Purba Bardhaman News: পোস্ট অফিসে লক্ষ লক্ষ টাকার 'প্রতারণা', পোস্টমাস্টারের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে প্রতারিতরা

Purba Bardhaman-Jamalpur: নিজেদের যাবতীয় অভিযোগ নিয়ে এর আগে স্থানীয় থানায় গিয়েছিলেন প্রতারিতরা। পুলিশ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ। তাই এবার ন্যায়বিচার চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন প্রতারিতরা।

author-image
Pradip Kumar Chattopadhyay
New Update
Purba Bardhaman News,jamalpur,fraud,post office,india post,west bengal news,পূর্ব বর্ধমান,জামালপুর,পোস্ট অফিস,প্রতারণা

Purba Bardhaman News: ছবির বাঁদিকে অভিযুক্ত তদানীন্তন পোস্টমাস্টার বিদ্যুৎ সুর, ছবির ডানদিকে প্রতারিত পাল পরিবারের সদস্যরা।

Allegation of fraud against a group of post office workers in Jamalpur, East Burdwan: চিটফান্ড খুলে কোটি-কোটি টাকা প্রতারণার ঘটনা একটা সময়ে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল গোটা রাজ্যে। জেলায়-জেলায় চিটফান্ড নিয়ে প্রতারণার ভুরি-ভুরি অভিযোগ উঠেছিল সেই সময়। এবার একই রকম প্রতারণার অভিযোগে কাঠগড়ায় খোদ ভারতীয় ডাক বিভাগ। কঠিন কায়িক পরিশ্রম করে রোজগার করা ১২ লক্ষাধিক টাকা পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর সাব পোস্ট অফিসে গচ্ছিত রেখে এখন সর্বসান্ত এক কুমোর পরিবার। সঞ্চয়ের টাকা ফিরে পেতে তাঁরা পুলিশ, জেলা ও রাজ্যের প্রধান ডাক বিভাগ সহ CBI দফতরেও অভিযোগ জানিয়ে ছিলেন। কিন্তু সুরাহা না হওয়ায় প্রতারিত পাল পরিবারের সদস্যরা এবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। উচ্চ আদালত কী ন্যায় বিচার দেয় সেদিকেই এখন তাঁরা তাকিয়ে রয়েছেন। 

Advertisment

কলকাতা হাইকোর্টে মামলাকারী পাল পরিবারের সদস্যরা জামালপুর হাটতলা এলাকার বাসিন্দা। নিম্নবিত্ত পরিবার। ষাটোর্ধ্ব পরিবারের কর্তা রণজিত পাল এখনও পারিবারিক পেশাকেই আঁকড়ে রয়েছেন। মাটির কলসি, হাঁড়ি সহ নানা সরঞ্জাম তৈরি করে তিনি জামালপুর হাটে বসে বিক্রি করেন। তাঁর স্ত্রী রাধারাণি পাল কঠিন ব্যধিতে আক্রান্ত হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রণজিত পালের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে মধুমিতা সবার বড়। তাঁর বিয়ে হয়েছে জামালপুর থানার অন্তর্গত চৌবেড়িয়া গ্রাম নিবাসী ব্যবসাদার যুবক উৎপল পালের সঙ্গে। বড় ছেলে অভিজিৎ করেন ইলেকট্রিকের কাজ। ছোট ছেলে সুরজিৎ জামালপুর বাজারে বসে ফল বিক্রি করেন।

সুরজিৎ পাল জানিয়েছেন, তাঁদের পরিবারের সকলেই কঠিন কায়িক পরিশ্রম করেন। পরিশ্রম করে রোজগার করা অর্থ থেকে কিছু কিছু অংশ তাঁরা জমিয়ে রাখতেন। জমানো টাকা জামালপুর সাব পোস্ট অফিসে গচ্ছিত রাখার বিষয়ে তাঁরা মনস্থির করেন। সেই মতো তিনি ছাড়াও তাঁর বাবা ও মা এবং দিদি ও জামাইবাবু জামালপুর পোস্ট অফিসে আলাদা আলাদা অ্যাকাউন্ট খোলেন। ২০২১ সালে ১ বছরের ’ফিক্সড ডিপোজিট’ স্কিমে তাঁরা নিজের নিজেদের টাকা অ্যাকাউন্টে জমা করেন। তাঁদের সবার মিলিয়ে জমা করা টাকার পরিমাণ ১২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। তদানিন্তন জামালপুর সাব পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার বিদ্যুৎ সুর ওই টাকা গ্রহণ করে নিয়ে সিল-স্ট্যাম্প দিয়ে তাঁদের সবার অ্যাকাউন্ট বই ইস্যু করে দেন।

আরও পড়ুন- West Bengal News Live: নৈরাজের বাংলাদেশে ধ্বংস মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, শেখ মুজিবের বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিল মৌলবাদীরা

Advertisment

কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন জামালপুর সাব পোস্ট অফিসে সঞ্চয়ের টাকা ফিক্সিড ডিপোজিট করে নিশ্চিন্তেই ছিলেন পাল পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু ফিক্সড ডিপোজিটের মেয়াদ ১ বছর উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন রণজিত পালের স্ত্রী রাধারাণী দেবী। চিকিৎসার জন্য তাঁকে কলকাতা সহ ভিনরাজ্যের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। তখন টাকার খুব প্রয়োজন হয়ে পড়লে পাল পরিবারের সদস্যরা অগ্রিম ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙিয়ে টাকা তুলে নেওয়ায় জন্য জামালপুর সাব পোস্ট অফিসে যান।

রাধারাণী দেবীর ছোট ছেলে সুরজিৎ পাল বলেন, “টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করার সময় জামালপুর সাব পোস্ট অফিস থেকে দেওয়া সমস্ত নথি নিয়ে আমরা টাকা তুলতে যাই। নথি দেখে ওই একই পোস্ট মাস্টার বিদ্যুৎ সুর আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে পোস্ট অফিস থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। উনি পরিস্কার জানিয়ে দেন, আমরা নাকি কোনও টাকা ফিক্সড ডিপোজিটই করিনি।"  একথা বলে পোস্ট মাস্টার তাঁদের পোস্ট অফিস থেকে এক প্রকার তাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ। 

আরও পড়ুন-Kolkata Weather Today:বিদায়বেলায় ফের ঘুরে দাঁড়াবে শীত, নতুন করে পারদ পতন কবে থেকে?

এমন ব্যবহারে পাল পরিবারের সদস্যরা বুঝে যান তাঁরা পোস্ট অফিসে ফিক্সড ডিপোজিট করে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। সুরজিৎ আরও জানান, প্রতারণার কথা জানাতে তাঁরা জামালপুর থানায় গিয়েছিলেন। কিন্তু থানা তাঁদের অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে। তখন আর উপায় খুঁজে না পেয়ে তাঁরা জামালপুর সাব পোস্ট অফিসের তদানিন্তন পোস্ট মাস্টার বিদ্যুৎ সুরের বিরুদ্ধে বর্ধমান আদালতে মামলা রুজু করেন।

একইসঙ্গে জেলা পুলিশ সুপার সহ জেলা ও রাজ্যের প্রধান ডাক বিভাগ এমনকী CBI দফতরেও ঘটনা সবিস্তার লিখিতভাবে জানান। বর্ধমান আদালত জামালপুর থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে থানা শুধুমাত্র একটা FIR রুজু করে আর তাঁদের কাছে থাকা পোস্ট অফিসের দেওয়া নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করেই দায় সারে। তাই ন্যায় বিচার পেতে গত বছরের শেষের দিকে তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছেন। 

আরও পড়ুন-Ganga Sagar: ধেয়ে আসছে সাগর, আনন্দ আয়োজনের মাঝে হারিয়ে যায় বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়া ঘর

মামলাকারী পাল পরিবারের আইনজীবী উদয় শংকর চট্টোপাধ্যায় বলেন, "পাল পরিবারের সদস্যরা কোনও চিটফাণ্ডে তাঁদের সঞ্চয়ের টাকা গচ্ছিত রাখেননি। ১২ লক্ষাধিক টাকা তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন পোস্ট অফিসে গচ্ছিত রেখে প্রাতারিত হয়েছেন। পোস্ট অফিস টাকা লুঠ করে নিয়েছে। এতবড় একটা প্রতারণার ঘটনার পরেও জামালপুর সাব পোস্ট অফিসের ওই পোস্ট মাস্টারের বিরুদ্ধে ভারতীয় ডাক বিভাগ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। জামালপুর থানাও কোন ব্যবস্থা নেয়নি। প্রতারিতরা সেই কারণেই হাইকোর্টে মামলা করেছেন। মামলায় CID তদন্তের দাবি রাখা হয়েছে। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি এই মামলার সিডি কল ফর করেছেন।"

আরও পড়ুন- Rachana Banerjee: মহাকুম্ভে একেবারে সন্ন্যাসিনীর বেশে রচনা, পুণ্যস্নান সেরে যোগী সরকারের ভূয়সী প্রশংসা

এদিকে অভিযুক্ত সেই পোস্ট মাস্টার বিদ্যুৎ সুর এখন আর জামালপুর সাব পোস্ট অফিসে কর্মরত নেই। তিনি অন্যত্র বদলি হয়ে গিয়েছেন। বুধবার ফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগই অস্বীকার করেন। তিনি পরিস্কার জানিয়ে দেন, "সব অভিযোগ মিথ্যা। আমার দফতরের তদন্তকারীরা আমার বক্তব্য নিয়েছে। আমার যা জানানোর তা আমি আমার দফতরকে জানিয়ে দিয়েছি।" যদিও বিদ্যুৎ সুরের দাবি নস্যাৎ করে দিয়ে জামালপুরের বাসিন্দা অঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলেন, “শুধু পাল পরিবারই নয়। এই ব্লকের আরও বহু মানুষ জামালপুর পোস্ট অফিসে টাকা রেখে যে প্রতারিত হয়েছেন, তা অনেকেই জানেন। সব মিলিয়ে প্রতারণার পরিমাণ প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি টাকা হবে। এই আর্থিক প্রতারণার নেপথ্যে গভীর ষড়যন্ত্র থাকতে পারে।" 

Bengali News Today Purba Bardhaman fraud case post office news in west bengal news of west bengal