/indian-express-bangla/media/media_files/2025/08/20/gostha-paul-2025-08-20-18-51-32.jpg)
ভারতের কিংবদন্তী ফুটবলার গোষ্ঠ পাল
Gostha Paul: বুধবার (২০ অগাস্ট) গোটা দেশজুড়ে এমন একজন ফুটবলারের জন্মবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে, যিনি ভারতীয় ফুটবল ইতিহাসকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন। যিনি ইংরেজদের চোখে চোখ রেখে ফুটবল ময়দানে স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াই করেছিলেন। হ্যাঁ, আপনারা ঠিকই ধরেছেন। আজ ভারতের কিংবদন্তী ফুটবলার গোষ্ঠ পালের জন্মদিন। সমর্থকরা যাঁকে ভালবেসে 'চিনের প্রাচীর' বলে ডাকতেন।
১৮৯৬ সালে অধুনা বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন গোষ্ঠ পাল। ১৯০৭ সালে কুমোরটুলি ক্লাবের হাত ধরে শুরু হয় তাঁর ফুটবল কেরিয়ার। সেইসময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১১ বছর। তবে ১৯১১ সালের এক বৃষ্টিস্নাত দিনে তাঁর জীবনটাই একেবারে বদলে গেল। কলকাতার কুমোরটুলি পার্কে তিনি অনুশীলন করছিলেন। এমন সময় কালীচরণ মিত্রের নজরে পড়ে যান তিনি। সেইসময় 'কালী মিত্তির' ভারতীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ছিলেন। এরপর আর গোষ্ঠ পালকে ফিরে তাকাতে হয়নি। ভারতীয় ফুটবলে মিত্র সাহেবের অগাধ আধিপত্য প্রথম দরজাটা খুলে দিয়েছিল।
মোহনবাগান ক্লাবে যোগদান
এই কালীচরণ মিত্রের সঙ্গে পরিচিতির সুবাদেই মেজর শৈলেন বসুর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল গোষ্ঠ পালের। ১৯১৩ সালে শৈলেন বসুর হাত ধরেই তিনি মোহনবাগান ক্লাবে যোগ দিয়েছিলেন।
মজার ব্যাপার হল, ১৯১৩ সালে সবুজ-মেরুন জার্সিতে ডেবিউ ম্য়াচ খেলতে নেমেছিলেন গোষ্ঠ পাল। প্রতিপক্ষ ডালহৌসি এফসি। প্রথম ম্য়াচে তাঁর পারফরম্য়ান্স একেবারেই সমর্থকদের নজর কাড়তে পারেনি। কিন্তু, দ্বিতীয় ম্য়াচেই টিম ব্ল্যাক ওয়াচের বিরুদ্ধে তিনি যাবতীয় সমালোচনা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এটা ছিল সেই টিম ব্ল্যাক ওয়াচ যারা ১৯১২ এবং ১৯১৩ সালে কলকাতা ফুটবল লিগের খেতাব জয় করেছিল।
ওই বছর মোহনবাগান ক্লাব খুব বেশি ট্রফি জিততে পারেনি। কিন্তু, গোষ্ঠ পালের পারফরম্য়ান্স যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। এই সময়ই তাঁকে 'চিনের প্রাচীর' উপাধি দেওয়া হয়। মেরিনার্স ব্রিগেডের ডিফেন্ডার হিসেবে তিনি যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছিলেন। পাশাপাশি খালি পায়ে খেলার জন্য তাঁর সাহসিকতার প্রশংসাও সকলে করেছিলেন।
East Bengal vs Mohun Bagan Highlights: মশালের আগুনের ছারখার সাধের বাগান, ডার্বির রং লাল-হলুদ
১৯১৫ সালে মোহনবাগানের হয়ে ক্যালকাটা ফুটবল ক্লাবের বিরুদ্ধে প্রথম ডিভিশন ম্য়াচ খেলেছিলেন গোষ্ঠ পাল। কলকাতা ফুটবল লিগে তাঁর দল চতুর্থ স্থানে অভিযান শেষ করেছিল। পরের বছর মোহনবাগান রানার্স আপও হয়।
মোহনবাগান অধিনায়ক
১৯২১ সালে গোষ্ঠ পালকে মোহনবাগানের অধিনায়ক হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছিল। তাঁর নেতৃত্বে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন শিল্ড ট্রফির ফাইনালে উঠেছিল। ক্যালকাটা ফুটবল ক্লাবের বিরুদ্ধে তারা হেরে গেলেও শেষপর্যন্ত রানার্স আপ হয়েছিল।
১৯২৩ সালে প্রথম ভারতীয় ফুটবল দল হিসেবে মোহনবাগান রোভার্স কাপের ফাইনালে প্রবেশ করেছিলেন। এই ফাইনাল ম্য়াচটি মুম্বইয়ে আয়োজন করা হয়। আর এখান থেকেই মোহনবাগান জাতীয় স্তরে পরিচিতি লাভ করতে শুরু করে। ফাইনাল ম্য়াচে ডারহাম লাইট ইনফ্যান্ট্রির কাছে মোহনবাগান হেরে গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু হাজার হাজার দর্শক দেখেছিল একটা ভারতীয় ফুটবল ক্লাব কীভাবে লড়াই করতে পারে। এই লড়াইটা গোষ্ঠ পাল এবং মোহনবাগান ফুটবলারদের ভাগ্য বদলে দিয়েছিল।
১৯২৪ সালে গোষ্ঠ পালকে জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক হিসেবে নির্বাচন করা হয়। এই প্রসঙ্গে আপনাদের জানিয়ে রাখি, গোষ্ঠ পালই প্রথম ভারতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক যাঁর নেতৃত্বে টিম ইন্ডিয়া বিদেশ সফরে (শ্রীলঙ্কা) গিয়েছিল।
১৯২৬ সাল পর্যন্ত গোষ্ঠ পাল মোহনবাগানকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এরপর ১৯৩৫ সালে তিনি ফুটবল থেকে অবসর গ্রহণ করে। উল্লেখ্য, মোহনবাগানই ভারতীয় ফুটবল ইতিহাসের প্রথম ক্লাব যাকে ডুরান্ড কাপ খেলার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ওই বছর ডুরান্ড কাপের সেমিফাইনালে উঠেছিল মোহনবাগান।
১৯৭৬ সালের ৯ এপ্রিল গোষ্ঠ পাল শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। ততদিনে ভারতীয় ফুটবলের সফলতম খেলোয়াড় হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৬২ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মান দিয়েছিল।
গোষ্ঠ পালের ফুটবল সাফল্য আজ শুধুমাত্র বাংলাকেই না, গোটা দেশকেই অনুপ্রাণিত করে। আর সেকারণে ১৯৮৪ সালে কলকাতায় ইডেন গার্ডেন্সের ঠিক উল্টোদিকে তাঁর একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের মূর্তি বসানো হয়েছে। তাঁর নামে একটি রাস্তাও রয়েছে। এর পাশাপাশি ১৯৯৮ সালে তাঁকে সম্মান জানিয়ে একটি পোস্টাল স্টাম্প প্রকাশ করা হয়েছিল। ২০০৪ সালে তাঁকে মরণোত্তর 'মোহনবাগান রত্ন' পুরস্কার দেওয়া হয়।