/indian-express-bangla/media/media_files/2025/01/14/8yfBt7kDfzRtZs0aXs9L.jpg)
Malda News: তুমুল উত্তেজনা থাকায় এলাকায় পুলিশ পিকেট, (ছবি বাঁদিকে), ছবির ডানদিকে, জখম দুই তৃণমূল নেতাকে আনা হচ্ছে মালদা মেডিক্যালে।
Alleged murder of Tmc worker due to dispute between 2 groups of Tmc in Kaliachak of Malda: মঙ্গলবার সাতসকালে মালদার কালিয়াচকে (Kaliachak) তৃণমূল নেতা সহ তিনজনকে ইঁট দিয়ে মাথা থেঁতলে এবং গুলি চালিয়ে হামলার অভিযোগ ওঠে একদল দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। দুষ্কৃতীদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে এক তৃণমূলকর্মীর। এরই পাশাপাশি জখম হয়েছেন স্থানীয় তৃণমূলের দুই নেতা। আহতদের সংকটজনক অবস্থায় ভর্তি করানো হয়েছে মালদা মেডিকেল কলেজে।
মঙ্গলবার সকাল ৯ টা নাগাদ এই হামলার ঘটনাটি ঘটেছে কালিয়াচক থানার নওদা যদুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মোমিনপাড়া নয়াবস্তি এলাকায়। হামলার ঘটনার খবর পেয়ে ওই এলাকায় পৌঁছায় কালিয়াচক থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যে পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত তৃণমূল কর্মীর নাম আতাউর শেখ (৫০)। জখম হয়েছেন আরও দুই তৃণমূল নেতা বকুল শেখ (৪৮) এবং এসারুদ্দিন শেখ (৩৫)। এরা সম্পর্কে দুই ভাই। আহত বকুল শেখ তৃণমূলের নওদা যদুপুর অঞ্চল কমিটির সভাপতি পদে রয়েছেন। অপর আহত এসারুদ্দিন শেখ নওদা যদুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল দলের নির্বাচিত সদস্য। বর্তমানে তিনি সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতার পদে রয়েছেন।
আরও পড়ুন- Malda Shootout: বাবলা খুনের আবহেই ফের শুটআউট মালদায়, নিহত তৃণমূল কর্মী, আহত অঞ্চল সভাপতি-সহ কয়েক জন
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন সকালে মোমিনপাড়া নয়াবস্তি এলাকায় একটি ড্রেনের শিলান্যাস কর্মসূচিতে গিয়েছিলেন স্থানীয় তৃণমূলের অঞ্চল কমিটির সভাপতি বকুল শেখ এবং তার ভাই তথা নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য এসারুদ্দিন শেখ। তাঁর সঙ্গে কয়েকজন দলের কর্মী সমর্থকেরাও ছিলেন। ওই কর্মসূচি থেকে ফেরার সময় আচমকা ১৫ থেকে ২০ জনের সশস্ত্র দুষ্কৃতীর একটি দল ওই দুই তৃণমূল নেতার ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ। সেই সময় দুষ্কৃতীদের ছোঁড়া গুলি মাথায় লাগে তৃণমূল কর্মী আতাউর শেখের। ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় তাঁর। এরপরই ওই দুই তৃণমূল নেতাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। সেই গুলি মাথার পাশ দিয়ে ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। এরপরই ওই দুই তৃণমূল নেতাকে ইঁট দিয়ে মাথা থেঁতলে খুনের চেষ্টা চালায় হামলাকারীরা।
এদিকে, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে নওদা যদুপুর এলাকায় জাকির জাকির শেখের গোষ্ঠী এবং বকুল শেখের গোষ্ঠীর বিবাদ দীর্ঘদিনের। ক্ষমতা এবং এলাকা দখলের লড়াই নিয়ে মূলত এই দুই গোষ্ঠীর লড়াই। তৃণমূলের ওই দুই নেতার ওপর হামলা এবং দলীয় এক কর্মীকে খুন করার অভিযোগ উঠেছে জাকির গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।
আহত বকুল শেখের এক ভাই তথা জেলা তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের সহ-সভাপতি মহম্মদ আজমল বলেন, "জাকির শেখ কংগ্রেস করতো। কয়েক মাস আগে তৃণমূলে যোগ দেয়। কালিয়াচক ১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সারিউল ইসলামের ছত্রছায়ায় রয়েছে জাকির শেখের গোষ্ঠী। এদিন ওরাই পরিকল্পনা করে বকুল এবং এসারুদ্দিনের ওপর গুলি চালায়, হামলা করে। দুষ্কৃতীদের সেই গুলিতেই বকুলের এক অনুগামী আতাউরের মৃত্যু হয়। এলাকায় জাকির গোষ্ঠীর লোকেরা কোনও উন্নয়নমূলক কাজ করতে দিচ্ছে না। যখন তখন সন্ত্রাস কায়েম করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এনিয়েই বকুল ও এসারুদ্দিনেরা প্রতিবাদ জানিয়েছিল। তার ফলস্বরূপ এদিন হামলা। পুরো বিষয়টি নিয়ে জাকির শেখ, নাসির শেখ সহ তার দলবলের বিরুদ্ধে কালিয়াচক থানায় লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন- Flat Building Leaning: বাঘাযতীনে হইহই কাণ্ড! আচমকা একদিকে হেলে পড়ল চারতলা ফ্ল্যাট-বাড়ি
অন্যদিকে এই হামলার ঘটনার পর জাকির শেখের সঙ্গে কোনওভাবে যোগাযোগ করা যায়নি। কালিয়াচক ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি সারিউল ইসলাম জানিয়েছেন, যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এখানে রাজনীতির ব্যাপার নেই। পুরনো বিবাদকে ঘিরেই এই ধরনের হামলার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
আরও পড়ুন- Cyber Crime: খোদ গোয়েন্দা পুলিশ আধিকারিকের নামেই ভুয়ো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট! গ্রেপ্তার ছাত্র
উল্লেখ্য, গত ২ জানুয়ারি ইংরেজবাজার শহরের মহানন্দাপল্লী এলাকায় দুষ্কৃতীদের ছোঁড়া গুলিতে খুন হন তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি তথা ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাবলা সরকার। সেই ঘটনার রেষ কাটতে না কাটতে ফের ১২ দিনের মাথায় তৃণমূল নেতার ওপর প্রকাশ্যে হামলা এবং তৃণমূল কর্মীকে গুলি করে খুন। এব্যাপারে জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক গোপাল সরকারের দাবি, "গোষ্ঠী কোন্দলের জেরেই খুন হয়েছেন তৃণমূল কর্মী। দুই জন তৃণমূল নেতা জখমও হয়েছেন। জাকির শেখ আমাদের দলে কোনওদিনই ছিল না। এটা তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ লড়াই।"
তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সী বলেন, "জাকির শেখ কোনওদিনই তৃণমূল করেনি। ও বরাবরই কংগ্রেসের একজন স্থানীয় নেতা হিসাবে পরিচিত। জাকির শেখের বিরুদ্ধে বিগত দিনেও বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছিল। এখন কংগ্রেস নিজেদের দোষ ঢাকতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে।" জেলা পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব জানিয়েছেন, এই হামলার ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এলাকায় পুলিশি পিকেট বসানো হয়েছে। বাকি হামলাকারীদেরও খোঁজ চালানো হচ্ছে।