Turmeric & Liver: অনেকেই হলুদকে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং ইমিউন বুস্টিং উপাদান হিসেবে জানেন। কিন্তু সম্প্রতি এক ৫৭ বছরের মার্কিন নারী হলুদের সাপ্লিমেন্ট নিয়মিত খাওয়ার কারণে লিভার এনজাইম বেড়ে যাওয়ায় গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ডাক্তাররা জানান, তাঁর অবস্থা লিভার ফেইলিওরের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল এবং লিভার প্রতিস্থাপন প্রয়োজন হতে পারত।
কীভাবে শুরু হল সমস্যা?
ইনস্টাগ্রামে এক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করার পর মার্চ মাস থেকে ওই মহিলা প্রতিদিন হলুদের ক্যাপসুল সাপ্লিমেন্ট খাওয়া শুরু করেন। উদ্দেশ্য ছিল জয়েন্ট পেইন ও শরীরের প্রদাহ কমানো। কিন্তু কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শুরু হয় —
-
পেট ব্যথা
-
বমি বমি ভাব
-
ক্লান্তি
-
প্রস্রাব কালচে হওয়া
এনবিসি নিউজ অনুযায়ী, প্রচুর জল পান করেও তার ইউরিন কালো হয়ে যাচ্ছিল, যা লিভারের কাজ ব্যাহত হওয়ার লক্ষণ।
আরও পড়ুন- অতিরিক্ত বিশ্রামে হতে পারে মাইগ্রেন, সময়সীমা মানা জরুরি, বলছেন বিশেষজ্ঞ
কারকিউমিন সাপ্লিমেন্ট বনাম খাবারের হলুদ
হলুদের সবচেয়ে সক্রিয় উপাদান কারকিউমিন (Curcumin)। খাবারের হলুদের মধ্যে এর মাত্রা থাকে প্রায় ২-৩%। কিন্তু, সাপ্লিমেন্টের ক্ষেত্রে ঘনত্ব প্রায় ৯৫% পর্যন্ত।
মারেঙ্গো এশিয়া হাসপাতালের চিকিৎসক ড. পুনিত সিংলা, এই প্রসঙ্গে বলেন, 'হলুদের অতিরিক্ত ঘনত্ব শরীরে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যাঁরা পূর্বে লিভার সমস্যায় ভুগেছেন, তাঁদের বেশি করে সতর্ক থাকা দরকার।'
আরও পড়ুন- ওজন বাড়ায় এমন ৬ অভ্যাস, যা অজান্তেই বাড়াচ্ছে আপনার পেটের মেদ, শুনলে চমকে উঠবেন!
কোন লক্ষণ দেখলে সতর্ক হবেন?
অতিরিক্ত হলুদ খেয়ে লিভারে বিষক্রিয়া হলে, তার লক্ষণ হতে পারে:
-
প্রস্রাবের রঙ গাঢ় বা কালচে হয়ে যাওয়া
-
পেট ভারী হয়ে যাওয়া ও গ্যাস হওয়া
-
দুর্বলতা ও অলসতা
-
চোখ বা ত্বকে হলদে ভাব (জন্ডিসের লক্ষণ)
-
বমি বা বমি বমি ভাব
এই লক্ষণগুলি DILI (Drug-Induced Liver Injury)-এর প্রাথমিক ইঙ্গিত হতে পারে।
আরও পড়ুন- বেশি ব্যায়ামে কি রক্তে শর্করা বেড়ে যায়? কতটা বিপদে ডায়াবেটিস রোগীরা? জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ
কতটুকু হলুদ খাওয়া নিরাপদ?
-
প্রতিদিন ১.৫–৩ গ্রাম হলুদ গুঁড়ো (প্রায় আধা চা চামচ) খাবারে ব্যবহার করলে সেটা নিরাপদ।
-
কারকিউমিন সাপ্লিমেন্টের ক্ষেত্রে ৫০০–২০০০ মি.গ্রা. পর্যন্ত খাওয়া যেতে পারে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নয়।
আরও পড়ুন- কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন? এই ৫টি খাবার দূর করতে পারে সমস্যার শিকড়, বলছেন বিশেষজ্ঞরা
বিশেষ সতর্কতা:
-
যদি আপনি ফ্যাটি লিভার, অ্যালকোহলিক লিভার ডিজিজ, বা হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হন, তাহলে সাপ্লিমেন্ট এড়িয়ে চলুন।
-
খাবারের সঙ্গে গোলমরিচ থাকলে কারকিউমিনের শোষণ বাড়ে, তাই খাবারে গোলমরিচের মাত্রাও নিয়ন্ত্রিত রাখা জরুরি।
চিকিৎসকের পরামর্শ কেন জরুরি?
হলুদের সাপ্লিমেন্ট 'প্রাকৃতিক' হলেও তাতে রয়েছে প্রচুর কারকিউমিন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগুলি FDA বা অন্য কোনও আন্তর্জাতিক মেডিকেল অথরিটির দ্বারা স্বীকৃত নয়। তাই নিজের ইচ্ছেমতো হলুদ খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে।
খাবারে যতটুকু হলুদ আছে, সেটুকুই যথেষ্ট
আমরা প্রতিদিন রান্নায় যে পরিমাণ হলুদ ব্যবহার করি, তা আমাদের শরীরের জন্য উপকারি এবং নিরাপদ। হলুদের স্বাস্থ্যগুণ শরীরে পেতে গেলে তাই আলাদা করে সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজন নেই। যদি না চিকিৎসক বিশেষ পরামর্শ দেন, তো।