বুমরার সঙ্গে আন্ডারসনের বাউন্সার যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা যেন ফুরনোর নয়। টেস্ট ম্যাচ শেষে হয়ে যাওয়ার পরেও দুই তারকাকে নিয়ে আলোচনা অব্যাহত। লর্ডস টেস্টের প্রথম ইনিংসেই বুমরার বাউন্সারের কবলে পড়তে হয়েছিল আন্ডারসনকে। ১১ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে আন্ডারসন যে এভাবে বুমরার বাউন্সারের মুখোমুখি হবেন, তা ভাবতেই পারেননি। সেই ওভারে বুমরা ৪টে নো বল করেন। আর সবকটি ছিল আন্ডারসনের শরীর লক্ষ্য করে।
তৃতীয় টেস্ট শুরু হওয়ার ঠিক একদিন আগে এবার আন্ডারসন মুখ খুললেন বাউন্সার এপিসোড নিয়ে। সরাসরি বলে দিলেন, এমন ঘটনার মুখোমুখি আগে কখনও করেননি তিনি। ইংল্যান্ডের তারকা পেসারের বক্তব্য, বুমরা মোটেই তাঁকে আউট করতে ইচ্ছুক ছিলেন না। বরং নিজের পেস বাউন্সার প্রদর্শন করাই ছিল উদ্দেশ্য।
আরও পড়ুন: বুমরা আমাকে আউটই করতে চাইছিল না! হিংস্র বাউন্সার কাণ্ডে বিস্ফোরক প্রতিক্রিয়া অ্যান্ডারসনের
টেলএন্ডার পডকাস্টে আন্ডারসন সম্প্রতি বলেছেন, “আমি কিছুটা বেআব্রু হয়ে পড়েছিলাম নিঃসন্দেহে। কারণ আমার আগের ব্যাটসম্যানরা বলাবলি করছিল কীভাবে পিচ প্রায় স্লো হয়ে গিয়েছে। বাউন্সারও ধীরে ধীরে আসছিল। আমি ব্যাট করতে আসার সময় রুট আমাকে বলে, বুমরা সাধারণত যেমন দ্রুত বল করে, সেরকম নাকি করছিল না।”
এর পরেই আন্ডারসন জানিয়েছেন, “তারপরে ওঁর প্ৰথম বলটাই ছিল শরীর লক্ষ্য করে ৯০ মাইল বেগে। তাই নয়কি? আমার তখন মনে হচ্ছিল, এরকম ঘটনা গোটা কেরিয়ারে কখনও ফেস করিনি। কোথাও আমার মনে হচ্ছিল বুমরা আমাকে আউট করতে বিন্দুমাত্র উৎসুক ছিল না।”
আরও পড়ুন: বুমরাদের বাউন্সারের কড়াইয়ে ফেলায় সপাটে আক্রমণ! ভনের রোষানলে দেশের তারকারাই
লর্ডস টেস্টে বুমরার বাউন্সারের মুখোমুখি হয়ে কিছুটা রেগেই যান তারকা ইংল্যান্ডের পেসার। মাঠেই কথা কাটাকাটি করতে দেখা গিয়েছিল স্বভাবশান্ত তারকাকে। আর বুমরার বাউন্সারে ক্রুদ্ধ হয়েছিল গোটা ইংল্যান্ড দল-ই। পাল্টা বুমরা ব্যাট করতে আসার পরই শর্ট বলের সম্ভার নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন মার্ক উড, অলি রবিনসনরা। যদিও বুমরাকে কাবু করা যায়নি।
একঝলকে দেখে নেওয়া যাক বুমরার সেই আগুনে ২৬তম ওভার-
বল ১: রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে বল শুরু করেই বুমরার বাউন্সার সোজা গিয়ে আঘাত করে আন্ডারসনের হেলমেটে। অ্যান্ডারসন প্রতিহত করার চেষ্টা করলেও হেলমেটের জালে তা আঘাত করে। গালি পয়েন্ট থেকে ক্যাচের জন্য আবেদন জানানো হলেও আম্পায়ার তা খারিজ করে দেন। কারন বল কোনওভাবেই আন্ডারসনের ব্যাট অথবা গ্লাভস স্পর্শ করেনি। পরবর্তী ডেলিভারির আগে আন্ডারসনকে তাঁর হেলমেট বদল করতে হন।
বল ২: এবার শর্ট বল সোজা আঘাত করে আন্ডারসানের পাঁজরে।
আরও পড়ুন: অ্যান্ডারসনকে মারতেই আগুন জ্বলে ড্রেসিংরুমে, বুমরার বিষ-বাউন্সারে বারুদে জবাব কোচের
বল ৩: এবারও পাঁজর লক্ষ্য করে শর্ট বল ভাসিয়ে দেন বুমরা। তবে আন্ডারসন কোনওরকম ব্যাটে বলে সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হন। অন সাইডে হালকা তুলে মারার চেষ্টা করেন তিনি। বল হাওয়ায় থাকলেও ক্যাচ ধরার মত শর্ট লেগ পজিশনে কোনও ফিল্ডার না থাকায় বেঁচে যান।
বল ৪: এই বলে বুমরা ওভারস্টেপ ডেলিভারি করেন। এটিও পাঁজর লক্ষ্য করে শর্ট বল ছিল।
বল ৫: অফ স্ট্যম্পের বাইরের দিকে বল। আন্ডারসন বলটিকে ঠেলে দেন পয়েন্ট ফিল্ডারের কাছে। একটি সিঙ্গলের জন্য আবেদনও করেন আন্ডারসন। তবে রুট সাড়া দেননি।
আরও পড়ুন: বাউন্সারের পর বাউন্সার! বুমরার বিষ-বোলিংয়ে দুঃস্বপ্ন আন্ডারসনের, মুখ খুললেন স্টেইনও
বল ৬: ইয়র্কার! কোনক্রমে ব্যাট হাতে বলটিকে সামলান আন্ডারসন। বিপদ হতে পারত, বল উইকেটের দিকে ধাবমান হতেই তিনি ব্যাট হাতে বলটিকে সরিয়ে দেন। আরও একটি নো বল…..!
বল ৭: ভালো ডেলিভারি। ফের শরীরী বল বুমরার। আন্ডারসনও সুন্দর ভঙ্গিতে বলটিকে ছেড়ে দেন, তারপর ব্যাটটি দারুন ভাবে ওপরে তুলে এক ঝলক তাকান বুমারার দিকে।
বল ৮: আবারও অফ স্ট্যাম্পের ঠিক বাইরের দিকে একটি শর্ট বল। সম্ভবত এটি ওভারের শেষ বল ভেবে তাঁর ব্যাটটি ফিরিয়ে নেন।
বল ৯: আরও একটি আসাধারন ইয়র্কারের চেষ্টা বুমরার। লেগসাইডের নিচের দিকে। তবে আরও একটি নো বল। এই নিয়ে ওভারে চতুর্থ নো বল বুমরার!
বল ১০: এবার সঠিক ইয়র্কারের চেষ্টা বুমেরার। সফল, দারুন ভাবে ব্যাট হাতে বল ম্যানেজ করেন আন্ডারসন। ওভারের সমাপ্তি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন