/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/14/ashoktaru-bandyopadhyay-2025-10-14-12-21-03.jpg)
Rabindra Sangeet legend- অশোকতরু বন্দ্যোপাধ্যায়
Rabindra Sangeet legend Ashoktaru Bandyopadhyay: রবীন্দ্রসঙ্গীতের ইতিহাসে অশোকতরু বন্দ্যোপাধ্যায় এমন এক নাম, যাঁর গায়কি আজও হৃদয়ে বাজে। তাঁর প্রতিটি উচ্চারণ, প্রতিটি সুর যেন রবীন্দ্রনাথের ভাবকে নতুন জীবন দিত। আজ তাঁর জন্মদিন।
অভিনয় এবং রবীন্দ্রনৃত্যেও তিনি ছিলেন সমান পারদর্শী
১৯৩০ সালের ১৪ অক্টোবর কলকাতার এক ব্রাহ্ম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন অশোকতরু বন্দ্যোপাধ্যায়। পিতা শম্ভুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাতা সুলেখা ছিলেন শান্তিনিকেতনের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী। সঙ্গীত ছিল তাঁদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। পরিবারের এই সাংস্কৃতিক পরিবেশেই বেড়ে ওঠেন 'তরু' — এটাই ছিল তাঁর ডাকনাম।
আরও পড়ুন- ১৫০ বছরের পুজো, মনস্কামনা হয় পূরণ, জাগ্রত কেওড়াতলা শ্মশানকালীর এই কাহিনি জানেন?
ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি গভীর টান ছিল তাঁর। প্রথমে রবীন্দ্রলাল রায়ের কাছে শুরু হয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রাথমিক শিক্ষা। ১৯৪৪ সালে শান্তিনিকেতনের সঙ্গীত ভবনে ভর্তি হয়ে পাঁচ বছর ধরে সঙ্গীতচর্চা করেন। সেখানে শৈলজারঞ্জন মজুমদার ও সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তীর মত বিশিষ্ট শিক্ষকদের সান্নিধ্য তাঁর শিল্পীজীবনের ভিত্তি গড়ে দেয়। শুধু গানে নয়, অভিনয় এবং রবীন্দ্রনৃত্যেও তিনি ছিলেন সমান পারদর্শী।
আরও পড়ুন- সহজে দূর করুন দুর্ভাগ্য, কাজে লাগান এই সব টিপস
১৯৪৮ সালে আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রে তাঁর বেতারজীবনের সূচনা। ষাটের দশকে তিনিই প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীতের একক অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ করেন— যা ভবিষ্যতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের স্বতন্ত্র উপস্থাপনার পথ খুলে দেয়। তাঁর কণ্ঠে 'সোনার তরী', 'আমার প্রাণের মানুষ', 'আলো আমার আলো'–র মত গান এক অন্য মাত্রা পেয়েছিল।
আরও পড়ুন- দেবীর ভোগ ডিম! জানুন ৪৫০ বছরের প্রাচীন কালীমন্দিরের এক আশ্চর্য কাহিনি!
গ্রামোফোন কোম্পানিতে তাঁর তিন শতাধিক গান রেকর্ড করা হয়েছে, যেগুলির মধ্যে অনেকগুলো আজও শ্রোতার মনে নস্টালজিয়ার ছোঁয়া জাগায়। তাঁর রেকর্ডিংয়ে কণ্ঠের শুদ্ধতা ও ভাবপ্রকাশের গভীরতা তাঁকে আলাদা করে চিনিয়ে দিয়েছিল।
আরও পড়ুন- রঘু ডাকাতের নামে নানা স্থানে কালীমন্দির! কোনটা সত্যি আর গল্প, বোঝা দায়
১৯৮১ সালে শ্রীলঙ্কা সরকারের আমন্ত্রণে কলম্বো সফরে গিয়ে তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীতের দর্শন ও ভাবধারা নিয়ে বক্তৃতা দেন এবং সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ১৯৯২ সালে টরন্টো ও মিডল্যান্ডে অনুষ্ঠিত রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসবেও তিনি আমন্ত্রিত হন। এমনকী বিবিসি থেকেও তাঁর ওপর বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়— যা তাঁর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রতীক।
শিক্ষক হিসেবেও তিনি ছিলেন এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। কলকাতার ‘দক্ষিণী’, ‘গীতবিতান’, জামশেদপুরের ‘টেগোর সোসাইটি’ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন বহু বছর। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংস্থা ‘শ্রুতি’ রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রজন্মান্তরের চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অশোকতরু ছিলেন গভীরভাবে ব্রাহ্ম পরিবারের সন্তান। তাই ব্রহ্মসঙ্গীতেও তাঁর ছিল গভীর অনুরাগ। তাঁর কণ্ঠে 'ব্রহ্মানন্দে আছি' কিংবা 'দয়াময় তুমি আছ'–র মত গানে আধ্যাত্মিক প্রশান্তির ছোঁয়া পাওয়া যায়।
আকাশবাণীর অডিশন বোর্ড, রাজ্য সঙ্গীত একাডেমি, বিশ্বভারতী সঙ্গীত সমিতি— এইসব প্রতিষ্ঠানে তিনি সম্মানিত সদস্য হিসেবে যুক্ত ছিলেন। শিল্পীজীবনের প্রতিটি মুহূর্ত তিনি উৎসর্গ করেছিলেন সঙ্গীতকে। ১৯৯৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর ৬৬ বছর বয়সে শেষ হয় তাঁর সুরের জীবনযাত্রা। কিন্তু রবীন্দ্রসঙ্গীতের জগতে তাঁর প্রভাব আজও অম্লান। অশোকতরু বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের শিখিয়ে গেছেন— গান শুধু শিল্প নয়, এটি আত্মার সাধনা।