Rain Cravings Psychology: বৃষ্টি হলেই কেন ভাজাভুজি খেতে ইচ্ছে হয় জানেন? কারণটা জানলে তাজ্জব হয়ে যাবেন

Rain Food Psychology: 'বৃষ্টি হচ্ছে, চপ বা বেগুনি কিছু একটা কিনে নিয়ে আসি!'— এ কথাটি প্রায় প্রতিটি ভারতীয় ঘরেই শোনা যায়। অথচ কেউ কখনও প্রশ্ন করেন না, কেন বৃষ্টি হলেই হঠাৎ করে গরম চপ, বেগুনির প্রতি এতটা আকর্ষণ বেড়ে যায়?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের ঢুকতে হবে মন, স্মৃতি ও ইন্দ্রিয়ের গভীরে। 

ঠান্ডা আবহাওয়ার প্রভাব

পুষ্টিবিদ কৃষ অশোক বলেন, 'ঠান্ডা আবহাওয়া আমাদের শরীরে ক্যালোরির চাহিদা বাড়ায়, ফলে স্বাভাবিকভাবেই আমরা উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত গরম খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হই। ভাজা খাবার যেমন চপ, বেগুনি, ফুলুরি দ্রুত শরীরকে তরতাজা করে এবং এগুলো খেলে মনটাও ভালো লাগে।' 

আরও পড়ুন- ওজন কমানোর ওষুধেই কমছে বন্ধ্যাত্ব? ভারতীয় মহিলাদের আশার বাণী শোনালেন চিকিৎসকরা

শব্দ, গন্ধ ও স্বাদ

দিঘা অর্গানিক ফুডসের প্রতিষ্ঠাতা আরাধনা সিং বলেন, 'ভাজার শব্দ, মশলার গন্ধ এবং মুচমুচে টেক্সচার — এই তিনটি সংবেদন একসঙ্গে কাজ করে আমাদের মনকে খুশি করে দেয়।' এছাড়াও বৃষ্টির শব্দ এবং গন্ধ আমাদের মনকে করে তোলে রোমান্টিক আর নস্টালজিক— তখন চায়ের সঙ্গে চপ, বেগুনি যেন এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধু হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন- বর্ষাকালে সুস্থ থাকতে খান এই সবজি, ৮ ধরনের রোগ কমায়, ছুটতে হবে না চিকিৎসকের কাছে

মনোবিজ্ঞান: সেরোটোনিন ও ডোপামিন

ভাজাভুজির মত কার্বো-ফ্যাট যুক্ত খাবার শরীরে সেরোটোনিন এবং ডোপামিন নিঃসরণ ঘটায়। এই নিউরোট্রান্সমিটার দু’টি:

• মুড ভালো রাখে

• দুঃখ বা একাকীত্ব দূর করে

• খাওয়া শেষে 'পুরস্কার' পাওয়ার অনুভূতি আসে

এ কারণেই বর্ষার দিনগুলোতে মন খারাপ হলে আমরা অজান্তেই ভাজা খাবারের দিকে ঝুঁকে পড়ি।

আরও পড়ুন- চিনে ২০টি নতুন বাদুড় ভাইরাসের সন্ধান, ভয়ংকর নিপা-হেন্দ্রার মতই! করোনার পর কি ফের অতিমারির আশঙ্কা?

শৈশবের স্মৃতি এবং আবেগ

ভাজাভুজির গন্ধ অনেক সময়েই আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় ছোটবেলার বর্ষামুখর বিকেলের স্মৃতিতে—মায়ের হাতে তৈরি গরম ভাজা, পাশেই এফএমে গান শোনা আর জানালার কাচে বৃষ্টির ফোঁটা দেখা। এই নস্টালজিয়া আমাদের খাদ্য পছন্দকে প্রভাবিত করে। গবেষণায় দেখা গেছে, স্মৃতিতে থাকা খাবার (comfort food) মানুষকে মানসিকভাবে কোনও খাবারের দিকে টেনে নিয়ে যায়।

আরও পড়ুন- মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এই ৩টি ব্রেন এক্সারসাইজ করুন, কাজ দেবে দুর্দান্ত! দাবি নিউরোলজিস্টের

আঞ্চলিক ভিন্নতা ও ঐতিহ্য

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন ধরণের বর্ষাকালীন ভাজা খাবার রয়েছে:

• উত্তর ও পশ্চিম ভারত: পেঁয়াজ, আলু, ব্রেড পকোড়া

• দক্ষিণ ভারত: বানানা ভাজা, বন্ডা

• উপকূলীয় অঞ্চল: চিংড়ি বা মাছ দিয়ে পকোড়া

• পূর্ব ভারত: চপ, বেগুনি, ফুলুরি

এগুলো শুধু খাবার না, বরং বর্ষার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবিও।

স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে নতুন ট্রেন্ড

বর্তমানে অনেকেই ট্র্যাডিশনাল ভাজাভুজির পরিবর্তে নীচের বিকল্পগুলো বেছে নিচ্ছেন:

• এয়ার ফ্রায়ারে ভাজা

• অলিভ অয়েলে হালকা তেলে বানানো ভাজা

• গ্লুটেন-ফ্রি বেসন বা জোয়ারের তৈরি ভাজাভুজি

সুস্বাদু আবার স্বাস্থ্যকর, এই দুইয়ের ভারসাম্য বজায় রাখাই এখন সকলের চাহিদা।

বৃষ্টি ও পকোড়া যেন একে অপরের জন্য তৈরি! এর পিছনে শুধু মুখের স্বাদ নয়, বরং আবেগ, স্মৃতি, মনোবিজ্ঞান এবং আমাদের শরীরের প্রয়োজন— সব মিলেই খাবারের প্রতি এই প্রেম আমাদের মধ্য়ে তৈরি হয়েছে। তাই পরেরবার বৃষ্টি শুরু হলে, আর দ্বিধা নয়। নিজের পছন্দের ভাজা হয় বাড়িতেই বানিয়ে ফেলুন। অথবা, টুক করে কিনে আনুন দোকান থেকে।