Mahalaya 2025: কেন মহালয়াতেই হয় তর্পণ? এবছর সূর্যগ্রহণ ছিল, তর্পণ করাটা কি ঠিক হল?

Mahalaya 2025: মহালয়ায় ভোরবেলা কেন তর্পণ করা হয়? জানুন মহালয়ার মাহাত্ম্য, তর্পণের ইতিহাস, কর্ণের কাহিনি, শ্রাদ্ধের নিয়ম, সূর্যগ্রহণের দিনে তর্পণ করা যায় কি না—যাবতীয় তথ্য!

Mahalaya 2025: মহালয়ায় ভোরবেলা কেন তর্পণ করা হয়? জানুন মহালয়ার মাহাত্ম্য, তর্পণের ইতিহাস, কর্ণের কাহিনি, শ্রাদ্ধের নিয়ম, সূর্যগ্রহণের দিনে তর্পণ করা যায় কি না—যাবতীয় তথ্য!

author-image
IE Bangla Lifestyle Desk
New Update
Tarpan 2

Mahalaya 2025: মহালয়াতেই তর্পণ করা হয় কেন?

Mahalaya 2025: সনাতন ধর্মে মহালয়া এক বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন। ভাদ্র পূর্ণিমার পরবর্তী প্রতিপদ থেকে শুরু হয়ে অমাবস্যা পর্যন্ত চলে পিতৃপক্ষ। এই সময়কালেই পূর্বপুরুষরা তাঁদের উত্তরপুরুষদের নিকটে উপস্থিত থাকেন বলে বিশ্বাস করা হয়। সেই কারণেই পিতৃপক্ষজুড়ে শ্রাদ্ধ এবং তর্পণের আচার পালিত হয়। এর শেষ দিনটি, অর্থাৎ মহালয়া, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। 

Advertisment

তর্পণ শব্দটি এসেছে ত্রুপ ধাতু থেকে, যার অর্থ সন্তুষ্ট করা। ভগবান, ঋষি, পিতৃপুরুষ ও গুরুর উদ্দেশে জল ও অন্ন নিবেদন করে তাঁদের তুষ্ট করাই হল তর্পণ। মহালয়ার ভোরে গঙ্গার ঘাটে কিংবা নদীর ধারে অসংখ্য মানুষকে তর্পণ করতে দেখা যায়। 

আরও পড়ুন- শুভ-অশুভর জাঁতাকলে নয়, মহালয়ায় এইসব বার্তা শেয়ারে থাকবেন ত্রুটিমুক্ত!

Advertisment

মহাভারতে উল্লেখ আছে কর্ণের গল্প। মৃত্যুর পর স্বর্গে তিনি সোনা ও রত্নকে খাদ্য হিসেবে পেয়েছিলেন। কারণ, জীবদ্দশায় তিনি অসংখ্য সোনা-রত্ন দান করলেও কখনও পিতৃপুরুষের উদ্দেশে খাদ্য বা জল দান করেননি। কর্ণ এ বিষয়ে অনুতাপ প্রকাশ করলে ইন্দ্র (কিংবা যম) তাঁকে ১৬ দিনের জন্য মর্ত্যে ফিরে গিয়ে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ করার সুযোগ দেন। সেই ১৬ দিনকেই বলা হয় পিতৃপক্ষ।

আরও পড়ুন- সোশ্যাল মিডিয়ায় 'শুভ মহালয়া'র বার্তায় ছয়লাপ, কিন্তু, এসব লেখা যায়? ঠিকটা জানুন

পিতৃপক্ষের প্রতিটি তিথিতে শ্রাদ্ধ ও তর্পণ করা হয়, তবে অমাবস্যা বা মহালয়ার দিন এই তর্পণ বিশেষভাবে ফলপ্রসূ বলে ধরা হয়। কারণ— এই সময় পূর্বপুরুষদের আত্মা মানুষের কাছে অবস্থান করে। তর্পণের মাধ্যমে তাঁদের আশীর্বাদ পাওয়া সহজ হয়। পিতৃপুরুষদের তুষ্ট করলে জীবনে শান্তি, দীর্ঘায়ু, ধন-সম্পদ এবং জ্ঞান লাভ হয়। 

আরও পড়ুন-  কবে মহালয়া? জানুন এই তিথিতে কী করবেন, তর্পণের সঠিক সময় কখন? 

পিতৃ ও মাতৃ তর্পণে জল, তিল, চন্দন, তুলসীপাতা এবং ত্রিপত্রী ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে তিল তর্পণ করা হয় জল এবং কালো তিল দিয়ে। যম তর্পণ করা হয় অন্য তর্পণের তিলের পরিবর্তে যব বা ধান ব্যবহার করে। বিকল্প তর্পণ পদ্ধতিতে তিলের বদলে কুরুক্ষেত্র মন্ত্র পাঠ করে জলে তুলসীপাতা দিয়ে তর্পণ করা হয়।

মহালয়া ও সূর্যগ্রহণ ২০২৫

এবার বিশেষ বিষয় হল— ২০২৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর, রবিবার মহালয়ার দিনই সূর্যগ্রহণ। হিন্দু ধর্মে গ্রহণকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয়। তাই অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, গ্রহণের দিনে তর্পণ করা যাবে কি না? শাস্ত্র মতে— গ্রহণ দৃশ্যমান হলে গ্রহণ শুরুর আগে তর্পণ শেষ করতে হয়। গ্রহণ চলাকালীন তর্পণ বা কোনও আচার করলে তার ফল পাওয়া যায় না। কিন্তু ২০২৫ সালের সূর্যগ্রহণ ভারতে দৃশ্যমান নয়। তাই এদিন মহালয়ার তর্পণ স্বাভাবিক নিয়মেই করা যাবে। বিশেষ কোনও বাধা বা অতিরিক্ত নিয়ম মানতে হবে না। 

আরও পড়ুন- মহালয়া থেকে লক্ষ্মী, পুজোপর্বে যাবতীয় তিথি রাখুন আপনার নখদর্পণে! 

তর্পণের আসল তাৎপর্য কেবল পূর্বপুরুষকে স্মরণ নয়, বরং জীবিত এবং অতীত প্রজন্মের মধ্যে এক সেতুবন্ধন। পিতৃপুরুষের আশীর্বাদে পরিবার, সমাজ ও বংশ শক্তি বৃদ্ধি পায়। তাই মহালয়ার দিনে তর্পণকে শুধু আচার নয়, বরং প্রজন্মের মিলনক্ষেত্র হিসেবে দেখা উচিত। মহালয়ার ভোরে তর্পণ করার রীতি শুধু পুরাণকথা বা শাস্ত্রীয় নির্দেশে সীমাবদ্ধ নয়। এটি মানবজীবনের ঐতিহ্য এবং কৃতজ্ঞতার প্রকাশ। পূর্বপুরুষকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁদের আশীর্বাদ প্রার্থনা করাই তর্পণের মূল উদ্দেশ্য। একইসঙ্গে একথা মাথায় রাখাও ভালো যে, ২০২৫ সালের মহালয়া সূর্যগ্রহণের দিন পড়লেও, এ নিয়ে দ্বিধার কোনও কারণও নেই। তর্পণ যথারীতি করা যাবে।

2025 Mahalaya