/indian-express-bangla/media/media_files/2025/08/16/rabindranath-tagores-gitanjali-2025-08-16-19-39-55.jpg)
Rabindranath Tagore's Gitanjali: গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্যে নোবেল পেয়েছিলেন বিশ্বকবি।
Rabindranath Tagore, Gitanjali: ১৯১০ সালের ১৭ আগস্ট বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য দিন। এই দিনেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর কাব্যগ্রন্থ গীতাঞ্জলি বাংলায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এটি কেবল একটি বই নয়, বরং ভক্তি, মানবতা ও বিশ্বজনীনতার এক অনবদ্য সাহিত্য ভাণ্ডার। গীতাঞ্জলিতে মোট ১৫৭টি কবিতা সংকলিত হয়েছে। কবিতাগুলি ভক্তিমূলক, আধ্যাত্মিক এবং মানবমনের গভীর আবেগে পূর্ণ। বেশিরভাগ কবিতাতেই রবীন্দ্রনাথ নিজেই সুরারোপ করেছিলেন, যা পরবর্তীতে গান আকারে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।
গীতাঞ্জলি রচনার ইতিহাস
আরও পড়ুন- বিপ্লবী থেকে ঋষি, কতটুকু জানেন শ্রীঅরবিন্দকে?
গীতাঞ্জলি মূলত লেখা হয়েছিল শিলাইদহ, শান্তিনিকেতন ও কলকাতার বিভিন্ন সময়কালে। ১৯০৮-০৯ সালে রবীন্দ্রনাথ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এসব কবিতা প্রকাশ করেছিলেন। এরপর এগুলো সংগ্রহ করে ১৯১০ সালে প্রকাশিত হয় কাব্যগ্রন্থ গীতাঞ্জলি। এই সময় রবীন্দ্রনাথ ছিলেন কঠোর নিরামিষভোজী এবং শান্তিনিকেতনে আশ্রমের নিয়ম কঠোরভাবে মেনে চলতেন। এমনকী, অসুস্থ অবস্থায় ডাক্তার আমিষ খাওয়ার পরামর্শ দিলেও, তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। রবীন্দ্র-গবেষক সুকুমার সেন জানিয়েছেন, তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র শমীন্দ্রনাথের মৃত্যুতে কবি গভীরভাবে আঘাত পেয়েছিলেন। আর, সেই শোক ভক্তিরসে রূপান্তরিত হয়েছিল। যা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে গীতাঞ্জলিতে।
আরও পড়ুন- অটলবিহারী বাজপেয়ীর লেখা কবিতা থেকে ৫টি লাইন, যা ফিরিয়ে দেবে আপনার আত্মবিশ্বাস!
১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথ নিজেই বাংলার গীতাঞ্জলি থেকে নির্বাচিত ৫৩টি কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করে প্রকাশ করেছিলেন Song Offerings নামে। এই অনুবাদই তাঁকে আন্তর্জাতিক সাহিত্য অঙ্গনে নতুন পরিচিতি এনে দেয়। কিছু অনুবাদ রবীন্দ্রনাথের সহযোগীরা করেছিলেন, তবে মূল কাজটি ছিল কবির নিজস্ব। পরবর্তীতে ব্রিটিশ কবি ও অনুবাদক জো উইন্টার পুরো গীতাঞ্জলিকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন।
আরও পড়ুন- শ্রীরামকৃষ্ণের ৫টি জীবনমন্ত্র, যেগুলো আজকের ব্যস্ত জীবনে মানসিক শান্তি এনে দেবে
১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম অ-ইউরোপীয় হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ইংরেজ লেখক স্টার্জ মুর তাঁকে মনোনীত করেন, আর সুইডিশ একাডেমির সদস্য পার হলস্ট্রম ও ভার্নার লন হেইডেনস্টামের দৃঢ় সমর্থনে তাঁকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই খবর প্রকাশ পায় ১৯১৩ সালের ১০ নভেম্বর। যদিও তা কলকাতায় পৌঁছতে কয়েকদিন সময় লেগেছিল, তবে একবার খবর ছড়িয়ে পড়তেই সমগ্র ভারত আনন্দে নেচে উঠেছিল।
আরও পড়ুন- শতবার্ষিকীতে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য, দেখে নেওয়া যাক সাম্যের কবির জীবন, সাহিত্য ও উত্তরাধিকার
২০১০ সালে গীতাঞ্জলি প্রকাশের শতবর্ষ উপলক্ষে কলকাতা মেট্রোর নাকতলা স্টেশনটির নামকরণ করা হয়েছে গীতাঞ্জলি মেট্রো স্টেশন নামে। আজও গীতাঞ্জলির গান ও কবিতা বিশ্বজুড়ে সমান জনপ্রিয়। রবীন্দ্রনাথের এই সৃষ্টি আমাদের শিখিয়েছে ভক্তি, প্রেম, মানবতা ও বিশ্বজনীনতার বার্তা। তাই আজকের দিনে গীতাঞ্জলির প্রকাশ কেবল সাহিত্য নয়, আমাদের সাংস্কৃতিক ইতিহাসেরও গর্বের অধ্যায়।