India vs Bangladesh 2nd Test Match at Kanpur: চেন্নাই টেস্টে নাজমুল হোসেন শান্ত-র আউট হওয়ার ধরণ যেন বাংলাদেশ ব্যাটিং বিপর্যয়ের সারাংশ। তৃতীয় দিনের শেষবেলায় ব্যাট করতে নেমেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তারপর বুমরা-সিরাজদের বিপক্ষে টিকে থাকাই শুধু নয়, কীভাবে ব্যাট করতে হয় ভারতীয় কন্ডিশনে তা যেন সতীর্থদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছিলেন।
হারের মুখে দাঁড়িয়ে তিনি কেরিয়ারের ষষ্ঠ টেস্ট শতরানের কাছাকাছি প্রায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু তখন অন্যপ্রান্তে ছিল মাত্র তিন উইকেট। ৮২ রানে ব্যাটিং করার সময়েই সহযোগীর অভাবের কথা বিবেচনা করে প্রায় ভেঙে পড়া পিচে রবীন্দ্র জাদেজাকে তুলে হাঁকানোর দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। ফল মোটেই ভালো হয়নি।
পাকিস্তানের মাটিতে ঐতিহাসিক দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ জিতে ভারতে পা রেখেছিল বাংলাদেশ। তবে ভারতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছুড়ে দেওয়ার প্রাথমিক শর্ত যে কোনও মূল্যে ম্যাচ সচেতনতা দেখানো। ম্যাচ শুরুর আগে শ্রীধরণ শ্রীরাম এবং ওয়াসিম জাফররা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলে দিয়েছিলেন, ভারতে এসজি বলের খেলা সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে বাংলাদেশিদের।
আরও পড়ুন: পাকিস্তান ভেবেছিলে নাকি! ভারতের কাছে কচুকাটা হতেই বাংলাদেশকে দুয়ো ধ্বনি প্রকাশ্যে
আর চেন্নাইয়ে প্ৰথম দিনের দুটো সেশন বিশদ দিয়ে বাংলাদেশ চার দিন ধরেই স্ট্রাগল করে গেল। বাংলাদেশ জানত, এই টেস্ট তাঁরা মোটেই দ্বিতীয় ইনিংসে হারেনি। প্রথম দিনে বাংলাদেশ পেসার এবং স্পিনাররা যেভাবে বরবীন্দ্র জাদেজা-রবিচন্দ্রন অশ্বিনের জুটির কাছে প্লট হারিয়ে ফেলল, সেটাই আপাতত বাংলাদেশের হারের ময়নাতদন্তে উঠে আসছে।
সামান্য আর্দ্র পিচে বল পুরোনো হয়ে যাওয়ার পর রিভার্স সুইং ছাড়া বাংলাদেশের আক্রমণ অনেকটাই ধার হারিয়েছিল। দ্বিতীয় দিনে টেস্টের পাঁচদিনের মধ্যে সবথেকে বেশি ব্যাটিং সহায়ক পরিস্থিতি তৈরি ছিল। পাকিস্তানের যে ধৈর্য্যের পরীক্ষায় বাংলাদেশ উত্তীর্ণ হয়েছিল, সেই ধৈর্য্যই স্রেফ দরকার ছিল। চেন্নাইয়ের গরমে স্পিনারদের জন্য কার্যত কোনও রসদই ছিল না। আর রোহিত শর্মা পেসারদের চার ওভারের বেশি স্পেল করতেন না। স্রেফ একজন টপ অর্ডার ব্যাটারও যদি ক্রিজে টিকে যেতেন, তাহলে ভারতের জন্য দুর্ভাগ্য বয়ে আনার ক্ষমতা ছিল তাঁর। তবে নিখুঁত ভারতীয় পেসারদের সামনে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া কোনও প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারেনি বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের ফিল্ডিং সাজিয়ে দিয়েছিলেন কেন, টেস্ট জিতেই আসল রহস্য ফাঁস করলেন পন্থ
২৮০ রানের হার হজম করার পর নাজমুল শান্ত বলে দিয়েছেন, "ফার্স্ট ইনিংসে আমরা মোটেও ভালো ব্যাটিং করতে পারিনি। ম্যাচের ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় ছিল ওই সময়। টপ অর্ডারে একটা বড় পার্টনারশিপ হলেই আমরা ওঁদের চাপে রাখতে পারতাম। প্ৰথম ইনিংসে টপ অর্ডার ব্যাটারদের পারফর্ম করার জন্য চ্যালেঞ্জ তো থাকবেই। আমরা এই বিষয়ে কত দ্রুত সামলে নিতে পারছি সেদিকে নজর থাকবে। এই নিয়ে আমরা পরিশ্রম করছি। তবে প্রত্যাশিত ফলাফল মিলছে না।"
সবথেকে হতাশাজনক বিষয় হল, এই বিষয় যে বাংলাদেশের আয়ত্তের বাইরে, তা তাঁরা প্রমাণ করেছেন দ্বিতীয় ইনিংসে। বাংলাদেশের ওপেনাররা ভালো সূচনা উপহার দিয়েছিলেন। যাতে নতুন বলে ভারতীয় পেসাররাও হতোদ্যম হয়ে পড়েছিল। শান্তর ইনিংস যে ভারতীয় শিবিরে দুশ্চিন্তা হাজির করেছিল এমনটা নয়। তবে ভারতীয়দের নিশ্চিতরূপেই খাটনি বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে ব্যঙ্গ করে মাঠেই কোহলির নাগিন-কীর্তি! লজ্জায় মুখ লুকোল টাইগাররা, দেখুন চরম ভিডিও
ব্যাটাররা যদি সুইপ, রিভার্স সুইপে সিদ্ধহস্ত হয়, তাহলে অশ্বিন-জাদেজা সমস্যায় পড়েন। শান্ত-র সুইপ, রিভার্স সুইপের মুখে অশ্বিন-জাদেজারা প্ল্যান-বি নিয়ে ভাবতে বাধ্য হন। বাংলাদেশের বোলিং সেই তুলনায় কিছুটা ভালো। তবে গোটা টেস্ট জুড়েই সাকিব আল হাসানের ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন তাড়া করেছে বাংলাদেশি ক্যাম্পকে। কাউন্টিতে সারের হয়ে খেলে জাতীয় দলের সঙ্গে সাকিব চেন্নাইয়ে যোগ দিয়েছিলেন মঙ্গলবার রাতে। দুই ইনিংস মিলিয়ে সাকিব হাত ঘুরিয়েছেন ২১ ওভার। খরচ করেছেন ১২৯ রান। একটাও উইকেট শিকারের বিনিময়ে।
তৃতীয় দিন সকালে সাকিবকে যখন আক্রমণে আনতে দেরি করেছিলেন নাজমুল শান্ত, সেই সময় মুরলি কার্তিক কমেন্ট্রি করার সময় বলে দেন, সাকিব নাকি তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে বলেছেন, তাঁর তর্জনিতে অস্বস্তি অনুভব করছেন তিনি। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়, যখন বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্প জানান, তাঁরা এই বিষয়ে কিছুই জানেন না।
তিন পেসার নিয়ে চেন্নাইয়ে খেলায় বাংলাদেশের আক্রমণভাগের অনেকটাই নির্ভর করছিল দুই স্পিনার সাকিব আল হাসান এবং মেহেদি হাসান মিরাজের ওপর। তবে এসজি বল হাতে দুজনকেই খোঁড়াতে দেখা গিয়েছে। অনভিজ্ঞতায় বোঝাই বাংলাদেশের পেসাররা আবার রিভার্স সুইংয়ে সড়গড় নন। এতে বল পুরোনো এবং নরম হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের আক্রমণের মোকাবিলা করা জলের কত সহজ হয়ে গিয়েছিল।
তবে চেন্নাইয়ে বড় ব্যবধানে হার সত্ত্বেও বাংলাদেশ সান্ত্বনা পেতে পারে সম্ভাব্য পিচ বদলের বিষয়ের জন্য। কানপুরের গ্রিন পার্কের পিচ কালো মাটির জন্য ভারতের অন্যতম শ্লথ গতির পিচ। সেই সঙ্গে থাকছে লো বাউন্স। কানপুরের পিচ বাংলাদেশিদের নিজেদের হোম গ্রাউন্ড মিরপুরের অনুভূতি নিয়ে আসতে পারে। প্ৰশ্ন হল, চেন্নাইয়ে তিন পেসার নিয়ে প্ৰথম একাদশ সাজানোর পর ভারত কি কানপুরেও একই কম্বিনেশন ধরে রাখবে?
READ THE FULL ARTICLE IN ENGLISH