Shakunatala Kali Puja: কালীময় পশ্চিমবঙ্গ। বাংলার জাগ্রত কালীপুজোগুলোর অন্যতম, হুগলির কোন্নগর এলাকার শকুনতলা কালীপুজো। এই পুজো প্রতিষ্ঠার পিছনে রয়েছে অলৌকিক কাহিনি। পাশাপাশি, এই দেবীর কাছে প্রার্থনা করে, পুজো দিয়ে অসংখ্য ভক্ত উপকৃত হয়েছেন বলেও কথিত আছে। আজও দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা এই দেবীর কাছে ছুটে আসেন পুজো দিতে।
এই পুজো বহু পুরোনো। এখানে দেবী সূর্যের মুখ দেখেন না। সূর্যোদয়ের আগেই তাঁকে বিসর্জন দেওয়াই হল নিয়ম। আজ যেখানে দেবীর পুজো হয়, একটা সময় সেখানে ছিল জঙ্গল। সেই জঙ্গলে শকুন বসে থাকত। সেই থেকে দেবীর নাম হয়েছে শকুনতলা। দেবী রক্ষাকর্ত্রী হিসেবে ভক্তদের কাছে পরিচিতা। তাই এখানে দেবী রক্ষাকালীমাতা।
কথিত আছে, একদিন এখানকার বাসিন্দা পুরোহিত দেবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী উত্তর কোন্নগর থেকে গড়ের খানার ওপর দিয়ে হেঁটে আসছিলেন। তিনি সম্ভবত কোনও যজমানের বাড়ি থেকে আসছিলেন। তাঁর বাড়ি ছিল বাঞ্ছারাম মিত্র লেনে। সেই রাস্তায় ঢোকার আগে তিনি দেখতে পেয়েছিলেন এলোকেশী শ্যামলা রঙের এক অপরূপা নারী মূর্তি তাঁর পথ আটকে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে এসেছিল। দেবেনবাবু দেখতে পেয়েছিলেন, ওই নারীমূর্তির অঙ্গ থেকে জ্যোতি বেরোচ্ছে। তিনি চমকে গিয়েছিলেন। ঘোর কাটিয়ে তিনি ওই নারীমূর্তিকে নাকি প্রশ্ন করেছিলেন, 'তুমি কে মা? এইভাবে আমার পথ আটকে কেন দাঁড়ালে?' কিন্তু, সেই অপরূপা নারীমূর্তি কোনও উত্তর না দিয়ে রহস্যের হাসি হেসে কিছুটা দূরে মিলিয়ে গিয়েছিল।
পরে নাকি দেবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী আবার স্বপ্নে ওই নারীমূর্তিকে দেখেছিলেন। সেই স্বপ্নেও তিনি ওই নারীমূর্তিকে একই জায়গায় মিলিয়ে যেতে দেখেছিলেন। এরপর তিনি পরের দিন স্থানীয় বাসিন্দাদের ডেকে তাঁর স্বপ্নের কথা বলেছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দারা এরপর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যেখানে ওই নারীমূর্তি মিলিয়ে গিয়েছে, সেখানেই স্বপ্নে দেখা রূপের আদলে মাটির মূর্তি বানিয়ে দেবীর পুজো করা হবে।
আরও পড়ুন- হাত নয়, মুখ দেখেই বলেন ভূত-বর্তমান, ভবিষ্যৎ! অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন বিশু বাবা আলোড়ন তুলেছেন মাতৃসাধক কমলাকান্তের গ্রামে
তবে, প্রথমবার পুজো মাটির মূর্তি গড়ে করা যায়নি। তাই ঘটেই হয়েছিল। এখন পুজো মূর্তিতে হয়। দেবীর স্থায়ী মন্দির রয়েছে। ওই মন্দিরের জায়গায় আগে বট, অশ্বত্থ, পাকুড় গাছের স্থায়ী জঙ্গল ছিল। আর, সেই সব গাছে প্রচুর শকুন বসে থাকত। ওইখানেই অস্থায়ী মন্দির বানিয়ে দেবীর পুজো শুরু হয়েছিল বলে, দেবীর নাম হয়ে ওঠে শকুনতলা রক্ষাকালী মাতা।
আরও পড়ুন- ৬০০ বছরের পুরোনো জাগ্রত মন্দির, যেখানে এলে মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীরা সুস্থ হয়ে যান একবছরেই!
পুজোর শুরু থেকেই অসংখ্য ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হওয়ায়, দেবীর মাহাত্ম্য ক্রমশ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল। কোন্নগর, নবগ্রাম এবং আশপাশের অঞ্চলের বহু ভক্ত প্রতি বাৎসরিক পূজায় আজও এখানে আসেন। তাঁরা বিশ্বাস করেন, দেবী অত্যন্ত জাগ্রত। এই পুজোর মূর্তি নির্মাণের সময় মাটিতে দুধ এবং দেশী মদ একসঙ্গে মিশিয়ে তৈরি হয় মূর্তি। বিকেল ৫টা ৪৫-এর মধ্যে দেবীর সাজ শেষ করে মৃৎশিল্পীর বাড়ি থেকে তাঁকে মন্দিরে আনা হয়। এই মূর্তিতে দেবীর জিহ্বা দেখতে পাওয়া যায় না।
আরও পড়ুন- মাত্র একমাস! এই কালীবাড়িতে এসে প্রার্থনা করলে তার মধ্যেই পূর্ণ হয় মনস্কামনা
পূজার আগের দিন রাত ১২টার পর থেকে অগণিত মানুষ জল ঢালার (Hindu) জন্য এখানে ভিড় করেন। ভক্তরা গঙ্গায় ডুব দিয়ে জল নিয়ে এসে এখানকার বেদীতে সারারাত ধরে জল ঢালেন। অনেকে আবার মনস্কামনা পূরণের জন্য গঙ্গা থেকে দণ্ডী কাটতে কাটতে মন্দিরে আসেন। সারারাত কয়েকশো পাঁঠাবলি হয় এই মন্দিরে। চলে হোমযজ্ঞ এবং আহুতি। ১০০ ভরি সোনার গয়নায় সাজানো হয় দেবীকে।
আরও পড়ুন- পুজো দিলেই দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা, হাজারো অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী ভক্তরা বংশ-পরম্পরায় ছুটে আসছেন এই মন্দিরে
দেবী সূর্যের মুখ দেখেন না, তাই নিয়মমাফিক দেবীর আগমন হয় সূর্যাস্তের পর। দ্বিতীয় প্রহর শেষ হওয়ার পর পুজো শুরু হয়। পরদিন সূর্যোদয়ের আগেই এই দেবীর মূর্তি বিসর্জন দেওয়া হয়। ভক্তরা সারাবছর এই পুজোর দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। এই পুজোর দিন কোন্নগর হয়ে ওঠে এক পবিত্র তীর্থক্ষেত্র।
কীভাবে যাবেন এই মন্দিরে?
কোন্নগর স্টেশনের পূর্ব দিকে এই মন্দির। স্টেশন থেকে হেঁটে এই মন্দিরে যেতে ১৫ মিনিট লাগে। সোদপুরের দিক থেকে এলে পানিহাটি ঘাটে নেমে নৌকোয় গঙ্গা পেরিয়ে বারোমন্দির ঘাটে নেমে টোটো বা অটো ধরে সহজে এই মন্দিরে পৌঁছনো যায়।