East Bengal FC: অমলের 'ডায়মন্ড ছক' একাই ভেঙে চুরমার করেছিলেন! ডার্বি কাঁপানো ইস্টবেঙ্গলের তারকা ফুটবলার আজ কী করেন জানেন?

Mohun Bagan vs East Bengal: কলকাতা ফুটবল ময়দানে মোহনবাগান বনাম ইস্টবেঙ্গলের লড়াই চিরন্তন। এই লড়াইয়ে স্বনামধন্য একজন সেনা হলেন নাজিমুল হক। অমল দত্তর ডায়মন্ড সিস্টেমকে তিনিই প্রথম ভেঙে চুরমার করেছিলেন।

Mohun Bagan vs East Bengal: কলকাতা ফুটবল ময়দানে মোহনবাগান বনাম ইস্টবেঙ্গলের লড়াই চিরন্তন। এই লড়াইয়ে স্বনামধন্য একজন সেনা হলেন নাজিমুল হক। অমল দত্তর ডায়মন্ড সিস্টেমকে তিনিই প্রথম ভেঙে চুরমার করেছিলেন।

author-image
Koushik Biswas
New Update
Najimul Haq

East Bengal FC: বাংলার ফুটবল বলতে মূলত তিনটে ক্লাবকেই বোঝায়। মোহনবাগান (Mohun Bagan), ইস্টবেঙ্গল এবং মহমেডান। একটা সময় বলা হত, যিনি এই তিনটে ক্লাবের হয়ে ফুটবল খেলেছেন, তাঁকে জীবনে কখনও ফিরে তাকাতে হয়নি। ভবিষ্যৎ জীবনে সাফল্য তাঁকে নিজে থেকে এসে ধরা দিয়েছে। কিন্তু, সবার ভাগ্য তো আর সমান হয় না! বাংলার এমনও কয়েকজন ফুটবলার রয়েছেন, যাঁরা এই তিনটে ক্লাবের হয়ে খেলেও শুধুমাত্র সুনাম ছাড়া আর কিছুই জোটেনি। আর সেই হতভাগ্যদের তালিকায় উজ্জ্বলতম নক্ষত্র হলেন নাজিমুল হক (Najimul Haq)।

Advertisment

নাজিমুল হকের প্রসঙ্গ উঠলেই সবার আগে চলে আসে ডায়মন্ড ডার্বির কথা। ২৮ বছর আগে কলকাতা ময়দানের মহাযুদ্ধে মোহনবাগানকে ৪-১ গোলে হারিয়ে দিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। ওই ম্য়াচে বাইচুং ভুটিয়া হ্য়াটট্রিক করলেও, লাল-হলুদ ব্রিগেডের প্রথম গোলটা কিন্তু এসেছিল এই নাজিমুলের পা থেকেই। তারপর থেকে অনেকগুলো বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু, আজও জোটাতে পারেননি একটা স্থায়ী চাকরি। আজ কেমন আছেন বসিরহাট থেকে উঠে আসা বাংলার এই ফুটবলার? খোঁজ নিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা

নাজিমূল হক মানেই ডায়মন্ড ডার্বির স্মৃতি, আজও মনে আছে সে কথা?

  • ১৯৯৭ সালের ১৩ জুলাই। কোনওদিন ভোলা যায় সেই স্মৃতি! কলকাতার যুবভারতী স্টেডিয়ামে প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার দর্শক উপস্থিত হয়েছিলেন। ফেড কাপের সেমিফাইনালে আমরা মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিলাম। কোয়ার্টার ফাইনালে আমি জোড়া গোল করলেও, ডার্বি ম্য়াচের আগে সমর্থকদের শব্দব্রহ্মে আমি কিছুটা হলেও কেঁপে গিয়েছিলাম। যদিও শেষপর্যন্ত স্নায়ুর লড়াইয়ে জয়লাভ করি। ম্যাচের প্রথম গোলটা আমার বাঁ-পায়ের ভলি থেকেই এসেছিল।
Advertisment

East Bengal vs Mohun Bagan: তার নামেই কাঁপত কলকাতার ময়দান! মোহন-ইস্টে খেলা সেই তারকা ফুটবলারই আজ জুতো সেলাই করছেন?

পরবর্তীকালে তো মোহনবাগানের হয়েও খেলেছেন, তখন কি সবুজ-মেরুন ফুটবলাররা এই গোলটা নিয়ে আলোচনা করতেন?

  • অবশ্যই। আপনার হয়ত মনে আছে, ওই ডায়মন্ড ডার্বিতে মোহনবাগানের হয়ে একমাত্র গোলটি করেছিলেন চিমা ওকোরি। পরবর্তীকালে যখন মোহনবাগান ক্লাবে যোগ দিলাম, তখন চিমা নিজেই আমার সঙ্গে এই গোলের ব্যাপারে আলোচনা করেছে। একবার তো হাসতে হাসতে প্রশ্নই করেছিল, আমরা যে উচ্চতার বলে হেড দিয়ে গোল করি, তুমি কীভাবে সেটায় সাইড ভলি করেছিলে? আমি আসলে বাড়িতে একটা নির্দিষ্ট উচ্চতায় বল রেখে এটা প্র্যাকটিস করতাম। হয়ত সেই অনুশীলনের পুরস্কারই আমি ওই ডার্বি ম্য়াচে পেয়েছিলাম। এই গোলটা আমার জীবনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

Najimul Haq (1)

এবার ছোটবেলায় ফিরে যাওয়া যাক। ফুটবল খেলার প্রতি ভালবাসা কীভাবে জন্মাল?

  • আসলে ফুটবলটা আমাদের পরিবারেই ছিল। আমরা ৬ ভাই। তবে আমিই ছোট। ফলে দাদাদের ফুটবল খেলা দেখেই আমি বড় হয়েছি। একটা সময় আমাদের গ্রামকে 'ব্রাজিল' বলা হত। গ্রামের প্রত্যেক পরিবারই কোনও না কোনওভাবে ফুটবল খেলার সঙ্গে যুক্ত ছিল। বিভিন্ন টু্র্নামেন্টে দাদাদের খেলা দেখতে যেতাম। এই যে খেলার প্রতি একটা অদম্য ইচ্ছে, সেটা আমি জন্মসূত্রেই পেয়ে গিয়েছিলাম। তবে আমি একজনের কথা আলাদা করে বলতে চাই। তাঁর নাম আরাবুল ইসলাম। সম্পর্কে আমার খুড়তুতো ভাই। আজ শিক্ষকতা করেন। আমার ছোটবেলার খেলা দেখে উনি ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন। একদিন না একদিন আমি বড় ক্লাবের হয়ে খেলবই খেলব। সেটাই শেষপর্যন্ত সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে। আমার সাফল্যে উনিই সবথেকে বেশি খুশি হয়েছেন। 

Najimul Haq (4)

  • তবে আমি আরও একজনের কথা এক্ষেত্রে বলতে চাই। তিনি হলেন আমার স্ত্রী পারভিন সুলতানা। একটা সময় আমার যখন কোনও পরিচিতি ছিল না। সেইসময় থেকে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। ফুটবল খেলায় তো সবসময় আর সাফল্য আসে না। অনেক সময়ই ব্যর্থতার মুখ দেখেছি। সেইসময় পারভিন আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমাকে সাহস জুগিয়েছেন। আজ ফুটবল ময়দানে আমি যেটুকু সাফল্য অর্জন করেছি, সেটার পিছনে ওঁর যথেষ্ট অবদান রয়েছে।

East Bengal FC: লাল-হলুদের 'প্রাণভোমরা'! নামেই কাঁপত ময়দান! একদা তারকা ফুটবলারের আজ কী পরিচয় জানেন?

কিন্তু, নিজের পরিবার থাকতেও কেন অনাথ আশ্রমে কেটেছিল ছোটবেলা?

  • ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছিলাম। পরিবারের আর্থিক অবস্থাও খুব একটা ভাল ছিল না। আর সেকারণেই বিবিপুর স্কুলের হেডস্যার অহিভূষণ মণ্ডল আমার মা'কে পরামর্শ দিয়েছিলেন, কলকাতার একটি অনাথ আশ্রমে আমাকে ভর্তি করে দিতে। অন্তত খেয়ে-পরে বাঁচতে পারব। কিন্তু, কিছু ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে আমাকে ওই আশ্রম ছাড়তে হয়েছিল। এরপর ঘুরতে ঘুরতে একদিন চিৎপুরের ফুটপাতে আশ্রয় নিই। প্রায় দশদিন একই পোশাকে পথের ধারে পড়েছিলাম। কিন্তু উপায় না দেখে একদিন বাড়ি ফিরতেই হল৷

Najimul Haq (3)

কোচ হিসেবে পিকে ব্যানার্জীর ভূমিকা আপনার জীবনে ঠিক কতখানি?

  • উফফ, পিকে ব্যানার্জীর কথা মনে পড়লে আজও গায়ে কাঁটা দেয়। মোহনবাগান তখন ডায়মন্ড ঝড়ে সবকিছু উড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু, ওই প্রবল ঝড়ের মুখেও উনি আমাদের যেভাবে সাহস জুগিয়েছিলেন, সেটা কখনও ভুলতে পারব না। আপনারা সকলেই জানেন যে পিকে ব্যানার্জী মানেই ভোকাল টনিক। ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে একটা জার্সি নিয়ে এসেছিলেন। বলেছিলেন, 'মনে কর এই জার্সিটা তোদের মা। যদি তোদের মাকে কেউ অপমান করে তাহলে কি তোরা ছেড়ে দিবি? মাঠেই এর যোগ্য জবাব দিতে হবে।' এই বলে জার্সিটা ধরে আমাদের শপথ করিয়েছিলেন। এরপর খুব স্বাভাবিকভাবেই আমাদের শরীরে রক্ত গরম হয়ে যায়। মাঠে নেমে নিজেদের সেরা পারফরম্য়ান্সটা উজাড় করে দিয়েছিলাম।

Karim Bencherifa Mohun Bagan: বাগানের প্রাক্তন 'হেডস্যার', ঝুলিতে এসেছিল একাধিক সাফল্য! আজ কী করছেন করিম বেঞ্চারিফা?

কলকাতার তিনটে প্রধান ক্লাবের হয়ে খেললেও কোনও চাকরি পাননি! আক্ষেপ হয়?

  • চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু, চেষ্টা করেও কোনও লাভ হয়নি। চাকরি না পাওয়ার আক্ষেপ তো অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু, আজও যেখানে যাই সেখানে আমাকে একজন ফুটবলার হিসেবে সবাই চিনতে পারে। সুনাম করে। এটাই অনেকটা আক্ষেপ মিটিয়ে দেয়। ফুটবলটা খেলেছিলাম বলে আজও মানুষ মনে রেখেছে। এটাই আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার। এটাই আমার কাছে সবথেকে বড় পাওয়া।

Najimul Haq (2)

এখন তাহলে সংসার কীভাবে চলে?

  • কয়েকবছর আগে পর্যন্তও একটা রেসিডেন্সিয়াল ফুটবল অ্যাকাডেমি চালাতাম। কিন্তু, কোভিড অতিমারির পর সেটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আপাতত বিভিন্ন ক্যাম্পে গিয়ে অনুশীলন করাই। এই ক্যাম্প থেকে অনেকেই আজ কলকাতার মাঠে খেলছে। মহমেডানের হয়ে খেলছে সজল বাগ। ও তো আমারই ছাত্র। এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছে।

Robson Robinho Mohun Bagan: কলকাতায় পা রাখলেন রবসন, উচ্ছ্বসিত মোহনবাগান সমর্থকরা

শেষ প্রশ্ন। সেদিন বাইচুংয়ের হ্যাটট্রিক কী নাজিমুলের সাফল্যকে কোথাও নিষ্প্রভ করে দিয়েছে?

  • আমি সেকথা একেবারেই মনে করি না। একটা দলে ১১ জন ফুটবলার খেলে। কেউ গোল করে, কেউ ডিফেন্স করে। এটা তো খেলারই একটা অংশ। ইস্টবেঙ্গল যে জিতেছিল, সেটাই সবথেকে বড় ব্যাপার। তার বাইরে আর কিছু নেই। দল জিতলেই একমাত্র সমর্থকরা আমাদের মনে রাখবে। ছোটবেলায় আমার গুরু ছিলেন, সন্তোষ কুমার মণ্ডল। তিনি আমাকে সবসময় একটাই কথা বলতেন - 'জয়টা বড় কথা নয়। যোগদানটাই সবথেকে বড় কথা।' ওই ম্যাচে আমি খেলার সুযোগ পেয়েছিলাম, এটাই বড় কথা। আর বাইচুংয়ের হ্যাটট্রিকে আমরা সবাই খুব খুশি হয়েছিলাম।
Najimul Haq Mohun Bagan East Bengal FC