/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/15/mahasaraswati-puja-2025-10-15-02-54-47.jpg)
Mahasaraswati Puja: মহাসরস্বতী পূজা।
Mahasaraswati Puja of Bankura: বাঁকুড়া জেলার দ্বারকেশ্বর নদীর তীরে অবস্থিত কালাবতী গ্রাম প্রতি বছর দীপান্বিতা অমাবস্যার রাতে এক অনন্য ঐতিহ্য ধরে রাখে। যখন রাজ্যজুড়ে কালীপুজোয় মাতোয়ারা মানুষ, তখন এই গ্রামে অনুষ্ঠিত হয় মহাসরস্বতী পূজা — যা একদিকে বিরল, অন্যদিকে আধ্যাত্মিকভাবে গভীর অর্থবহ।
বর্তমানে এই পুজো ট্রাস্টি বোর্ড দ্বারা পরিচালিত হয়
স্থানীয় কিংবদন্তি অনুসারে, বহু শতাব্দী আগে গ্রামের চৌধুরী পরিবারের এক পূর্বপুরুষ বিন্ধ্যাচল পর্বতে তপস্যা করতে গিয়ে দেবী সরস্বতীর স্বপ্নাদেশ পান। দেবী তাঁকে বলেন, নিজের গ্রামে ফিরে এসে মহাসরস্বতী রূপে তাঁর পূজা শুরু করতে। গ্রামে ফিরে সেই সাধক পূজার সূচনা করেন। পরে তিনি ব্রজভূমিতে চলে যাওয়ার আগে পূজার দায়িত্ব তিন ভাইয়ের হাতে অর্পণ করেন। আজও সেই পরিবারই পূজার মূল আয়োজক, যদিও বর্তমানে তা একটি ট্রাস্টি বোর্ড দ্বারা পরিচালিত হয়।
আরও পড়ুন- ১৫০ বছরের পুজো, মনস্কামনা হয় পূরণ, জাগ্রত কেওড়াতলা শ্মশানকালীর এই কাহিনি জানেন?
মন্দিরে দেবী অষ্টভূজা মহাসরস্বতী, সিংহের উপর উপবিষ্টা। তাঁর বাঁ পায়ের নীচে রয়েছে অসুর, দু’পাশে ডাকিনী ও যোগিনী। সঙ্গে আছেন ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর, গণেশ ও দুই সখী। এই প্রতিমার সৌন্দর্য ও শক্তিময় ভাব ভক্তদের মুগ্ধ করে। আগে এখানে মাটির প্রতিমা তৈরি করা হত। কিন্তু এখন স্থায়ী পাথরের মূর্তি প্রতিষ্ঠিত। তবে প্রথা অনুযায়ী প্রতিবছর সেই প্রস্তর মূর্তিতেও “মাটি ছোঁয়ানো” হয় — এই দায়িত্ব থাকে বড়জোড়া থেকে আগত এক নির্দিষ্ট পরিবারের হাতে।
আরও পড়ুন- দেবীর ভোগ ডিম! জানুন ৪৫০ বছরের প্রাচীন কালীমন্দিরের আশ্চর্য কাহিনি!
প্রতি বছর দীপান্বিতা অমাবস্যার রাতে, কালীপুজোর দিনেই হয় মহাসরস্বতীর পূজা। পুজো শুরু হয় মধ্যরাতের আগে এবং চলে ভোর পর্যন্ত। পরদিন সকালে হয় পুষ্পাঞ্জলি ও নরনারায়ণ সেবা, যেখানে গ্রামের প্রতিটি পরিবার অংশ নেয়। আগে পশুবলি প্রচলিত ছিল, কিন্তু ২০২১ সালে পাথরের মূর্তি প্রতিষ্ঠার পর থেকে সেই প্রথা বন্ধ হয়েছে। এখন চালকুমড়ো, আখ, কলা ইত্যাদি প্রতীকী বলি দেওয়া হয়। এই পূজার আরেকটি বিশেষ দিক হল খিচুড়ি প্রসাদ। গ্রামের সবাই মিলে আর্থিকভাবে সহায়তা করে হাজার হাজার ভক্তের জন্য প্রসাদ তৈরি করেন। ভোরবেলায় ভক্তরা দেবীর আরাধনা শেষে প্রসাদ গ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন- রঘুর নামে দক্ষিণবঙ্গের নানা প্রান্তে কালীমন্দির! কোনটা সত্যি আর গল্প, বোঝা দায়
কালীপুজোর রাতে কালাবতী গ্রাম যেন জীবন্ত মেলায় পরিণত হয়। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে এই ব্যতিক্রমী পূজা দেখতে। সারারাত ধরে চলে যাত্রা, কীর্তন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গ্রামের শিশু থেকে প্রবীণ—সবাই এই দিনে একসঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় গ্রামের সকল মানুষ মহাসরস্বতী মন্দিরে এসে প্রণাম করেন। বিশ্বাস করা হয়, দেবীর কৃপায় এই গ্রামে কোনো বড় বিপদ আসে না। পূজার এই আয়োজনেই গ্রামের ঐক্য ও সংস্কৃতির ছাপ স্পষ্ট ধরা পড়ে।