Vidyasundar Kali Temple: দেবী এখানে অমর প্রেমকাহিনির সাক্ষী! পরিচিত প্রেমিক যুগলের নামেই

Vidyasundar Kali Temple: বিদ্যাসুন্দর কালী মন্দির এক অমর প্রেমকাহিনির সাক্ষী। কথিত আছে, বিদ্যা ও সুন্দরের প্রেমকে রক্ষা করতে দেবী কালী স্বয়ং সহায়তা করেছিলেন।

Vidyasundar Kali Temple: বিদ্যাসুন্দর কালী মন্দির এক অমর প্রেমকাহিনির সাক্ষী। কথিত আছে, বিদ্যা ও সুন্দরের প্রেমকে রক্ষা করতে দেবী কালী স্বয়ং সহায়তা করেছিলেন।

author-image
Chinmoy Bhattacharjee
New Update
Vidyasundar Kali Temple Bardhaman

Vidyasundar Kali Temple: বিদ্যাসুন্দর কালী মন্দির।

Vidyasundar Kali Temple Bardhaman: বাংলার বুকে ছড়িয়ে আছে নানা কিংবদন্তি, আর তেমনই এক অলৌকিক ইতিহাসের সাক্ষী বিদ্যাসুন্দর কালী মন্দির, যা অবস্থিত বর্ধমান জেলার তেজগঞ্জে। এই মন্দির শুধু দেবভক্তির স্থান নয়, এটি এক অমর প্রেমকাহিনির প্রতীক—রাজকুমারী বিদ্যা ও পূজারি সুন্দর-এর সেই চিরন্তন প্রেমগাথা আজও এখানে মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

Advertisment

মন্দিরের উৎপত্তি ও অবস্থান

২৫০ বছর আগে, বর্ধমানের মহারাজা তেজচাঁদের আমলে এই অঞ্চলে ছিল ঘন জঙ্গল, দামোদর নদীর তীরে তেজগঞ্জ নামের সেই এলাকায় এক প্রাচীন কালী মন্দির ছিল। কথিত আছে, রাজা তেজচাঁদ নিয়মিত এখানে পুজো দিতে আসতেন এবং সেই সময় দেবী ছিলেন দক্ষিণ শ্মশানকালী নামে পরিচিত। একসময় এই মন্দিরে অপরাধীদের বলি দেওয়া হত, কিন্তু পরবর্তীতে রাজ আদেশে সেই প্রথা বন্ধ হয়ে যায়।

আরও পড়ুন-  রাজ্যের এই স্থাপত্যের সঙ্গে জডিয়ে সম্রাট শাহজাহানের ছেলের নাম, দেখতে যেতে পারেন সহজেই

Advertisment

এই কালীমন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক প্রেমকাহিনি। সেই যুগলের নাম—বিদ্যা ও সুন্দর। সুন্দর ছিলেন মন্দিরের পূজারি, আর রাজকন্যা বিদ্যা প্রতিদিন ফুলের মালা গাঁথতেন মায়ের পুজোর জন্য। একদিন পূজারি সুন্দর জানতে পারেন যে রাজকুমারী নিজে মায়ের জন্য ফুলের মালা তৈরি করেন। কৌতূহলে তিনি সুড়ঙ্গপথে রাজবাড়িতে পৌঁছে যান এবং প্রথম দর্শনেই দু’জনের মধ্যে জন্ম নেয় প্রেম।

আরও পড়ুন- টিফিনটা করুন জমজমাট! মুচমুচে চিজি ফিশ ফ্রাই সহজে বানান ঘরেই

রাজা তেজচাঁদ যখন তাঁদের প্রেমের কথা জানতে পারেন, তখন প্রচণ্ড রেগে গিয়ে আদেশ দেন—বিদ্যা ও সুন্দরকে দেবীর সামনে বলি দিতে হবে। রাজার সৈন্যরা তাঁদের মন্দিরে নিয়ে আসে, আর দেবীর সামনে হাঁড়িকাঠে মাথা রাখেন তাঁরা। তখন ঘটে এক অলৌকিক ঘটনা—আকাশে কালো মেঘ, প্রচণ্ড ঝড়, বিদ্যুৎ চমক, আর সেই অন্ধকারে দুই প্রেমিক-প্রেমিকা অদৃশ্য হয়ে যান। কেউ আর তাঁদের খুঁজে পায়নি। এরপর থেকেই এই মন্দিরে নরবলি প্রথা বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকেই দেবী পরিচিত হন বিদ্যাসুন্দর কালী নামে—যিনি প্রেম ও ত্যাগের রক্ষাকারী।

আরও পড়ুন- কলকাতার সবচেয়ে সস্তা লাইটের বাজার, দীপাবলির আগেই জমজমাট!

আজও এই মন্দিরে প্রাচীন রীতিতেই পুজো হয়। দেবী এখানে পাষাণ মূর্তিরূপে বিরাজমান। প্রতিদিন আতব চালের ভোগ ও মাছ নিবেদন করা হয় দেবীকে। সন্ধ্যায় আরতি হয়, আর স্থানীয় ভক্তরা মায়ের নিত্যসেবায় অংশ নেন। কার্তিক মাসে ধুমধামের সঙ্গে কালীপুজো অনুষ্ঠিত হয়। এদিন বিদ্যা ও সুন্দরের প্রেমের পূর্ণতার প্রতীক হিসেবে বিশেষ অর্ঘ্য দেওয়া হয়। ভক্তদের বিশ্বাস, দেবী বিদ্যাসুন্দর কালী আজও সত্যিকারের প্রেম, ত্যাগ ও বিশ্বাসের প্রতীক।

আরও পড়ুন- এই ৫ সুস্বাদু খাবার কেবল ভারতেই মেলে, খেতে কিন্তু দুর্দান্ত!

বর্ধমান স্টেশন থেকে কার্জন গেট হয়ে বীরহাটা পেরিয়ে সদরঘাট রোড ধরে তেলিপুকুর মোড় পর্যন্ত যেতে হবে। সেখান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার জাতীয় সড়ক ধরে এগোলে বাঁ-দিকে পড়বে তেজগঞ্জ। এখানেই অবস্থিত এই ঐতিহাসিক বিদ্যাসুন্দর কালী মন্দির।

প্রাচীন প্রেমকাহিনীর সাক্ষী এই ঐতিহাসিক মন্দির। রায়গুণাকর ভরতচন্দ্রের কাব্যে এর উল্লেখ রয়েছে। ত্যাগ, প্রেম ও বিশ্বাসের প্রতীক এই মন্দির। এখানকার পরিবেশ শান্ত। ঐতিহ্যবাহী পূজা আয়োজিত হয়। আজও স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন, দেবী কালী যেভাবে বিদ্যা ও সুন্দরকে রক্ষা করেছিলেন, ঠিক তেমনই তিনি ভক্তদের ভালোবাসা ও বিশ্বাসকে রক্ষা করেন।

Kali Temple