Bamboo bridge over the Damodar River: দামোদর যেন টাকা কামানোর 'পীঠস্থান' হয়ে গিয়েছে। কেউ দামোদরে বালি খাদান খুলে টাকা লুঠছেন আবার ফেরিঘাটের ইজারাদাররা অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের জন্য দামোদরের বুকে বাঁশ পুঁতে বানাচ্ছেন সেতু। পূর্ব বর্ধমানে এটাই এখন দামোদরের জল-ছবি। তবুও অ্যাকশনে অপারগ প্রশাসন ও সেচ দফতর।
নদী মাতৃক জেলা হিসাবে পরিচিত পূর্ব বর্ধমান। এই জেলার বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে দামোদর (Damodar) নদ প্রবাহিত রয়েছে। চাষের সেচের জলের সিংহভাগ জোগানটাই মেলে দামোদর থেকে। এই নদীকে আঁকড়ে বহু মৎসজীবীরও জীবন জীবিকা নির্বাহিত হয়। এহেন এক গুরুত্বপূর্ণ নদীর বুকে হাজার-হাজার বাঁশ পুঁতে সেতু তৈরির কাজ শুরু হতেই ক্ষোভের পারদ চড়েছে মেমারি ১ ব্লকের দলুইবাজার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে এলাকার বাসিন্দাদের। মুনাফা অর্জনের জন্য সেতু তৈরির নামে এভাবে দামোদরে দখলদারি কায়েমের বিষয়টি তাঁরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। তাঁরা দামোদরের বুকে সেতু তৈরির কাজ বন্ধের দাবিতে গণ স্বাক্ষর সম্বলিত অভিযোগ পত্র ব্লকের বিডিও-কে জমা দিয়েছেন।
মেমারি ১ ব্লকের বিডিওকে দলুইবাজার এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মেমারি ব্লকের পাল্লা এবং জামালপুর ব্লকের বেরুগ্রাম অঞ্চলের জামুদহ মৌজার মাঝ দিয়ে বয়ে গিয়েছে দামোদর নদ। জামুদহ থেকে পাল্লা পৌঁছোতে অনেক লোকজন নামিয়ে জোর-কদমে এখন দামোদরে বুকে বাঁশের সেতু তৈরির কাজ চলছে। এলাকাবাসীর দাবি, গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দামোদরের বুকে সেতু তৈরি হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, দলুইবাজার ২ গ্রাম পঞ্চায়েত বা মেমারি ১ পঞ্চায়েত সমিতি ,কেউই দামোদরের বুকে বাঁশের সেতু তৈরি করার অনুমতি দেয়নি। এরপরেই সেতু তৈরি বন্ধের দাবিতে দলুইবাজার এলাকার বাসিন্দারা মেমারি ১ ব্লকের বিডিও-কে অভিযোগ জানান।
অভিযোগ পেয়েই বিষয়টি নিয়ে বর্ধমান দক্ষিণের মহকুমা শাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বিডিও শতরূপা দাস। মহকুমাশাসককে চিঠি লিখে বিডিও জানান, “দামোদরের বুকে বাঁশ পুঁতে যে সেতুটি তৈরি হচ্ছে সেটি কখনই নিরাপদ সেতু হতে পারে না। মোটর বাইক বা তার সমতুল্য কোনও যানবাহনে চেপে কেউ ওই সেতু দিয়ে যাতায়াত চললে যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যেও মহকুমা শাসককে জানান বিডিও। এরই পাশাপাশি বিডিও ওই চিঠির প্রতিলিপি সেচ দফতরের দামোদর ক্যানেল ডিভিশন সহ একাধিক বিভাগ, ব্লকের ভূমি দফতর এবং মেমারি থানাতেও পাঠিয়ে দেন।
বিডিও-র চিঠির ভিত্তিতে প্রশাসনিক স্তরে তদন্ত শুরু হতেই সামনে চলে আসে জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির কীর্তি। জানা যায়, জামুদহ এলাকায় ফেরিঘাট করার জন্য চলতি বছরেও নির্দিষ্ট একটি সংস্থাকে লিজ অনুমোদন করেছে জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতি। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০২৫ সালের ৮ এপ্রিল পর্যন্ত ওই ফেরিঘাট চালানোর লিজ অনুমোদনের দরুন জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতি ওই সংস্থার কাছ থেকে নগদে ৬২ হাজার টাকা নিয়েছে। জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির একজিকিউটিভ অফিসারের স্বাক্ষর ও সিলমোহর দেওয়া বাৎসরিক লিজ চুক্তিপত্রে শুধুমাত্র জামুদহ ফেরিঘাটের জন্য লিজের কথা উল্লেখ করা রয়েছে। কিন্তু এভাবে বাঁশ দিয়ে সেতু তৈরির অনুমতির উল্লেখ চুক্তিপত্রে নেই। তাহলে দামোদরের বক্ষে বাঁশ পুঁতে সেতু তৈরির অনুমতি ওই সংস্থাকে দিল কে? এই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন- West Bengal News Live: সাতসকালে খাস কলকাতায় কাঁড়ি-কাঁড়ি 'টাকা' উদ্ধার! STF-এর জালে ১
বিষয়টি নিয়ে জেলা পরিষদের (পূর্ব বর্ধমান) ভূমি কর্মাধ্যক্ষ নিত্যানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “খোঁজ নিয়ে প্রশাসনের আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন সেচ দফতরের ছাড়পত্র না নিয়েই দামোদরের বুকে বাঁশ পুঁতে সেতু তৈরির কাজ চলছে। শুধু তাই নয়, এই ব্যাপারে মেমারি ১ পঞ্চায়েত সমিতি কিংবা দলুইবাজার ২ গ্রাম পঞ্চায়েত কোনও ছাড়পত্রও কাউকে দেয়নি। এই সব জেনেও জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতি কী করে নির্দিষ্ট একটি সংস্থাকে লিজ অনুমোদন করল এবং দামোদরের বুকে বাঁশ পুঁতে সেতু তৈরির কাজ চলছে জেনেও নিশ্চুপ করয়েছে, সেটাই আশ্চর্য্যের!"
অন্যদিকে, জামালপুরের বাসিন্দা তথা জেলা বিজেপি নেতা জীতেন্দ্রনাথ ডকাল বিষয়টি জানতে পেরে বলেন, “জামালপুর ব্লকে দামোদরের বুকে এমন সেতু অনেকগুলি রয়েছে। আদৌ সেচ দপ্তরের অনুমতি নিয়ে ওই সব সেতুগুলি তৈরি হয়েছে কিনা, তারও তদন্ত হওয়া জরুরি।"
জেলাপরিষদের ভূমি কর্মাধ্যক্ষের দাবির বিষয়টি নিয়ে বিডিও (জামালপুর) পার্থ সারথী দে’র কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি সেচ দপ্তরের ছাড়পত্র বিষয়ে স্পষ্ট কোনও উত্তর দিতে পারেননি। তিনি বলেন, ’এই ভাবেই তো অনেক দিন ধরে ফেরিঘাটটি চলে আসছে। তবুও কি হয়ে আছে সেই বিষয়ে আমি খোঁজ নেব।’ যদিও রাজ্যের সেচ মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া স্পষ্ট জানিয়েছেন, স্থায়ী হোক বা অস্থায়ী ,দামোদরের বুকে কোনও নির্মাণ কাজ করতে হলে সেচ দপ্তরের অনুমতি নিতেই হবে। এই ক্ষেত্রে সেচ দপ্তরের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা, তাঁর খোঁজ নেবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।