Exercise and Sugar: ব্যায়াম শরীর ও মনের জন্য উপকারী, এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব ধরনের ব্যায়াম সব মানুষের জন্য উপকারী না-ও হতে পারে। বিশেষ করে যাঁদের রক্তে শর্করার সমস্যা আছে বা যাঁরা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে বেশি ব্যায়াম বিপজ্জনক হতে পারে।
কেন বেশি ব্যায়ামে শর্করা বেড়ে যায়?
সার্টিফাইড ডায়েটিশিয়ান ও ডায়াবেটিস এডুকেটর কণিকা মালহোত্রা বলেন, 'বেশি ব্যায়ামকে শরীর শারীরিক স্ট্রেস বলে মনে করে। তখন অ্যাড্রেনালিন ও কর্টিসল নামে স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ করে। এই হরমোন দুটি লিভারকে গ্লাইকোজেন ভেঙে গ্লুকোজ তৈরি করতে উৎসাহ দেয়, যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়।'
আরও পড়ুন- কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন? এই ৫টি খাবার দূর করতে পারে সমস্যার শিকড়, বলছেন বিশেষজ্ঞরা
এই গ্লুকোজ সাধারণত ব্যায়ামের ৩০-১২০ মিনিটের মধ্যেই তৈরি হয়। যাঁদের শরীরে আগে থেকেই বেশি গ্লুকোজ (১৮০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার-এর চেয়ে বেশি) আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই গ্লুকোজ বৃদ্ধি আরও বেশি কুপ্রভাব ফেলে।
আরও পড়ুন- সকালে খালিপেটে কতটা জল খাবেন? ২ গ্লাসের বেশি নয়, কিডনি বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন জেনে নিন
বেশি অনুশীলন: বিপদের আরেক নাম?
HIIT, ভারী ওজন তোলা বা স্প্রিন্টের মতো ব্যায়ামে ক্যাটেকোলামিন হরমোন নিঃসরণ বেড়ে যায়। এতে গ্লুকোজ আরও বেশি মাত্রায় তৈরি হয়। যাকে শরীরের ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
আরও পড়ুন- চুল পড়া বন্ধ করবে এই তেল! রোজমেরি অয়েলের ৩টি উপকারিতা ও ব্যবহার পদ্ধতি জানালেন বিশেষজ্ঞ
যদি ব্যায়ামের আগে বা পরে ইনসুলিন বা ওষুধের মাত্রার মধ্যে তালমিল না থাকে, তবে ব্যায়াম-পরবর্তী সময়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়, বিশেষ করে রাতের দিকে এটা হয়। এমনকী টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে কেটোএসিডোসিসের ঝুঁকিও বাড়ে। এটা তখনই হয়, যখন রক্তে কিটোন থাকে এবং গ্লুকোজের মাত্রা ২৫০-এর বেশি হয়।
আরও পড়ুন- এইরকম ১০ ভুল কায়দায় চলছে ওজন কমানোর চেষ্টা, সতর্কবার্তা ফিটনেস কোচের
কীভাবে তৈরি করবেন ব্যালান্সড ব্যায়াম রুটিন?
মালহোত্রা বলেন, 'কিছু মাঝারি মানের অ্যারোবিক ব্যায়াম যেমন হাঁটা, সাইক্লিং, সাঁতার বা যোগব্যায়াম — রক্তে শর্করা কম রাখতে এবং A1C নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।'
উচ্চ তীব্রতার ব্যায়াম সপ্তাহে ২-৩ বার ১৫-২০ মিনিটের জন্য করা যেতে পারে, তবে দিনে একাধিক সময় করলে, সেশনের মধ্যে কমপক্ষে ৪৮ ঘণ্টার বিরতি রাখাই উচিত।
সতর্কতামূলক পরামর্শ:
-
ব্যায়ামের আগে ও পরে গ্লুকোজ পরীক্ষা করান।
-
রক্তে শর্করা যদি ১০০mg/dL-এর নীচে হয়, তবে ব্যায়ামের আগে ১৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট খান।
- বেশি ব্যায়াম করার আগে শরীরে কিটোন থাকলে, ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন।
-
গ্লুকোজ মনিটরিং ডিভাইস ব্যবহার করুন যাতে শরীরের পরিস্থিতি সবসময় জানা যায়।
এমনিতে ব্যায়াম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কিন্তু, অতিরিক্ত বা অনিয়ন্ত্রিত বেশি ব্যায়াম হঠাৎ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়াতে পারে, হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা হরমোনাল সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই সঠিক ডায়েট, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং গ্লুকোজ মনিটরিং-এর মাধ্যমে একটি সুস্থ ব্যায়ামের রুটিন তৈরি করা জরুরি। যাতে ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে ঠিকঠাক লড়াই করা সম্ভব হয়।