/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/29/yogindranath-sarkar-1-2025-10-29-01-21-01.jpg)
Yogindranath Sarkar: যোগীন্দ্রনাথ সরকার।
Yogindranath Sarkar: 'অ-য়ে অজগর' থেকে 'হারাধনের ১০টি ছেলে'। কয়েক দশক আগে অবধি, বাংলার শিশুশিক্ষা বিদ্যাসাগর রবীন্দ্রনাথের পাশাপাশি যোগীন্দ্রনাথের সরকারের এই সব ছড়ার মাধ্যমেই শুরু হত। তাঁর ছড়াগুলো শুধু বর্ণ শেখায়নি, বরং শিখিয়েছে ভাষার মজা, শেখার আনন্দ। আর, সেই কারণে এই ছড়াগুলির স্রষ্টা যোগীন্দ্রনাথ সরকার (Yogindranath Sarkar)— বাংলা শিশুসাহিত্যের এক অবিস্মরণীয় নাম।
জন্ম ও শৈশব
১৮৬৬ সালের ২৮ অক্টোবর, চব্বিশ পরগনার জয়নগরে জন্মগ্রহণ করেন যোগীন্দ্রনাথ সরকার। তাঁর আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশের যশোরে। পিতা নন্দলাল দেব সরকার ও মাতা থাকমণি দেবী। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন দুরন্ত, কৌতূহলী এবং গল্পপ্রিয়।
আরও পড়ুন- বাংলার গুপ্ত বৃন্দাবন, টেরাকোটা আর ভক্তির মিলন! এর ইতিহাসটা কী?
শিক্ষকতা থেকে শিশুসাহিত্য
অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে তিনি উচ্চশিক্ষা সম্পূর্ণ করতে পারেননি। পরে সিটি কলেজিয়েট স্কুলে মাত্র ১৫ টাকায় শিক্ষকতা শুরু করেন। শিক্ষার্থীদের নীরস পাঠ্যবই দেখে তিনি বুঝেছিলেন— শেখার আনন্দ না থাকলে শিক্ষা বৃথা। এই উপলব্ধি থেকেই জন্ম নেয় তাঁর শিশুসাহিত্যজগৎ।
আরও পড়ুন- মাত্র ১টা পরিক্রমা, তাতেই বদলে যেতে পারে ললাটলিখন, কীভাবে?
সাহিত্যজীবন ও সৃষ্টিকর্ম
যোগীন্দ্রনাথ সরকারের কলমে শিশুসাহিত্য পেয়েছিল এক নতুন দিক। তাঁর ছড়া ও কবিতাগুলো যেমন মজাদার, তেমনই শিক্ষামূলক— ‘দুষ্টু তিনু’, ‘পেটুক দামু’, ‘সাধে বাদ’, ‘হারাধনের দশটি ছেলে’ — প্রতিটি রচনাই সময়ের সীমানা ছাড়িয়ে আজও জনপ্রিয়।
আরও পড়ুন- কীভাবে, কখন দেখবেন কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজো, জানুন অঞ্জলির সময়সূচি!
উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ
যোগীন্দ্রনাথ সরকারের হাসিখুশি (১৮৯৭) – বর্ণ পরিচয় করানোর জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও রয়েছে- হাসি ও খেলা (১৮৯১), ছড়া ও ছবি, রাঙাছবি, গল্পসঞ্চয়, শিশু চয়নিকা, হিজিবিজি, বনে জঙ্গলে, পশুপক্ষী প্রভৃতি গ্রন্থ। তিনি সম্পাদনা করেছেন একাধিক শিশু-পত্রিকা যেমন ‘মুকুল’, ‘সখা’, ‘বালক’, ‘সন্দেশ’ ইত্যাদি। ‘মুকুল’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে তাঁর অবদান আজও অমলিন।
আরও পড়ুন- ‘খুকু ও খোকা’-র কবি! প্রয়াণদিবসে স্মরণে অন্নদাশঙ্কর, জানেন কবির জীবনের এই দিকগুলোর কথা?
অভিনব শিক্ষাদান পদ্ধতি
যোগীন্দ্রনাথ প্রথম সেই শিক্ষক, যিনি ছবির মাধ্যমে অক্ষর শেখানোর পদ্ধতি চালু করেন। ‘অ’ মানে ‘অজগর’, ‘আ’ মানে ‘আম’— এই মজাদার উপস্থাপনায় শিশুরা শিখতে ভালোবাসত।
পৌরাণিক ও শিক্ষামূলক রচনা
তিনি ২১টি পৌরাণিক কাহিনি শিশুদের উপযোগী করে রচনা করেন— যেমন শকুন্তলা, সাবিত্রী সত্যবান, ছোটদের রামায়ণ (১৯১৮), ছোটদের মহাভারত (১৯১৯), কুরুক্ষেত্র (১৯০৯), ধ্রুব (১৯১৫) ইত্যাদি। তাছাড়া জ্ঞানমুকুল, চারুপাঠ, শিক্ষাসঞ্চয় ইত্যাদি শিক্ষামূলক বইও তিনি রচনা করেন।
সাহিত্যজগতে মূল্যায়ন
বুদ্ধদেব বসু লিখেছিলেন— 'বাংলার মাটিতে এমন একজন মানুষ অন্তত জন্মেছেন, যিনি একান্তভাবে ছোটদের লেখক — সেই সব ছোটদের, যারা কেঁদে কেঁদে পড়তে শিখে, পরে হেসে হেসে বই পড়ে।' এই মন্তব্যই প্রমাণ করে, যোগীন্দ্রনাথ সরকারের ভূমিকা বাংলার শিশুশিক্ষার কাছে কতটা!
শেষ জীবন ও উত্তরাধিকার
১৯২৩ সালে উচ্চরক্তচাপজনিত অসুস্থতায় আক্রান্ত হন তিনি। শরীরের একপাশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হলেও লেখালেখি চালিয়ে যান। ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর শেষ সংকলন ‘গল্প সঞ্চয়’। ১৯৩৭ সালের ২৬ জুন তিনি প্রয়াত হন। তবে আজও যখন কোনও শিশু 'অ অজগর' উচ্চারণ করে পড়ে, তখনই প্রমাণ হয়— যোগীন্দ্রনাথ সরকার এখনও বাংলার শৈশবের অংশ।
/indian-express-bangla/media/agency_attachments/2024-07-23t122310686z-short.webp)
 Follow Us
 Follow Us