Bengal SIR: ফের SIR আতঙ্কে মৃত্যুর ভয়ঙ্কর অভিযোগ, তোলপাড় বাংলার রাজ্য-রাজনীতি

পরিযায়ী শ্রমিক বিমল সাঁতরার তামিলনাড়ুতে অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। তৃণমূলের দাবি, এসআইআর আতঙ্কেই মৃত্যু হয়েছে বিমলের, তবে সিপিএম ও বিজেপি এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলছে শুধুই রাজনৈতিক প্রচার।

পরিযায়ী শ্রমিক বিমল সাঁতরার তামিলনাড়ুতে অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। তৃণমূলের দাবি, এসআইআর আতঙ্কেই মৃত্যু হয়েছে বিমলের, তবে সিপিএম ও বিজেপি এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলছে শুধুই রাজনৈতিক প্রচার।

author-image
Pradip Kumar Chattopadhyay
New Update
বিমল সাঁতরা, Bimal Santara death, এসআইআর আতঙ্ক, Special Intensive Revision, পূর্ব বর্ধমান, জামালপুর, তৃণমূল কংগ্রেস, অলক মাঝি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বপন দেবনাথ, রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, সিপিএম, বিজেপি, মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র, সমর হাজরা, তামিলনাড়ু পুলিশ, Orathanadu PS, তামিলনাড়ু দুর্ঘটনা, রাজনৈতিক বিতর্ক, West Bengal politics, Bengal political news, voter list revision, Kolkata breaking news, West Bengal news live, Bengal headlines 2025

মৃত পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারে তৃণমূলের প্রতিনিধিরা

Bengal SIR: এসআইআর (Special Intensive Revision) নিয়ে যখন উত্তপ্ত বঙ্গের রাজনীতি, ঠিক তখনই নতুন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এল পূর্ব বর্ধমানের পরিযায়ী শ্রমিক বিমল সাঁতরার মৃত্যু। তামিলনাড়ুতে কর্মরত অবস্থায় তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর ছড়াতেই রাজ্য রাজনীতিতে শুরু হয়েছে তীব্র তরজা। তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ—এসআইআর আতঙ্কেই মৃত্যু হয়েছে বিমলের। তবে সিপিএম ও বিজেপি এই দাবিকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

Advertisment

আরও পড়ুন-'বাংলাদেশি মুসলমান তাড়াতাড়ি বাংলা ছাড়ো, পালাও!', SIR ইস্যুতে হুংকার শুভেন্দুর

জানা গিয়েছে, পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার নবগ্রাম উড়িষ্যা পাড়ার বাসিন্দা ছিলেন ৫১ বছর বয়সী বিমল সাঁতরা। দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান বিমল জীবিকা নির্বাহের জন্য কৃষিকাজ করতেন। তবে স্থানীয়ভাবে কাজের অভাব থাকায় প্রতি বছরই এলাকার অনেকে তামিলনাড়ুতে ধান রোয়ানোর কাজে যান। বিমলও সেই দলেরই একজন ছিলেন।

Advertisment

তামিলনাড়ু পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী, অসুস্থ অবস্থায় গত ২৬ অক্টোবর বিমল সাঁতরা স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি হন। বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে ছেলে বাপি সাঁতরা তামিলনাড়ু পৌঁছান এবং থানজাভুর জেলার ওরাতানাডু থানায় (Orathanadu PS) অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করেন। শুক্রবার ময়নাতদন্তের পর শনিবার সন্ধ্যায় বিমলের মরদেহ পূর্ব বর্ধমানের নবগ্রামে ফেরানো হয়।

মরদেহ পৌঁছাতেই এলাকায় হাজির হন জামালপুরের তৃণমূল বিধায়ক অলক মাঝি ও একাধিক স্থানীয় নেতা। তাঁদের দাবি, বিমল সাঁতরার মৃত্যু কোনও সাধারণ মৃত্যু নয়। এসআইআর আতঙ্কের জেরেই তার মৃত্যু হয়েছে। বিমলের ছেলে বাপি সাঁতরাও একই অভিযোগ তুলে বলেন, “বাংলায় এসআইআর লাগু হওয়ার পর থেকেই বাবা চিন্তিত ছিলেন। পরিযায়ী শ্রমিক হওয়ায় ভোটার তালিকায় নাম থাকবে কি না, এই ভয়েই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত সেই আতঙ্কেই মৃত্যু হয়েছে।”

আরও পড়ুন- ভোটের আগে ভোটার যাচাই! SIR-এ কোন কোন নথি লাগবে? জেনে নিন ঝটপট

বিধায়ক অলক মাঝি বলেন, “১০০ দিনের কাজ বন্ধ থাকায় অনেকেই ভিনরাজ্যে যাচ্ছেন। বিমল সাঁতরা এসআইআর আতঙ্কে দিনরাত চিন্তিত ছিলেন। বারবার বাড়িতে ফোন করে নথিপত্রের খবর নিচ্ছিলেন। অতিরিক্ত চিন্তায় অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন।” তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে, বিমলের মৃত্যুর খবর পৌঁছায় দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও। তাঁর নির্দেশে রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ ও জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় মৃতের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

তবে তৃণমূলের এই দাবি মানতে নারাজ বিরোধীরা। প্রাক্তন বাম বিধায়ক সমর হাজরা বলেন, “বিমল সাঁতরা ও তাঁর পরিবার নবগ্রামের পুরোনো বাসিন্দা। তাঁদের নাম বহু বছর ধরেই ভোটার তালিকায় আছে। তাহলে আতঙ্কের প্রশ্নই আসে না। এটা শুধুই রাজনৈতিক প্রচার।”

জেলা বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র আরও সরাসরি তৃণমূলের বিরুদ্ধে আঙুল তোলেন। তাঁর কথায়, “এসআইআর নিয়ে আতঙ্ক তৃণমূল নেতাদের মনগড়া গল্প। তামিলনাড়ু পুলিশের FIR অনুযায়ী, বিমল সাঁতরা ও আরও একজন বোতলে থাকা বিষাক্ত তরলকে মদ ভেবে খেয়ে ফেলেছিলেন। সেই কারণেই মৃত্যু হয়েছে বিমলের। FIR-এ এসআইআর নিয়ে কোনও উল্লেখই নেই।”

আরও পড়ুন- যাত্রী স্বার্থে ফের এক দুরন্ত তৎপরতা রেলের, অভাবনীয় উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা

তিনি জানান, ওই FIR-এর ইংরেজি অনুবাদে লেখা আছে—২৬ অক্টোবর সন্ধ্যা ছ’টার সময় বিষাক্ত তরল পান করার পর বিমল সাঁতরা অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩০ অক্টোবর সকাল দশটার দিকে মৃত্যুবরণ করেন। অপর শ্রমিক এখনো চিকিৎসাধীন।

তবে বিমলের ছেলে বাপি সাঁতরা জানিয়েছেন, “তামিল ভাষায় লেখা FIR পড়ে বুঝতে পারিনি, পুলিশ যা বলেছে তাই সই করেছি।” তাঁর দাবি, তাঁর বাবার মৃত্যু এসআইআর আতঙ্কের কারণেই, বিষপানে নয়।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক তরজা ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। একদিকে তৃণমূল দাবি করছে, “এসআইআর আতঙ্কে রাজ্যের মানুষ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।” অন্যদিকে, বিরোধীরা বলছে, “তৃণমূল কংগ্রেস রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে সাধারণ মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ব্যবহার করছে।”

আরও পড়ুন- বঙ্গ রাজনীতির ছন্দপতন, না ফেরার দেশে জনপ্রিয় দাপুটে নেতা

Migrant worker death Migrant labourer SIR