Ashmika Das Ranaghat: এ যেন যুদ্ধজয়! অবশেষে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর সুস্থ হওয়ার পথে রানাঘাটের 'ছোট্ট অশ্মিকা'। গোটা বাংলার মানুষের আর্শীবাদ আর শুভকামনা প্রথম থেকেই সঙ্গে ছিল একরত্তি শিশু কন্যার সঙ্গে। অবশেষে জোগাড় হল ১৬ কোটির ইঞ্জেকশনের প্রথম কিস্তির ৯ কোটি টাকা। জন্মের পর থেকেই স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি (SMA) টাইপ ওয়ান বিরল রোগে আক্রান্ত অশ্মিকা। তিনমাস যখন বয়স তখন থেকেই অশ্মিকাকে সুস্থ করে তোলার লড়াই শুরু হয়। কঠিন হলেও লড়াইয়ে হাল ছাড়েন নি বাবা শুভঙ্কর দাস। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে শুরু হয় মেয়েকে সুস্থ করে তোলার লড়াই।
বাবা শুভঙ্কর দাস স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন, "মেয়ে যখন হয় তখন এত খুশি হই, যে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। তবে সেই সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। মুহূর্তেই সব কিছু বদলে যায়। চোখের সামনে একরত্তি মেয়েটা এত কষ্ট পাচ্ছে আমি নিরুপায়। মানুষ নিজে থেকে এগিয়ে আসছেন। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন সকলেই। একাধিক হেভিওয়েট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পীরা এগিয়ে এসেছেনওর চিকিৎসার জন্য সাহায্যের আবেদনও জানিয়েছেন। ক্রাউড ফান্ডিং ছাড়া আমাদের কাছে কোন বিকল্প ছিল না। সকলের কাছে একটাই অনুরোধ জানিয়েছিলাম যতটুকু পারবেন মেয়ের চিকিৎসা বাবদ সাহায্য করবেন। আপনার ছোট্ট সাহায্য'ই আমার মেয়েকে সুস্থ জীবন দিতে পারে"। বহু মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের সকলের কাছে আমি ও আমার পরিবার কৃতজ্ঞ"।
'তিন মাস বয়স পর্যন্ত বাকি বাচ্চাদের মতোই সবকিছুই স্বাভাবিক চলছিল। পা তুলত, হাত নাড়াত। সাড়ে তিন মাস বয়স যখন হল, তখনই হঠাৎ একদিন দেখলাম পা-টা আর তুলছে না। তিন-চার মাসের বাচ্চাদের ঘাড় শক্ত হয়ে যায় সাধারণত। উবুড় হয়ে যায়। কিন্তু ও কিছুই করতে পারছিল না'। এমনটাই জানিয়েছেন অস্মিকার মা লক্ষ্মী সরকার দাস।
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অশ্মিকাকে সুস্থ করে তুলতে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান 'প্রবাসে ঘরকন্না'র মহুয়া গঙ্গোপাধ্যায়। বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় গায়ক কৈলাস খের। তালিকায় ছিলেন কিংবদন্তী গায়িকা শুভমিতাও। দিনকয়েক আগেই অশ্মিকার বাবা-মা দেখা করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। মেয়ের চিকিৎসা বাবদ সাহায্যের আবেদনও জানিয়েছেন। এত প্রচেষ্টা, লাখো মানুষের প্রার্থনা যেন বিফলে না যায়, সুস্থ হয়ে স্বাভবিক জীবনে ফিরতে পারে ছোট্ট অস্মিকা সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বাংলার মানুষের কাছে। মদন মিত্র থেকে শুভেন্দু অধিকারী সকলেই সামর্থ্য অনুসারে ছোট্ট মেয়েটিকে সুস্থ করতে এগিয়ে এসেছেন। শেষমেশ জোগাড় হল ১৬ কোটির ইঞ্জেকশনের প্রথম কিস্তির ৯ কোটি টাকা।
সোমবার ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়িতে মাতৃ সেনা চ্যারিটেবল ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ৬০ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেওয়া হল অস্মিকার পরিবারের হাতে। ওই দিন তাদের হাতে চেক তুলে দেন মাতৃ সেনার সভানেত্রী সোমা ঠাকুর ও অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। জোগাড় হয় ইঞ্জেকশনের প্রথম কিস্তির ৯ কোটি টাকা। লড়াই এখনও শেষ হয়নি । বাকি এখনও ৭ কোটি টাকা। তবুও ইঞ্জেকশনের প্রথম কিস্তির টাকা জোগাড় হতেই বাংলা তথা আপামোর মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন অশ্মিকার বাবা শুভঙ্কর দাস।
এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে শুভঙ্কর লিখেছেন, "আজ আমরা যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, তা এক সময় কেবল একটি স্বপ্ন ছিল — আমাদের মেয়ে আস্মিকাকে বাঁচানোর স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন আজ বাস্তব হয়েছে আপনাদের সকলের অসীম ভালোবাসা, উদারতা আর মানবতার জন্য। একজন বাবা-মা হিসেবে আমাদের জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় ছিল যখন জানতে পারলাম আমাদের ছোট্ট সন্তান SMA নামক এক মরণব্যাধিতে আক্রান্ত। চোখের সামনে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যাওয়া আমাদের সন্তানকে বাঁচানোর জন্য আমরা যখন শেষ চেষ্টাটুকুও করে ফেলছিলাম, তখন আপনারাই ছিলেন আমাদের শেষ ভরসা। আপনারা কেউ আত্মীয় নন, কেউ বন্ধু নন, এমনকি কেউ কেউ তো কখনো দেখেননি আমাদের মেয়েকে। তবুও আপনারা সবাই একে একেএগিয়ে এসেছেন — কেউ ছোট্ট একটা পরিমাণ দিয়েছেন, কেউ প্রচার করেছেন, কেউ রাত জেগে প্রার্থনা করেছেন, কেউ নিজের সঞ্চয় পর্যন্ত আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। এই ত্যাগ, এই ভালোবাসা, এই মানবতা — এই সবকিছুই আমাদের মনে করিয়ে দেয়, পৃথিবী এখনও সুন্দর, এখনও হৃদয়বান মানুষের অভাব নেই। আজ আমরা বলতে পারি, হ্যাঁ, আমরা পারলাম। আমরা আস্মিকার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসার তহবিল সংগ্রহ করতে পারলাম। আর এটা একা আমাদের নয়, এটা আপনাদের সবার জয়। আমরা জানি সামনে এখনও অনেক পথ বাকি, চিকিৎসা, যত্ন, সময় — কিন্তু আজকের এই দিনটি আমাদের নতুন আশার সূর্য এনে দিলো। এই সাফল্য, এই বিজয় শুধুই আস্মিকার নয় — এটি মানবতার, এটি একসাথে দাঁড়ানোর শক্তির। আমরা আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো আপনাদের কাছে। হয়তো সবার নাম নিতে পারব না, কিন্তু প্রতিটি সাহায্যের হাত, প্রতিটি ভালোবাসার বার্তা, আমাদের হৃদয়ে চিরকাল অমিলন হয়ে থাকবে"।