/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/05/amal-dutta-2025-09-05-15-59-50.png)
বাংলার কিংবদন্তী ফুটবল কোচ অমল দত্ত
Amal Dutta: বাংলার ফুটবলে অমল দত্ত'র পরিচয় আজ আর নতুন করে দেওয়ার দরকার নেই। মোহনবাগান (Mohun Bagan) এবং ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) দুটো দলকেই কোচিং করিয়েছেন তিনি। তাঁর হাতে তৈরি হয়েছে একাধিক তারকা ফুটবলার। সাতের দশকের শেষদিকে তিনি ভারতীয় ফুটবলে 'ডায়মন্ড সিস্টেম' প্রবর্তন করেছিলেন। সেকারণে তাঁকে বাংলা ফুটবলের অবিসংবাদিত দ্রোণাচার্যও অনেকে বলে থাকেন। কিন্তু, বাংলার ফুটবলকে এতকিছু দেওয়ার পরও তিনি নাকি যোগ্য সম্মান পাননি! অন্তত এমনটাই দাবি করেছেন বাংলার প্রাক্তন ফুটবলার নাড়ুগোপাল হাইত (Narugopal Hait)।
কয়েকদিন আগে নাড়ুগোপাল হাইতকে নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলায় একটি এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়েছিল। বর্তমানে তিনি সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজ করে কোনওক্রমে সংসার চালান। তাঁর জীবনের 'শিক্ষক'-এর প্রসঙ্গ উঠতেই তিনি অমল দত্ত'র কথা বললেন। বললেন, 'আমি জীবনে এমন একজন কোচ পেয়েছিলেন, যাঁকে নিয়ে আমি নিজেকে ধন্য বলে মনে করি। ফুটবল কীভাবে খেলতে হয় এবং কীভাবে শিখতে হয়, সেটা ওঁর সান্নিধ্যে যারা না এসেছে, তারা বলতে পারবে না। অমল দত্ত সম্পর্কে কোনও কথা বলা আমার সাজে না। কারণ ওঁর সামনে আমি খুবই ক্ষুদ্র মানুষ।'
এরপর তিনি বললেন, 'অমল দত্ত এমন একজন মানুষ, যিনি ৪ ঘণ্টা অনুশীলন করালেও সেটা মালুমই হত না। কিন্তু, অনুশীলনের পর যখন ড্রেসিংরুমে ফিরতাম, তখন আর মনে হত না যে বাড়ি ফিরি। শরীর এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়ত। কোথা দিয়ে যে ৪-৫ ঘণ্টার অনুশীলন কেটে যেত, সেটা বুঝতেই পারতাম না। এমন একজন মানুষ আজ হারিয়ে গিয়েছেন। আমাদের প্রজন্মের কাছে উনি অনেক অবদান রেখে গিয়েছেন।'
Indian Football Team: প্রথম ম্য়াচেই খালিদ ম্য়াজিক, অবশেষে জয়ের সরণীতে ভারতীয় ফুটবল দল
কলকাতাতেই জন্ম অমল দত্তর। শিকদারপাড়া লেনে তিনি বড় হয়ে উঠেছেন। এই প্রসঙ্গে আপনাদের জানিয়ে রাখি, বাঙালি কবি এবং সাহিত্যিক অক্ষয় কুমার বড়াল ছিলেন মামাতো দাদু। ছোটবেলায় রাধেশ্যাম দত্ত'র কাছে তবলাও শিখেছিলেন তিনি। ১৯৪৬ সালের দাঙ্গা অমল দত্ত'র জীবন একেবারে বদলে দিয়েছিল। কোচিং কেরিয়ারে আসার আগে তিনি বেঙ্গল নাগপুর রেলওয়ে এবং ভারতীয় আয়কর বিভাগেও কাজ করেছেন।
ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগানে কোচিং সাফল্য
বাংলার স্বনামধন্য ফুটবল কোচ হিসেবে অমল দত্ত'র একাধিক সাফল্যের পালক যুক্ত হয়েছিল। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে তিনি আইএফএ শিল্ড (১৯৬৫, ১৯৭৬, ১৯৮১, ১৯৮৩, ১৯৮৪), ফেডারেশন কাপ (১৯৭৮, ১৯৮০), ডুরান্ড কাপ (১৯৭৮, ১৯৮২), কলকাতা ফুটবল লিগ (১৯৭৭, ১৯৮২, ১৯৮৫), রোভার্স কাপ (১৯৮০), ডিসিএম ট্রফি (১৯৮৩), বরদলুই ট্রফি (১৯৭৮), দার্জিলিং গোল্ড কাপ (১৯৭৬, ১৯৮১, ১৯৮২, ১৯৮৫), স্ট্যাফোর্ড কাপ (১৯৮১), সঞ্জয় গান্ধী গোল্ড কাপ (১৯৮৪), ট্রেডস কাপ (১৯৭৬), উইলিয়াম ইয়ঙ্গার কাপ (১৯৭৬) জয় করেছেন।
এখানেই শেষ নয়। মোহনবাগানকেও তিনি জিতিয়েছেন একাধিক খেতাব। আইএফএ শিল্ড (১৯৬৯), রোভার্স কাপ (১৯৭০, ১৯৭১, ১৯৭২, ১৯৮৫), ফেডারেশন কাপ (১৯৮৬, ১৯৮৭), ডুরান্ড কাপ (১৯৮৫, ১৯৮৬), কলকাতা ফুটবল লিগ (১৯৮৬)।
Khalid Jamil: খালিদই আসল 'মহাগুরু'? ১৭ বছর পর ইতিহাসের সাক্ষী ভারতীয় ফুটবল
শেষকালে নাড়ুগোপাল হাইত বললেন, 'আমি আমার সংক্ষিপ্ত ফুটবল কেরিয়ারে অনেককেই শিক্ষাগুরু হিসেবে পেয়েছি। অলোক মুখার্জী, বাবলু (সুব্রত) ভট্টাচার্য, রাইডার, সঞ্জয় সেন, বিশ্বজিৎ ভট্টচার্যের মতো নামীদামি কোচ পেয়েছি। কিন্তু, কোন দলের সঙ্গে কতটুকু ফুটবল খেলতে হবে, সেটা শিখিয়ে দিয়েছিলেন অমল স্যার। তবে আমি মনে করি, এই মানুষটার আরও খানিকটা সম্মান পাওয়ার দরকার ছিল। আমি রাজনীতির লোক নই। সেই ব্যাপারে কথাও বলব না। তবে আমি মনে করি, এই লোকটা আরও খানিকটা বেশি কিছু পেলে ভাল হত।'
তাঁর কথায়, 'মৃত্যুর পর অনেকেই অনেক সম্মান পায়। কিন্তু, তাতে লাভটা কী হয়েছে? জীবদ্দশায় আপনি নিজের মূল্যায়ণ দেখে যেতে পারলেন না। মৃত্যুর পর আর মূল্যায়ণ করে লাভ কী? আমি যতটুকু বললাম, সেটা হয়ত অনেকটাই কম হল। ওঁর মূল্যায়ণ এভাবে করা সম্ভব নয়।'