East Bengal FC: ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান (Mohun Bagan)। কলকাতা ফুটবলের এই দুই স্তম্ভ যে বাঙালির কাছে একটা আবেগ, সেটা আর নতুন করে বলে দেওয়ার দরকার নেই। আজও কলকাতা ডার্বি হলে স্তব্ধ হয়ে যায় শহর তিলোত্তমা। মাছের বাজারে ইলিশ-চিংড়ির দর ওঠে তরতরিয়ে। এই দুটো ক্লাব বাংলার বহু ফুটবলারকে জন্ম দিয়েছে। চুনী গোস্বামী, শৈলেন মান্না, পিকে ব্যানার্জি আরও কতই না নাম রয়েছে এই তালিকায়। তবে এই তালিকায় এমনও অনেকে রয়েছেন যাঁরা মোহনবাগান কিংবা ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের হয়ে একবার খেলার পর ধ্রুবতারার মতো উজ্জ্বল হয়ে গিয়েছেন। তেমনই একজন ফুটবলার হলেন সুশীল ভট্টাচার্য (Sushil Bhattacharya)।
যদি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের 'ঘরের ছেলে' বলতে কাউকে বোঝায়, তাহলে সবার আগে এই সুশীলবাবুর নামই বাংলার ফুটবল ইতিহাসে উঠে আসবে। পরাধীন ভারতের বাগডোগরায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন সুশীল ভট্টাচার্য। ছোটবেলায় ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেট এবং হকি খেলারও শখ ছিল তাঁর। ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার বছর ২ আগে তিনি যোগ দিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল। চার বছর টানা লাল-হলুদ ব্রিগেডের হয়ে পারফরম্য়ান্স করেন তিনি। কলকাতা ফুটবল লিগ জয়ের পাশাপাশি আইএফএ শিল্ডও জিতেছিলেন তিনি।
East Bengal FC: রামসঙ্গার এক কথাতেই ঝড় ইস্টবেঙ্গলে! কী বার্তা দিলেন লাল-হলুদের নয়া 'মিডফিল্ড জেনারেল'?
সেইসময় ইস্টবেঙ্গল ফুটবল ক্লাব প্রধানত ৩-২-৫ ফরমেশনে দল মাঠে নামাত। সেই ছকে দুই প্রান্তের উইঙ্গার হিসেবে সুশীল ভট্টাচার্য যথেষ্ট নজর কেড়েছিলেন। নজরকাড়া পারফরম্য়ান্সের দৌলতেই ১৯৪৬ সালে জাতীয় ফুটবল দলে ডাক পেয়েছিলেন। শোনা যায়, এই চার বছরের মধ্যেই নাকি গোষ্ঠ পাল এবং অভিলাষ ঘোষ তাঁকে মোহনবাগানের হয়ে খেলার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু, হাসিমুখে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
East Bengal New Footballer: আবার 'ভারতসেরা' হবে ইস্টবেঙ্গল! মাঝমাঠের রাজা যোগ দিলেন লাল-হলুদে
বেশ কয়েক বছর আগে সুশীল ভট্টাচার্য একটি ইন্টারভিউয়ে বলেছিলেন, 'আমি যখন ইস্টবেঙ্গলের হয়ে ফুটবল খেলতাম, সেইসময় লাল-হলুদের ফরোয়ার্ড লাইনে কার্যত রাজত্ব করতেন আপ্পরাও, ভেঙ্কটেশ, ধনরাজ, সোমান্না এবং সুনীল ঘোষ। পরে অবশ্য যোগ দেয় আহমেদ খান এবং আবিদ। সেইসময় ইস্টবেঙ্গল সাধারণত ৫ ফরোয়ার্ড নিয়ে মাঠে নামত। সেই জায়গায় আমি রাইট এবং লেফট উইংয়ে খেলতাম।'
১৯৪৯ সালে ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে ইস্টার্ন রেলওয়ে ফুটবল দলে যোগ দিয়েছিলেন সুশীল ভট্টাচার্য। কিন্তু, সেটা একেবারেই অল্প সময়ের জন্য। ১৯৫১ সালে আয়োজিত ডুরান্ড কাপের ঠিক আগে আবারও তিনি ইস্টবেঙ্গলে কামব্যাক করেছিলেন। এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে মশালবাহিনী ২-১ গোলে রাজস্থান ক্লাবকে হারিয়ে দিয়েছিল।
East Bengal FC: লাল-হলুদ জার্সি পরতে আর তর সইছে না! রায়নার এক কথাতেই খুশির ঢেউ ইস্টবেঙ্গলে
ইস্টবেঙ্গল ফুটবল ক্লাবের প্রথম পেশাদার কোচ
যাইহোক, খেলোয়াড় হিসেবে অবসর গ্রহণ করার পর ফুটবল কোচ হিসেবেও ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে অমূল্য সাফল্য এনে দিয়েছিলেন এই সুশীল ভট্টাচার্য। প্রসঙ্গত, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রথম হেড কোচ ছিলেন তিনি। ১৯৬১ সালে সুশীলবাবুকে কোচ হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। যদিও তিনি মাত্র এক মরশুমই ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে কোচিং করিয়েছিলেন। তবে লাল-হলুদ ক্যাবিনেটে এনে দিয়েছিলেন এক মস্ত বড় সাফল্য। প্রায় ৯ বছর পর কলকাতা ফুটবল লিগ জয় করেছিল ইস্টবেঙ্গল। এর পাশাপাশি জিতেছিল এইচ কে মুখার্জি শিল্ডও। ১৯৬২ সালে জিতেছিল রোভার্স কাপও। পরের বছর পরিতোষ চক্রবর্তীর হাতে কোচিংয়ের দায়িত্ব তুলে দিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল।
East Bengal FC News: 'গর্বিত করব লাল-হলুদ সমর্থকদের...', ইস্টবেঙ্গলে যোগ দিয়েই হুঙ্কার মার্তন্ড রায়নার
শুধুমাত্র ইস্টবেঙ্গল ক্লাবই নয়, ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলের প্রথম কোচও ছিলেন এই সুশীল ভট্টাচার্য। ১৯৭৫ সালে প্রথমবার তাঁর হাতে এই দায়িত্ব তুলে দিয়েছিল সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন। তাঁর কোচিংয়েই ভারতের মহিলা ফুটবলাররা ১৯৮০ এবং ১৯৮৩ সালে এএফসি উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপে রানার্স আপ হয়েছিল।
শেষ বয়সে দীর্ঘদিন ক্যানসারে ভুগেছিলেন এই সুশীল ভট্টাচার্য। অবশেষে ৯০ বছর বয়সে টালিগঞ্জে নিজের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই ইস্টবেঙ্গল ফুটবলে এক বর্ণাঢ্য অধ্যায়ের অবসান হয়।