/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/20/kali-2025-10-20-10-17-12.jpg)
Kali Puja 2025:প্রাচীন এই কালীপুজো ঘিরে আজও এলাকায় উৎসবের মেজাজ।
Mahashankh mala Belpukur:শ্রীচৈতন্যের মাতুলালয় বেলপুকুর গ্রামে শাক্ত উপাসনা আজও বিস্ময়ের। রামচন্দ্রর হাত ধরে শুরু হওয়া করা সেই কালীপুজো বেলপুকুরে গ্রামে এখন সার্বজনীন হয়ে উঠেছে। ভট্টাচার্যদের ন'বাড়িতে থাকা মহাশঙ্খ মালা নিয়ে আজও জনমানসে চর্চা হয়। চৈতন্যর মাতুলালয় বেলপুকুর গ্রামে শাক্ত উপাসনার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের ইতিহাস। মহাপ্রভুর শ্রীচৈতন্যদেবের বৈষ্ণব ধর্ম প্রচারে সর্বত্র আলোড়ন পড়ে যায়।
চারিদিকে এই প্রচারের আলো ছড়িয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে কী করে তাঁর মাতুলালয়ে শাক্তের এই উপাসনা হয়? এই নিয়ে বিস্ময় জাগে। তর্ক-বিতর্ক থেকে আলোচনা হয়। আজও একই ভাবে শ্যামা আরাধনার ঐতিহ্য বহন করে বেলপুকুর গ্রামে বাড়ি বাড়ি, ক্লাব, বারোয়ারি ছোট বড় মিলিয়ে তিনশোর বেশি কালী পুজো ধুমধামের সঙ্গে হয়। এই সংখ্যাটা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধুবুলিয়া থানার বেলপুকুর বরাবর বর্ধিষ্ণু গ্রাম।
বেলপুকুরের বাচস্পতি পাড়াতে মহাপ্রভু চৈতন্যর দাদু নীলাম্বর চক্রবর্তী থাকতেন। তাঁর কন্যা শচীদেবী। জানা যায়, মা শচীদেবীর সঙ্গে দাদুর বাড়িতে চৈতন্যদেব আসতেন। সে সময় বেলপুকুর গ্রামের চারদিকে ঘন জঙ্গল ছিল। দেবদারু গাছে ঘেরা ছিল। পশ্চিম দিক দিয়ে বয়েছে ভাগীরথী নদী। উত্তরে তাতলার খাল। দক্ষিণে ছাড়িগঙ্গা। এরকম পরিবেশ তন্ত্র সাধনার উপযোগী। নদীয়ার তৎকালীন রাজা রুদ্ররায়ের আমলে বেলপুকুর গ্রামে আসেন ঢাকার বিক্রমপুর কনকসার থেকে কালি সাধক রামচন্দ্র ভট্টাচার্য। তিনি পঞ্চমুন্ডের আসনে বসে মহাশঙ্খ বা জপমালা নিয়ে সাধনা শুরু করেন।
আরও পড়ুন-Kali Puja 2025:ভক্তিস্রোতে ভেসে নৈহাটি! বড়মা'র কালীপুজোয় নজিরবিহীন সমাগম,জেনে নিন পুজোর নির্ঘণ্ট
নদিয়া-রাজের রাজা রুদ্র রায় (১৬৮৩-১৬৯৪) সাধক রামচন্দ্রের অলৌকিক শক্তি দেখে তাকে জমি দান করেন। একইসঙ্গে এই গ্রামে শক্তি আরাধনার জন্য উৎসাহিত করেন। বৈষ্ণব ধর্মের বাড়-বাড়ন্ত আটকাতে গ্রামে এই সময় করমুক্ত করা থেকে কালি পুজোর জন্য খরচও প্রদানও তিনি করেছিলেন। একসময় রামচন্দ্রর শুরু করা সেই কালিপুজো বেলপুকুরে গ্রামে গণ বিস্তৃতি লাভ করেছে। তাঁর সন্তানদের করা পুজো বড়, মেজো, সেজো, ন' বাড়ির পুজো নামে বিখ্যাত হয়েছে। এই ন'বাড়িতে থাকা মহাশঙ্খ মালা পুজোর শেষ দিকে বলির পর খুলির মধ্যে রেখে কারণ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন-Kali Puja 2025 weather:কালীপুজোয় ঝলমলে আকাশ, রাজ্যজুড়ে মনোরম আবহাওয়া, কোথাও কোথাও বৃষ্টির ইঙ্গিত
কারণ (মদ) দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খুলি শুষে নেয়। এক বোতল, দুই বোতল এভাবে একাধিক বোতল মদ দেওয়ার পরও শুষে নেয়। এ দৃশ্য দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রচুর মানুষ আসেন ভট্টাচার্য বাড়িতে। মহাশঙ্খর মালা কী? বেলপুকুর গ্রামে আমাবস্যার রাতে অপমৃত্যু হয় এক চন্ডাল পরিবারের সধবা মহিলার। তাঁর আঙুলের কর, নাড়ি দিয়ে তৈরি হয় এই মহাশঙ্খ-এর মালা। সেই মালা ও মাথার খুলি আজও রয়েছে ভট্টাচার্য পরিবারে। মহাশঙ্খর মালাটি খুলিতে ঢুকিয়ে রাখা হয়। দেবী এখানে দক্ষিণা কালী।
পুজোটা হয় তান্ত্রিক-মতে। তাই বলির প্রচলন আছে। ভোগে সোল মাছের চাটনি, ইলিশ সহ একাধিক মাছ, মাংস থাকে। দেবীকে রুধি দিয়েও ভোগ নিবেদন করা হয়। রুধি কি? বলির ছাগলের কাটা মাথা থেকে চুঁইয়ে পড়া রক্তের সঙ্গে পাকা কলা মিশিয়ে ভোগ দেওয়াকে রুধি বলা হয়। এছাড়াও ভোগে একাধিক ভাজা, তরকারি, পোলাও, পায়েস থাকে। পুজোর ভোগে একসঙ্গে পাঁচশোর বেশি মদের বোতল পড়ে।
এই নিয়ে ন' বাড়ির পুজো করা জলা ভট্টাচার্য বলেন, "পুজোটা এখানে আগের মতো তান্ত্রিক মতে করা হয়। গোটা পুজোতে গঙ্গা জল ব্যবহার হয় না, কারণ দিয়ে পুজো হয়।" বেলপুকুরের সর্দার পাড়া, ঘোষ পাড়া সহ কয়েকটি পুজোর প্রতিমা ২৫ ফুটের বেশি হয়। এ নিয়ে ভট্টাচার্য বাড়ির কর্তা জলা ভট্টাচার্য বলেন, "গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে বড় বড় দক্ষিণা কালি হয়। এই পুজোকে কেন্দ্র করে আত্মীয়- স্বজনরা সকলে একত্রিত হয়। পুজোর সময় তারা গ্রামে থাকে। একসঙ্গে আড্ডা, খাওয়া সমস্ত কিছু হয়। খুব আনন্দ হয়।"