Anubrata Mondal: 'আমার কথাগুলো জোরে, মেজাজে গুন্ডা-গুন্ডা ভাব', নিজেকে নিয়ে কী বলেছিলেন অনুব্রত?

TMC-Anubrata Mondal: কয়েক বছর আগে বীরভূম জেলা তৃণমূলের তৎকালীন দোর্দণ্ডপ্রতাপ সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের এই বিশেষ সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়েছিল।

TMC-Anubrata Mondal: কয়েক বছর আগে বীরভূম জেলা তৃণমূলের তৎকালীন দোর্দণ্ডপ্রতাপ সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের এই বিশেষ সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়েছিল।

author-image
Joyprakash Das
আপডেট করা হয়েছে
New Update
anubrata-mondal cover

Anubrata Mondal: অনুব্রত মন্ডল।

Birbhum TMC-Anubrata Mondal: অনুব্রত মন্ডল। বঙ্গ রাজনীতিতে অত্যন্ত পরিচিত একটি মুখ। কারণ যাই হোক না কেন, রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের একসময়ের ডাকাবুকো এবং ক্ষমতাবান জেলা সভাপতি ছিলেন তিনিই। তিনি বিধায়ক বা সাংসদ নন। এমনকী জেলা পরিষদের কর্তাও নন। অথচ বিতর্ক কখনও তাঁর পিছু ছাড়েনি। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগেরও কোনও অন্ত নেই।  কিন্তু তিনি নির্বিকার। তাঁর বক্তব্যের সারমর্ম, মিডিয়ার একাংশ তাঁকে ভিলেন বানিয়েছে। আসলে তিনি একেবারে একজন মানুষের পাশে থাকা রাজনীতিক। তাঁর চোখ দুটো লাল হয়ে যায় বলে লোকে গুন্ডা ভাবে। এই যা।

Advertisment

একসময়ে নির্বাচনে গুড়-বাতাসা থেকে পুলিশকে বোমা মারা, অনেক ধরনের মন্তব্যের অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। যখন তখন হুমকি তাঁর কাছে নাকি নস্যি। একবার রাজ্যের এক মন্ত্রীকে পাশে বসিয়ে পুলিশকে দিয়ে এক BJP কর্মীকে মিথ্যে গাঁজা কেস দেওয়ানোর ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় অন্য মাত্রা পেয়েছে। তবে অনুব্রত মণ্ডল যে একেবারে নিরীহ, হিংসা বা রাগের সঙ্গে তাঁর বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে কথা বলার সময় বারে বারে সেকথাই বোঝানোর চেষ্টা করলেন বীরভূমের অবিসংবাদী নেতা।

আরও পড়ুন: "গাঁজা কেসে গ্রেফতার করিয়ে দে”- নয়া ফরমান অনুব্রত মন্ডলের

অনুব্রতর দাবি, “আমাদের দলীয় কার্যালয়ে কী মিটিং হয়েছে, সেখানে সাংবাদিক তো কেউ যায়নি। আমার দলের ভেতর কি মিটিং হবে তা সাংবাদিকদের কেনই বা বলবো? এটা সম্পূর্ণ একটা গট-আপ। আউসগ্রামে উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায় খুন হয়েছে। সেই মামলায় জয়দেব মন্ডল আসামী। ও কিন্তু গাঁজার ব্য়বসা করে। আমি টগরকে (আউসগ্রামের তৃণমূল নেতা) বললাম বুঝিয়ে বল গিয়ে। মেয়েটা ভদ্র ঘরের মেয়ে, তুমি এসব ব্যাপারে থেকো না। গাঁজার ব্যবসা করে। ওকে পুলিশ যে কোনও দিন ধরে নেবে। তুমি বিধায়ক। নলেজে নিশ্চয় থাকবে। গাঁজার ব্যবসা করে ধরিয়ে দাও, আর মেয়েটাকে সাবধান করে দাও। এইটা কথা দলের ভেতরের। পুরো বিষয়টাতে রং চড়িয়ে বলে দেওয়া হয়েছে। আমি একটু কড়া মুডে় এমএলএকে বলেছি। এই তো।"

Advertisment

আরও পড়ুন- Anubrata Mondal: IC-কে গালাগালিতে রেগে কাঁই দলেরই শীর্ষ নেতৃত্ব, অনুব্রতকে ডেডলাইন বেঁধে কড়া হুঁশিয়ারি

সভায় বসে আইসি ও এসপিকে ফোন করার ভাইরাল ভিডিও, তার নানা ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। তাঁর দাবি, “একে তো জয়দবে মন্ডল ধরা পড়েনি। তার ওপর তার আত্মীয়রা গাঁজার ব্যবসা করে। আমি মিটিং-এ বলেছি, (টগর) তুমি বলো, নাইলে আমি বলব। এতে খারাপ কথা কী আছে বলুন? এসপিকে ফোনে জানিয়ে দাও। ওই মেয়েটি কিন্তু ভদ্রঘরের মেয়ে হবে। ওর সঙ্গে ডাইরেক্ট গিয়ে দেখা কর। আমার মনে হয় জড়িত নয়। ওগুলো সব কেটে দিয়েছে। কি বলবো বলুন।’’ যত দোষ ওই মিডিয়ার। এটাই মূল বক্তব্য। তবে অনুব্রত যে ব্যাখ্যাই দিন না কেন, তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন, দলেরই কেউ এই কাজ করেছে। এরপর বীরভূমে দলের কোনও সভায় মোবাইল নিয়ে ঢোকা যাবে না। তিনি বলেন, “জেলা কমিটির মিটিং, বিধায়করা আছেন, ব্লক এবং শাখা সংগঠনের সভাপতিরা আছেন। কেউ মোবাইলে তুলে রেখেছে। ভাল লেগেছে, ছেড়ে দিয়েছে। এবার থেকে আমি সতর্ক। সভায় কারও মোবাইল থাকবে না।"

আরও পড়ুন- Anubrata Mondal: IC-কে যাচ্ছেতাই ভাষায় গালাগালি, ফের খবরের শিরোনামে অনুব্রত মণ্ডল


অনুব্রত মন্ডল মানে রাজ্যের এক মাস্তান। অনেক অভিযোগ তো! ঠান্ডা গলায় এর জবাবে তিনি বলছেন, “আপনি যদি বীরভূম, মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম, আউসগ্রাম যান। আমার বদনাম করুন, কোনও গ্রামে কিন্তু মানুষ মানবে না। সঙ্গে সঙ্গে রিয়্যাকশন দেখবেন। ওরা বলবে আপনি ওঁর কী খারাপ দেখেছেন বলুন। প্রতিবাদ করবে। কী জানেন ওর সম্পর্কে বলুন। আমি একটা আরশোলা, পিঁপড়ে মারি নাই জানেন? মিডিয়া আমাকে ভিলেন বানিয়েছে।“

দলের সুপ্রিমো কখনও কিছু বলেন না? তাঁর কথায়, “দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) ছোট থেকেই আমাকে চেনেন। আমার সঙ্গে দিদির সম্পর্কটা কিন্তু আজকের নয়। দিদি যখন কলেজ ছাত্রী, তখন থেকে।  মিডিয়া ভেবেছিল মাইলেজ পাবে। আমি অহঙ্কার করি না। রাজনীতিটা ভাল বুঝি। মানুষ কী চাইছে। মানুষ কী বলতে চাইছে।“

আপনার হাঁটাচলা-চেহারা দেখেও অনেকে ভয় পান। তা অবশ্য স্বীকার করলেন বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি। তিনি বলেন, “হ্যাঁ। মাঝে মাঝে আমার কথাগুলো জোরে হয়। চোখ দুটো একটু লাল হয়। এই জন্য ভাবে বোধহয় একটা গুন্ডা গুন্ডা ভাব। যেটা ঘটনা সেটাই বলছি। এখন আমি খুব চিন্তায় আছি আমার স্ত্রীকে নিয়ে। মনমেজাজ খুব ভাল নেই। খুব খারাপ। একটা মেয়ে। সে বড় হচ্ছে। এত মানসিক চিন্তায় ভুগছি না, বুঝিয়ে বলতে পারব না। আমরা তো মায়া-দয়ার ওপর বড় হয়েছি। সাময়িক গুন্ডামি চলবে, সাময়িক মারধর চলবে। অনবরত চলবে না।"

অনুব্রত মন্ডলের মত ক্ষমতাশীল জেলা সভাপতি তৃণমূলে নেই। কোনও জনপ্রতিনিধি না হয়েও এটা কী করে সম্ভব? তাঁর বক্তব্য, “সব সভাপতিদের বলে থাকি, ঘরে বসে রাজনীতি হয় না। আমি একেবারেই ঘরে বসে রাজনীতি করি না। পঞ্চায়েত ভোটের আগে টার্গেট বেঁধে দিয়েছিলাম। সভাগুলোতে লোক নিয়ে আসতে হবে। দিদি যদি ২৪ ঘণ্টা সময় দেয় আদিবাসীদের সভা করবে বলে, তাহলে ৪ লক্ষ আদিবাসী যোগাড় করে ফেলবো। প্রদ্যুৎদা (গুহ) যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি থাকাকালীন আমাকে বলেছিলেন, কেষ্ট তুই বড় রাজনীতিবিদ হবি। কেউ কেউ তো গান্ধির সঙ্গেও তুলনা করেছেন।"

আরও পড়ুন: নির্বাচনী কৌশল শিখতে ভিন রাজ্যে পাড়ি বিজেপি নেতা-কর্মীদের

আপনার নামে ভুরি ভরি অভিযোগ। কী বলছেন অনুব্রত মন্ডল? “আমি এসব খুব খারাপভাবে দেখি। গুড়-বাতাসা নিয়ে আমি যে তথ্য বলেছি সেটা কিন্তু গ্রাম-গঞ্জের স্বাভাবিক কথা। তখনকার গ্রামে মিষ্টির দোকান ছিল না। চারটে মন্ডা করে রাখতো। সব বাড়িতেই কিন্তু বয়াম ভর্তি বাতাসা থাকতো। কেউ এলেই এক গ্লাস জল, সঙ্গে দুটো বাতাসা দেওয়া হত। দেখা যেত দু-এক গ্রাম পার করে অন্য গ্রামে এই দোকান থাকতো। তাই বাড়িতে গুড় বাতাসা থাকতো। এগুলো যদি খারাপভাবে নেয় তাহলে আমার কিছু করার নেই। দুর্গা পুজোয় চড়াম চড়াম ঢাক না বাজলে দুর্গা পুজো মানায় না। ঢাকে কাঠির আওয়াজ না হলে মানায়! সেটাকেও অন্যভাবে নিচ্ছে। কি আর বলবো?"

আরও পড়ুন- Hilsa: বাজার ছেয়েছে নকল ইলিশে, থলে ভরে তাই কিনছেন না তো? আসল চিনবেন কীভাবে?

পুলিশকে বোমা মারার কথা বলেছিলেন। সেটাও কী মিথ্যা ছিল? বীরভূমের বেতাজ বাদশা বলেন, “ওটা আমি বলতে চাইনি। প্রকৃত দুষ্কৃতীরা পুলিশের গাড়িতে বোমা মেরেছিল। ওইটা আমি বলতে গিয়েছিলাম যে তোমরা পুলিশকে যে বোমা মারছো। পুলিশের ওপর বোমা মারাটা আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে ডায়াসে দাঁড়িয়ে আমি বলেছিলাম আমি ওটা বলতে চাইনি। আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। তোমরা বুঝিয়ে বল। সেই বক্তব্যটা কিন্তু কেটে দিয়েছে।"

anubrata mondal tmc Birbhum Bengali News Today