/indian-express-bangla/media/media_files/2025/08/15/suvendu-becha-2025-08-15-12-58-19.jpg)
Becharam Manna & Suvendu Adhikari: বেচারাম মান্না ও শুভেন্দু অধিকারী।
'কেন্দ্রীয় সরকারকে আলুচাষিদের ভর্তুকি দিতে হবে, দেশের বাইরেও উদ্বৃত্ত আলু রফতানির ব্যবস্থা করতে হবে', এই দাবিই উঠল এবার সিঙ্গুরের মাটি থেকে। সিঙ্গুরের রতনপুরে স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের কৃষি বিপনন মন্ত্রী বেচারাম মান্নার খাসতালুকে এসে BJP-র কিষাণ সেলের সভায় উপস্থিত থেকে শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেছিলেন, "মমতার সরকার ভিনরাজ্যে আলু পাঠানো বন্ধ করে আলুচাষিদের শেষ করে দিয়েছেন।" গতকাল ওই একই জায়গায় সভা করে বিরোধী দলনেতাকেই যেন পাল্টা জবাব দিলেন তৃণমূলের নেতারা।
আলুর দাম নিম্নমুখী, প্রতিবাদ স্বরূপ রাস্তায় আলু ফেলে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল বিজেপি। আর এই ঘটনাকেই চাষীদের অপমান হিসেবে তুলে ধরেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সিঙ্গুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের এই প্রতিবাদ সভায় রাজ্যের দুই মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার ও বেচারাম মান্না, হরিপালের বিধায়ক করবী মান্না, চাঁপদানির বিধায়ক অরিন্দম গুইন, হুগলি জেলা পরিষদের সভাদিপতি রঞ্জন ধারারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, "সিঙ্গুর কৃষক আন্দোলনের পীঠস্থান। সেখানে প্রধান ফসল আলু। আর সেই আলু আমাদের আহার দ্রব্য। অর্থাৎ মা লক্ষীর আশীর্বাদ। আর এই মা লক্ষীর দ্রব্য পা দিয়ে মাড়িয়েছে। মা লক্ষীকে সিঙ্গুরে পা দিয়ে মাড়িয়ে গেছে বিরোধী দলনেতা। এরা বাংলাকে অশান্ত করতে নেমেছে। মা লক্ষী, মা সরস্বতীকে এরা সম্মান দেয় না। কটা এই এলাকার মানুষ ছিল? এলাকার একটা চাষিও উঁকি মারেনি। বিজেপি মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। নাসিকের পেঁয়াজ চাষিদের মতো আলুচাষিদেরও ভর্তুকি দিতে হবে।"
শুভেন্দু অদিকারী সম্পর্কে বেচারাম মান্না বলেন, "শুভেন্দু তো কৃষক আন্দোলনে জড়িয়ে ছিলেন। এখন ভোল পাল্টেছেন। শুভেন্দুর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার খুব শখ। ও দাদা থেকে দাদু হবে তারপরেও যদি কোনও ওয়ার্ড থাকে সেটাও হবে, কিন্তু কোনওদিন মুখ্যমন্ত্রী হতে পারবে না। তোমাদের এমন ভাবে মাথায় রাগ উঠেছে যে পা দিয়ে মাড়িয়েছো সেই পাকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভেঙে দেবে সিঙ্গুরের গণতন্ত্রপ্ৰিয় মানুষ।"
আরও পড়ুন- Road accident:গঙ্গাসাগরে পুণ্যাস্নান সেরে আর বাড়ি ফেরা হল না...পথেই বীভৎস দুর্ঘটনার বলি ১০
তিনি আরও বলেন, "প্রকৃত কৃষক বন্ধু মমতা। বিজেপি আলু নিয়ে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছে। এবারে আলুর উৎপাদন হয়েছে ১৪২ টন। অতিরিক্ত আলু উৎপাদন। বাইরেও তাই। রাজ্যে রেকর্ড পরিমান হয়েছে। গত বছর এখানে আলুর দাম মানুষকে ৪৫ টাকা কেজি খেতে হতো যদি না মমতা ব্যানার্জী হাল ধরতেন। শুভেন্দু বাবুর যদি এতোই আলু চাষিদের ওপর দরদ তো রাসায়নিক সারের দাম কমান। ২০১৯ সালে যে সারের বস্তা ১১০০ টাকা ছিল এখন তার দাম ১৮৫০টাকা। জবাব দিতে পারবেন শুভেন্দু?। হঠাৎ করে কৃষক দরদী হয়ে আলু মারাতে এসেছিলেন। কুকুর ছাগল ও ঘুরে তাকায় না। দেড়শো কৃষক ছিল না।"
তাঁর কথায়, "বলছেন ক্ষমতায় এলে সিঙ্গুরের জমিতে কারখানা হবে। আপনার বাবার জমি? জমি তো চাষিদের। জোর করে চাষির জমি নিতে এলে আবার আন্দোলন হবে। বলছে, বেচারাম ডাকাত। আগে বলেছিল চুন সুড়কির ব্যবসা করে। প্রতিবার আসে একটা করে তকমা লাগায়। যেদিন বেচারাম সত্যিকারের ডাকাত হবে সেদিন অধিকারী পরিবার থাকবে না। বেচারাম আন্দোলন করে উঠে এসেছে। আলু ব্যবসায়ী দের বলবো এদের প্ররোচনায় পা দেবেন না। বিভ্রান্ত হবেন না। মমতা বন্দোপাধ্যায় আছেন। আপনাদের চিন্তা নেই।"
উল্লেখ্য গত বুধবার শুভেন্দু অধিকারী একটা সার্কুলারের কপি দেখিয়ে বলেছিলেন, "চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে, ১৫ টাকা কিলো দরে আলুচাষিদের কাছ থেকে ২ কোটি ২০ লক্ষ বস্তা আলু কিনবে বলে সার্কুলার জারি করেছিল। এগ্রিকালচার মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট থেকে এই সার্কুলার জারি করা হয়। কে করে? এখানকার ডাকাত বেচারাম মান্না (সিঙ্গুরের বিধায়ক ও রাজ্যের কৃষি বিপনন মন্ত্রী)। সাবসিডি দিয়ে কিনবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। লোক দেখানো কয়েক হাজার বস্তা কিনে বন্ধ করে দিয়েছে।"
শুভেন্দুর ওই বক্তব্য নস্যাৎ করে রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী তথা কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদারের বক্তব্য, "চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি সার্কুলার জারি করা হয়েছিল ৯ টাকা কেজি দরে চাষিদের কাছ থেকে আলু কেনা হবে এবং তার সময়সীমা ছিল ৩১ মার্চ অবধি। এর মধ্যে যতজন চাষি পেরেছেন আলু বিক্রি করেছেন। বিরোধী দলনেতা অসত্য ভাষণ দিয়ে গেছেন। আমার কাছে যা তথ্য আছে তা হলো দেশের মধ্যে আমরা আলু উৎপাদনে দ্বিতীয় রাজ্য। ১৪২ লক্ষ টন আলু নিয়ে আমরা দ্বিতীয়। উত্তরপ্রদেশ আলু উৎপাদনে প্রথম। তারা কি করলো? আজকেও আমি খবর নিয়েছি ওখানে হিমঘরের ভাড়া দ্বিগুন। তৈরি আলু ১০ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। আর শুভেন্দুবাবু চাষীদের অলীক স্বপ্ন দেখাচ্ছেন?"