/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/13/kishore-kumar-2025-10-13-02-38-07.jpg)
Kishore Kumar: কিশোর কুমার, তাঁর মা গৌরী দেবী ও কিশোর কুমারের বড় ছেলে অমিত কুমার।
Kishore Kumar: প্রথাগত সংগীত শিক্ষা ছাড়াই যিনি হয়ে উঠেছিলেন বলিউডের এক অনন্য প্রতিষ্ঠান— তিনি কিশোর কুমার। এক জন গায়ক, অভিনেতা, সংগীত পরিচালক, প্রযোজক, পরিচালক, লেখক, এমনকি কৌতুকাভিনেতা— সব মিলিয়ে এক ব্যক্তির মধ্যে যেন এক আস্ত বিনোদন জগতের মহাবিশ্ব।
খণ্ডোয়া থেকে মুম্বই: এক যাত্রার শুরু
১৯২৯ সালের ৪ অগস্ট, মধ্যপ্রদেশের খণ্ডোয়ায় জন্ম কিশোর কুমারের। তাঁর আসল নাম ছিল আভাস কুমার গঙ্গোপাধ্যায়। বাবা কুঞ্জলাল ছিলেন পেশায় আইনজীবী, মা গৌরীদেবী গৃহিণী। তিন দাদার মধ্যে বড় অশোক কুমার তখনই হিন্দি ছবির জনপ্রিয় নায়ক। তাঁর অনুপ্রেরণাতেই ছোট ভাই আভাস মুম্বইয়ের বম্বে টকিজে যোগ দেন— প্রথমে কোরাস গায়ক হিসেবে। এখান থেকেই শুরু হয় এক কিংবদন্তির গল্প। দাদা অশোক কুমারের হাত ধরেই কিশোরের প্রথম অভিনয়— ১৯৪৬ সালের 'শিকারি' ছবিতে। ১৯৪৮ সালে 'জিদ্দি'-তে প্রথম প্লেব্যাক করেন। কিন্তু শুরুটা খুব সহজ ছিল না— প্রথম দিকের বেশিরভাগ ছবিই বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। তবু তিনি থামেননি।
আরও পড়ুন- রাজ্যের এই স্থাপত্যের সঙ্গে জডিয়ে সম্রাট শাহজাহানের ছেলের নাম, দেখতে যেতে পারেন সহজেই
গানের প্রতি তাঁর প্রেমই তাঁকে আলাদা করে তোলে। তাঁর প্রিয় শিল্পী ছিলেন কে এল সায়গল ও আহমেদ রুশদি। এস. ডি. বর্মনের এক উপদেশ তাঁর জীবন বদলে দেয়— 'নিজের কণ্ঠে গান করো।' সেই থেকেই জন্ম নেয় কিশোরের স্বকীয় স্টাইল— ইয়োডলিং। পাশ্চাত্য প্রভাব মিশে যায় ভারতীয় সুরে। রূপ তেরা মস্তানা’, ‘জিন্দেগি এক সাফর’, ‘পল পল দিল কে পাস’, ‘মেরে সপনো কি রানি’— প্রতিটি গানেই যেন এক নতুন জাদু।
আরও পড়ুন- টিফিনটা করুন জমজমাট! মুচমুচে চিজি ফিশ ফ্রাই সহজে বানান ঘরেই
রাজেশ খন্না থেকে অমিতাভ বচ্চন— কিশোর কুমারের কণ্ঠই যেন তাঁদের আত্মা হয়ে উঠেছিল। ‘আরাধনা’, ‘আমার প্রেম’, ‘দন’, ‘আনন্দ’— এই ছবিগুলির সাফল্যের পেছনে তাঁর কণ্ঠের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১৯৭৫-৭৭ সালের জরুরি অবস্থায় কিশোর কুমার সরকার-নির্দেশিত প্রচারে অংশ নিতে অস্বীকার করেন। ফল— অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো ও দূরদর্শনে নিষিদ্ধ হয়ে যায় তাঁর গান। তবু তিনি আপস করেননি। নিজেকে নিজের মতোই রেখেছিলেন— স্বাধীন ও খামখেয়ালি।
আরও পড়ুন- কলকাতার সবচেয়ে সস্তা লাইটের বাজার, দীপাবলির আগেই জমজমাট!
রুমা গুহঠাকুরতা থেকে মধুবালা, যোগিতা বালি থেকে লীনা চন্দভরকর— প্রেমে ভরা তাঁর জীবনও ছিল ঝড়ো। মধুবালার সঙ্গে সম্পর্ক যেমন ছিল রোম্যান্টিক, তেমনি বেদনাও গভীর। শেষ জীবনে লীনার সঙ্গে কিছুটা শান্তি পেলেও, তাঁর ভেতরের নিঃসঙ্গ মানুষটা চিরকাল একা থেকে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন- কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, শান্তিনিকেতন থেকে বিশ্ব মঞ্চ, মুগ্ধ করেছেন গানে!
১৩ অক্টোবর, ১৯৮৭। সকালে হালকা অস্বস্তি বোধ করছিলেন কিশোর। লীনা ডাক্তার ডাকতে চাইলে হাসতে হাসতেই বলেছিলেন, 'তুমি যদি ডাক্তার ডাকো, আমার কিন্তু হার্ট অ্যাটাক হবে!' কয়েক মিনিট পরেই সত্যি হয়ে যায় তাঁর কথা— হার্ট অ্যাটাকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সুরের এই জাদুকর। আজ তাঁর প্রয়াণের তিন দশকেরও বেশি সময় কেটে গেছে। কিন্তু তাঁর গান, হাসি, পাগলামি— সবই আজও নতুন প্রজন্মের কাছে প্রেরণা। তিনি একাই প্রমাণ করেছিলেন— প্রতিভা কখনও নিয়মে বাঁধা থাকে না। তাই কিশোর কুমার আজও শুধু এক নাম নয়, এক অনুভূতি।