্রেম অনুভব করতে এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সংগ্রামের অনুপ্রেরণা পেতে মহাজাতি সদন এক অপরিহার্য স্থান।