পুজোর আগেই নয়া আতঙ্ক, হুহু করে ছড়াচ্ছে ‘মস্তিষ্কখেকো অ্যামিবা’র সংক্রমণ, ১৯ জনের মৃত্যুতে তোলপাড়

প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্তদের মাথাব্যথা, জ্বর, বমি বমি ভাব, ইত্যাদি দেখা দেয়। পরবর্তীতে ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি এমনকি কোমায় চলে যাওয়ার মতো শারীরিক জটিলতা তৈরি হয়।

প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্তদের মাথাব্যথা, জ্বর, বমি বমি ভাব, ইত্যাদি দেখা দেয়। পরবর্তীতে ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি এমনকি কোমায় চলে যাওয়ার মতো শারীরিক জটিলতা তৈরি হয়।

author-image
IE Bangla Web Desk
আপডেট করা হয়েছে
New Update
Deadly brain-eating amoeba

পুজোর আগেই নয়া আতঙ্ক

কেরলে ফের ছড়িয়ে পড়ছে মারণ ‘মস্তিষ্কখেকো অ্যামিবা’ (Naegleria fowleri) সংক্রমণ। রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছর এখন পর্যন্ত ৬১টি আক্রান্তের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছে তিন মাসের শিশু থেকে শুরু করে ৯১ বছরের বৃদ্ধ। গত বছর জুন-জুলাই মাসে কোঝিকোড়, মলাপ্পুরম এবং কন্নুর জেলায় এই সংক্রমণ ধরা পড়েছিল।

Advertisment

মস্তিষ্কখেকো অ্যামিবা কী?

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, Naegleria fowleri   উষ্ণ, স্থির মিঠা জলে জন্মায়। পুকুর, হ্রদ, নদী, রক্ষণাবেক্ষণ না করা সুইমিং পুল বা এর প্রধান আবাসস্থল। এই জল নাক দিয়ে শরীরে প্রবেশ করলে সরাসরি মস্তিষ্কে পৌঁছে মারাত্মক সংক্রমণ ঘটায়। এই সংক্রমণকে প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিনগোএনসেফালাইটিস (PAM) বলা হয়।

Kolkata Metro: পুজোর আগেই যাত্রী স্বার্থে দুরন্ত উদ্যোগ কলকাতা মেট্রোর! মহালয়ায় বাম্পার পরিষেবা

Advertisment

উপসর্গ

প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্তদের মাথাব্যথা, জ্বর, বমি বমি ভাব, ইত্যাদি দেখা দেয়। পরবর্তীতে ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া,  খিঁচুনি এমনকি কোমায় চলে যাওয়ার মতো শারীরিক জটিলতা তৈরি হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, সংক্রমণ অত্যন্ত দ্রুত হারে ছড়িয়ে পড়ে, ৫-১৮ দিনের মধ্যেই মৃত্যু ঘটতে পারে।

চিকিৎসার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ

কলকাতার সিএমআরআই হাসপাতালের স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শুভজিৎ পাল  বলেন, “সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সময়মতো রোগ চিহ্নিত করা। এর উপসর্গ ভাইরাল মেনিনজাইটিসের মতো হওয়ায় প্রায়ই রোগ শনাক্তকরণে ভুল হয়। এতে চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হয়, আর PAM-এর মতো দ্রুত সংক্রমণ রোগের ক্ষেত্রে  প্রতিটি ঘণ্টাই গুরুত্বপূর্ণ।”

Zubeen Garg Last Rites: ময়নাতদন্তের পর দেশে ফিরবে জুবিনের দেহ-শেষকৃত্যের আয়োজন, আর কী জানালেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী?

স্যার গঙ্গা রাম হাসপাতালের স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অংশু রোহতগি বলেন, “আগে বলা হতো এই রোগে মৃত্যুহার ১০০ শতাংশ, তবে তা পুরোপুরি সত্য নয়। কেরলে চিকিৎসকেরা উচ্চ মাত্রার সতর্কতা অবলম্বন করেছেন। দ্রুত শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার ফলে মৃত্যুহার কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব হয়েছে।”

West Bengal News Live Updates:জেলে যাবেন জেলমন্ত্রী? প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতির চন্দ্রনাথ সিনহার মামলার শুনানি আজ

চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

এই রোগের কোনো কার্যকর ওষুধ নেই। এখন পর্যন্ত যেসব রোগী বেঁচে ফিরেছেন, তাঁদের অ্যামফোটেরিসিন বি, মিল্টেফোসিন ও রিফাম্পিসিন এর মতো ওষুধের সংমিশ্রণে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মস্তিষ্কে ফোলাভাব কমাতে বিশেষ চিকিৎসাও করা হয়।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিরোধই এই রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়। নোংরা বা স্থির জলে সাঁতার না কাটতে, নাক দিয়ে জল না ঢুকতে দেওয়া এবং সঠিকভাবে ক্লোরিনযুক্ত সুইমিং পুল ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করার কথা  বলেছেন চিকিৎসকেরা।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী PAM-এর ঝুঁকি বাড়তে পারে। উষ্ণ তাপমাত্রা অ্যামিবার বংশবৃদ্ধি বাড়ায় এবং ফলে সংক্রমণের সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়।

সম্প্রতি কেরলের তিরুবনন্তপুরমের এক ১৭ বছরের কিশোর এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। জানা গিয়েছে ওই কিশোর বন্ধুদের সঙ্গে সুইমিং পুলে স্নান করার পর অসুস্থ হয়। এরপর স্বাস্থ্য দপ্তর ওই পর্যটন কেন্দ্রের পুল বন্ধ করে দিয়ে জলের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছে।

বিশ্রামহীন রুটিন, শরীরে অসহ্য ব্যথা, এসব কারণেই অল্প বয়সে চিরনিদ্রায় কিংবদন্তি?

বিশেষজ্ঞদের স্পষ্ট বার্তা—“মস্তিষ্কখেকো অ্যামিবা” বিরল হলেও অত্যন্ত প্রাণঘাতী। তাই সচেতনতা, প্রতিরোধ এবং দ্রুত শনাক্তকরণই জীবন বাঁচাতে পারে। তবে কলকাতা-সহ রাজ্যে স্বাস্থ‍্য দফতর জানিয়েছে, এই অ‍্যামিবা নিয়ে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। 

Deadly brain-eating amoeba