/indian-express-bangla/media/media_files/2025/08/21/owaisi-2025-08-21-20-25-48.jpg)
Asaduddin Owaisi & Narendra Modi: আসাদউদ্দিন ওয়েইসি ও নরেন্দ্র মোদী।
ভারতে আশ্রিত প্রাক্তন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঘিরে ফের রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হলো। অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (AIMIM) প্রধান ও হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসি বৃহস্পতিবার কেন্দ্রকে তীব্র আক্রমণ করে বলেন, “যদি সত্যিই সরকার অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাতে চায়, তবে আগে শেখ হাসিনাকে নিজ দেশে পাঠানো উচিত।”
আগস্ট ২০২৪-এ বাংলাদেশে ব্যাপক গণআন্দোলনের জেরে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। এরপর থেকে তিনি ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। ঠিক এই বিষয়টিকে কেন্দ্রকে কটাক্ষ করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করলেন ওয়েইসি।
ওয়েইসির বক্তব্য-
‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর আইডিয়া এক্সচেঞ্জ অনুষ্ঠানে ওয়েইসি বলেন, “আমাদের দেশে একজন বাংলাদেশি নেত্রী রয়েছেন, তিনি বক্তৃতা দিয়ে সমস্যা তৈরি করছেন। অথচ বাংলাভাষী ভারতীয়দের, বিশেষত মালদা ও মুর্শিদাবাদের মানুষদের, পুণে থেকে বিমানে এনে কলকাতায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। এটাই আসল বৈপরীত্য।”
আরও পড়ুন- mysterious needles:যুবকের শরীরে রহস্যজনক সুচ, 'কালাজাদু' আতঙ্ক পরিবারের! টিম পাঠাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর
তিনি অভিযোগ করেন, “যে কেউ বাংলায় কথা বললেই তাঁকে বাংলাদেশি বলা হচ্ছে। এটি নিছক বিদেশি-ভীতি (জেনোফোবিয়া)-র প্রতিফলন।”
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রেক্ষাপট-
ওয়েইসি আরও বলেন, “ঢাকায় যে বিপ্লব ঘটেছে, ভারত সরকারের তা মেনে নেওয়া উচিত। বর্তমান সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা দরকার।” রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বক্তব্য মানে সরাসরি শেখ হাসিনাকে ভারতের মাটিতে আশ্রয় দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা। একইসঙ্গে বর্তমান বাংলাদেশের সরকারকে স্বীকৃতি ও সহযোগিতা দেওয়ার দিকেও ইঙ্গিত করে।
আরও পড়ুন-
অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রভাব-
বিগত কয়েক মাস ধরে দেশে বাংলাভাষী মানুষদের লক্ষ্য করে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ তকমা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠছে। ওয়েইসি সেই প্রসঙ্গে বলেন, “গরিব শ্রমিকদের দেশছাড়া করা হচ্ছে, অথচ প্রকৃত বাংলাদেশি নেত্রীকে আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। এ কেমন দ্বিচারিতা?”
প্রতিক্রিয়া-
ওয়েইসির এই বক্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক মহলে সাড়া পড়েছে। বিজেপি এখনও সরাসরি কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, এই মন্তব্য ভবিষ্যতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ওপরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সংখ্যালঘুদের অবস্থান, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা এবং আন্তর্জাতিক ইস্যুতে কেন্দ্রের নীরবতা—সবকিছু নিয়েই তীব্র সমালোচনা করলেন AIMIM প্রধান ও হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসি।
আরও পড়ুন- Kaushiki Amavasya 2025:শুক্রবার কৌশিকী অমাবস্যা! সেজে উঠেছে তারাপীঠ, নিরাপত্তার চাদরে মন্দির নগরী
আটক শিবির ও নাগরিকত্ব প্রশ্নে উদ্বেগ-
ওয়েইসি সরাসরি প্রশ্ন তোলেন, “পুলিশের কী অধিকার আছে মানুষকে আটক শিবিরে পাঠানোর? আজ সবাই যেন স্বঘোষিত বিচারক হয়ে গিয়েছে।” তিনি সতর্ক করেন, বিহারে চলা স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন (SIR) প্রক্রিয়া অনেক প্রকৃত নাগরিককে, বিশেষ করে মুসলিম ভোটারদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে পারে।
ওয়েইসির দাবি, “বিহারে আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, অধিকাংশ মুসলিমের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। যদি এই প্রক্রিয়া সারা দেশে প্রয়োগ হয়, তাহলে কী হবে?” তিনি নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকার প্রসঙ্গ তুলে বলেন, যদি কোনও ভোটারকে তিনবার খুঁজে না পাওয়া যায় বা সন্দেহজনক মনে হয়, তবে কর্তৃপক্ষ ‘সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট, ১৯৫৫’-এর অধীনে ব্যবস্থা নিতে পারে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভারতের অবস্থান-
ওয়েইসি জানান, তিনি বিজেপি নেতা বৈজয়ন্ত পাণ্ডার নেতৃত্বে সংসদীয় প্রতিনিধিদলের অংশ হিসেবে মে মাসের পাহালগাম হামলার পর কয়েকটি দেশে সফর করেছিলেন। তার অভিযোগ, “৭ মে-র হামলার পরপরই ভারত সরকার আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে পারত। কিন্তু তা করা হয়নি।” তিনি জানান, বিদেশে তাঁদের ভালোভাবে গ্রহণ করা হলেও প্রশ্ন উঠেছে কেন ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে কথা বলে না। ওয়েইসির দাবি, “আমরা বলেছি বহুবার কথা হয়েছে, কিন্তু কোনও ফল আসেনি। তবে আমরা ভারতের অবস্থান তুলে ধরতে পেরেছি এবং প্রচার ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছি যে ভারত নাকি পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে চায়।”
BJP ও বিরোধীদের সমালোচনা-
ওয়েইসি কড়া ভাষায় অভিযোগ করেন, সংখ্যালঘু ও অন্যায়ের প্রশ্নে বিজেপি সরকার যেমন নীরব, তেমনি তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিও মুখ খুলছে না। তিনি বলেন, “এই রাজনীতি ২০১৪ থেকে শুরু হয়নি। তবে ২০১৪ সালের পর থেকে তা স্পষ্ট রূপ নিয়েছে। আজকের রাজনৈতিক পরিবেশে বড় বড় ধর্মনিরপেক্ষ দল সংখ্যালঘুদের বিষয় নিয়ে কথা বলতে ইতস্তত করছে।”
তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, “৭/১১ ট্রেন বিস্ফোরণ মামলা বা ২০০৮ সালের মালেগাঁও বিস্ফোরণ—এইসব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতেও তাদের অবস্থান স্পষ্ট নয়। সংখ্যালঘুদের কথা বলা না হলেও অন্তত অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা উচিত। যদি তা-ও না বলা হয়, তবে তারা আসলে কীসের পক্ষে?”
গাজা সংঘাত নিয়ে তোপ-
পশ্চিম এশিয়ার প্রসঙ্গে আসাদউদ্দিন ওয়েইসি মোদি সরকারের নীরবতাকে “অপরাধে সহযোগিতা” বলে অভিহিত করেন।তাঁর অভিযোগ, “গাজায় গণহত্যা চলছে, ৬৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ২০ হাজার শিশু। অথচ প্রধানমন্ত্রী একটি শব্দও উচ্চারণ করছেন না। তারপরও বলা হয় আমরা দুই-রাষ্ট্রের সমাধান চাই! ফিলিস্তিনিদের যদি প্রতিদিন হত্যা করা হয় তবে সেই রাষ্ট্র কোথায় গড়বে?”তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন, “মোদি সরকার আসলে নীরব থেকে নেতানিয়াহুর সরকারের গণহত্যাকে পরোক্ষভাবে সমর্থন করছে।”