Titanic Ship Unknown Story: ডুবন্ত টাইটানিক থেকে বেঁচে ফেরেন, অলিম্পিকে সোনা জেতেন মৃত্যুঞ্জয়ী তারকা

Richard Norris Williams: রিচার্ড নরিস উইলিয়ামস। এমন একজন কিংবদন্তী টেনিস তারকা, যিনি ১৯২৪ সালে আয়োজিত প্যারিস অলিম্পিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

Richard Norris Williams: রিচার্ড নরিস উইলিয়ামস। এমন একজন কিংবদন্তী টেনিস তারকা, যিনি ১৯২৪ সালে আয়োজিত প্যারিস অলিম্পিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

author-image
Koushik Biswas
New Update
Richard Norris Williams Titanic Ship

টাইানিক জাহাজেই সফর করছিলেন রিচার্ড নরিস

Titanic: রিচার্ড নরিস উইলিয়ামস। এমন একজন কিংবদন্তী টেনিস (Tennis) তারকা, যিনি ১৯২৪ সালে আয়োজিত প্যারিস অলিম্পিক (Olympics) টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু, উইম্বলডন ডবলস চ্যাম্পিয়ন রিচার্ডকে তাঁর ক্রীড়া প্রতিভার থেকে বেশি টাইটানিক জাহাজ দুর্ঘটনার কারণেই লোকজন চেনে। আজ্ঞে হ্যাঁ, আমরা সেই টাইটানিক জাহাজের কথাই বলছি, যেটা ডুবে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে হলিউডে একটা সিনেমাও তৈরি হয়েছে। এই দুর্ঘটনার পর চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, রিচার্ড আর কখনই ২ পায়ে দাঁড়াতে পারবেন না। কিন্তু, তাঁর মানসিক জোর ছিল অপরাজেয়। জীবনে হার মানেননি। আগামীদিনে তিনি টেনিসের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নও হয়েছিলেন। আসুন, তাহলে রিচার্ড নরিসের রোমাঞ্চে ভরা জীবন সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।

Advertisment

টাইটানিক। ব্রিটিশ যাত্রীবোঝাই এক জাহাজ। স্টার লাইন সংস্থার পক্ষ থেকে এই জাহাজটি চালানো হয়েছিল। ১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল এই জাহাজের অন্তিম যাত্রা শুরু হয়। ১৫ এপ্রিল জাহাজটি একটি হিমশৈলে আঘাত করে। সেইসময় জাহাজে দু'হাজারের বেশি যাত্রী ছিল। ধাক্কা খাওয়ার পর জাহাজটি ডুবতে শুরু করে। ইতিমধ্যে প্রায় ৭০০ যাত্রী লাইফ বোটের সাহায্যে প্রাণে বেঁচে যান। আর যাঁরা সেই লাইফ বোটে উঠতে পারেননি, তাঁদের মধ্যে কেউ উদ্ধারকারী দলের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন, কেউবা আবার জলে ডুবে মারা যান। অধিকাংশ যাত্রীই জাহাজের সঙ্গে আটলান্টিক মহাসাগরের তলায় চলে যান। এই জাহাজেই ছিলেন রিচার্ড নরিস উইলিয়ামসও। এই দুর্ঘটনায় প্রথম শ্রেণীর পুরুষ যাত্রীদের বাঁচার শতকরা হার ছিল মাত্র ৩৩ শতাংশ।

Sania Mirza 5 Controversies: মিনি স্কার্ট থেকে জাতীয় পতাকার অপমান, এই ৫ বিতর্কে নাম জড়িয়েছে সানিয়া মির্জার

Advertisment

বাবার সঙ্গে চেপেছিলেন টাইটানিক জাহাজে

১৮৯১ সালের ২৯ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন রিচার্ড নরিস। যদিও তাঁর বাবা-মা দুজনেই ব্রিটিশ ছিলেন। বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিনের বংশে জন্মগ্রহণ করা রিচার্ডের পরিবার যথেষ্ট বিত্তবান ছিল। তাঁর বাবা চার্লস ডোয়েন উইলিয়ামস একজন নামকরা আইনজীবী ছিলেন। তিনিই রিচার্ডকে টেনিস খেলা শিখিয়েছিলেন। বেশ কয়েকটি বিশ্বস্ত সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, আমেরিকার হোবার্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করার কথা ছিল রিচার্ডের। আর সেকারণেই কাটা হয়েছিল টাইটানিক জাহাজের টিকিট। যখন বাবার সঙ্গে রিচার্ড টাইটানিক জাহাজে চাপেন, সেইসময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২১ বছর। আর তাঁর বাবা পা দিয়েছিলেন ৫১ বছর বয়সে। দুজনেই প্রথম শ্রেণীর টিকিট কাটেন। ফ্রান্সের শেরবার্গ শহর থেকে তাঁরা জাহাজে চেপেছিলেন।  

Sania Mirza 2nd Marriage: টলিউড নায়কের প্রেমে পাগল সানিয়া! দ্বিতীয়বার বসছেন বিয়ের পিঁড়িতে?

৯০ মিটার সাঁতার কাটার পর পেয়েছিলেন লাইফ বোট

টাইটানিক জাহাজ যখন ডুবতে শুরু করেছিল, সেইসময় রিচার্ড কেবিনের দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা দিতে শুরু করেন। অবশেষে দরজা ভেঙে একজন যাত্রীকে উদ্ধারও করেছিলেন। আর এই কারণে জাহাজের একজন স্টাফ তাঁকে জরিমানার ভয়ও দেখিয়েছিল। পরবর্তীকালে রিচার্ড জানিয়েছিলেন, জাহাজের একটি ফানেল ভেঙে তাঁর বাবার মৃত্যু হয়েছিল। নিজেকে বাঁচানোর জন্য রিচার্ড প্রথমে জুতোটা খোলেন। তারপর প্রায় ৯১ মিটার দুরে দাঁড়িয়ে থাকা লাইফ বোটের দিকে সাঁতরাতে সাঁতরাতে এগিয়ে যান। লাইফ বোটের কাছে তো পৌঁছে গিয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে ছিল না কোনও উদ্ধারকারী দল। সেকারণে বেশ খানিকক্ষণ সময় তাঁকে ওভাবেই কাটাতে হয়। ইতিমধ্যে তাঁর হাঁটু দীর্ঘক্ষণ ওই হিমশীতল জলের মধ্যে ছিল। অবশেষে জাহাজের বেশ কয়েকজন চিকিৎসক তাঁকে উদ্ধার করেন এবং জানান যে ফ্রস্টবাইটের কারণে তাঁর পা দুটো বাদ দিতে হবে।

Indian Table Tennis: শরথ কামালের বিদায়ের দিনেই ইতিহাস, রেকর্ডবুকে নাম লেখালেন মনভ ঠাক্কর

মনের জোরে হারিয়েছিলেন চিকিৎসকদেরও

কিন্তু, টেনিস খেলতে রিচার্ড এতটাই ভালবাসতেন যে শেষপর্যন্ত আর পা কাটতে দেননি। চিকিৎসকদের রিচার্ড নরিস স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, 'আমি এই কাজের অনুমতি একেবারেই দিতে পারব না। জীবনে এগিয়ে চলার জন্য পায়ের দরকার পড়বে আমার।' অবশেষে ডাক্তারদের সতর্কবার্তায় কান না দিয়ে ওই জাহাজের ডেকে ২ ঘণ্টা অন্তর হাঁটাহাঁটি করতে শুরু করেন। ক্রমশ তাঁর শরীরের নিম্নাঙ্গে অনুভূতি আসতে শুরু করে। আপনারা হয়ত শুনলে অবাকই হবেন, এই ভয়ঙ্কর সামুদ্রিক দুর্ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপের মিক্সড ডাবলস প্রতিযোগিতায় রিচার্ড অভাবনীয় জয় হাসিল করেন। বিশ্বের সেরা ১০ টেনিস খেলোয়াড়ের তালিকায় তাঁর নাম যোগ হয়ে যায়।

Titanic wreckage: রহস্যময় টাইটানিক! আটলান্টিকের বুক চিরে কীভাবে উদ্ধার হল বিলাসবহুল এই জাহাজ?

সেনাবাহিনীর হয়ে কাজ করেন, জিতেছিলেন অলিম্পিক পদকও

১৯১৬ সালে আরও একবার তিনি জাতীয় খেতাব জয় করেন। আমেরিকার শীর্ষ বাছাই টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে তাঁর নাম নথিভূক্ত হয়ে যায়। টেনিস খেলার পাশাপাশি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন মার্কিন সেনাবাহিনীর হয়েও কাজ করেছিলেন রিচার্ড। তবে তাঁর টেনিস কেরিয়ারে সুবর্ণ অধ্যায় আসে ১৯২৪ সালে আয়োজিত প্যারিস অলিম্পিকে। এই প্রতিযোগিতায় তিনি হ্যাজেল হচকিস হোয়াইটম্য়ানের সঙ্গে জুটি বেঁধে মিক্সড ডাবলস বিভাগে সোনার পদক জয় করেন। টেনিস থেকে অবসর গ্রহণ করার পর রিচার্ড ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার হিসেবেও বেশ কয়েকবছর কাজ করেছিলেন। ১৯৫৭ সালে আন্তর্জাতিক টেনিসের পক্ষ থেকে তাঁকে 'হল অফ ফেম' সম্মান দেওয়া হয়েছিল। অবশেষে ১৯৬৮ সালের ২ জুন ৭৭ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন তিনি।

titanic tennis Olympics