Awas Yojana Scheme: সরকারি আবাস যোজনায় (Aeas Yojana) পাকা বাড়ি পাওয়ার জন্য গরিব পরিবারের কেউ-কেউ রাজনৈতিক নেতাদের কাছে গিয়ে হাতে পায়ে ধরছেন। আবার কেউ চোখের জলও ফেলছেন। তবে আবাসের ঘরের টাকা হাতানোর জন্য ফিল্মি কায়দায় 'গরিবের অভিনয়' করার স্পর্ধা কেই বা দেখাতে পারে! এমনই কাণ্ড ঘটিয়ে প্রশাসনের কার্তাদেরও কার্যত ঘোল খাইয়ে দিয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর এক দম্পতি। নিখুঁত চিত্রনাট্য তৈরি করে দম্পতি যে অভিনয়টা প্রশাসনের কর্তাদের সামনে করেছেন তা জানলে দেশের ফিল্মি দুনিয়ার তাবড় অভিনেতা অভিনেত্রীরাও হয়তো মুখ লুকোবেন। তবে অভিনয় ভালো করলেও দম্পতি 'সাকসেস' হতে পারেননি। মহকুমা শাসকের নির্দেশে দম্পতির এই অভিনয়ই এখন প্রশাসনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তদন্তের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আবাসের টাকা হাতানোর অভিপ্রায়ে প্রশাসনের আধিকারিকদের সামনে বেনজির অভিনয় করে যাঁরা সাড়া ফেলে দিয়েছেন তাঁর হলেন রহিম শেখ ও তাঁর স্ত্রী সালেহার বিবি। তাঁরা পূর্বস্থলী ২ ব্লকের মাজিদা পঞ্চায়েতের অন্তর্গত পশ্চিম আটপাড়ার বাসিন্দা। তাঁদেরই প্রতিবেশী দিন দরিদ্র বিধবা আনসুরা বিবি। মাটির দেওয়াল আর টিনের চালার বাড়িতে তিনি বসবাস করেন। আনসুরার একমাত্র মেয়ের বিয়েও হয়ে গিয়েছে। জীবিকা নির্বাহের জন্য বিধবা আনসুরা গ্রামের একটি স্কুলে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য হিসাবে রান্না করেন। এহেন এক দরিদ্র বিধবা আবাসের সরকারি ঘর পাওয়ার যোগ্য হলেও তাঁর নাম জায়গা পায়নি সরকারি তালিকায়। কিন্তু তাঁর প্রতিবেশী রহিম শেখ পাকা বাড়িতে বসবাস করা সত্ত্বেও আবাসের তালিকায় নাম তুলে ফেলেছেন। প্রশাসনিক আধিকারিকদের ধোঁকা দিয়ে আবাসের সরকারি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য রহিম শেখ ও তাঁর স্ত্রী সালেহার বিবি ফন্দি এঁটে ফেলেন। সেই ফন্দি মোতাবেক তাঁরা প্রশাসনের লোকজনকে ধোঁকা দেওয়ার চিত্রনাট্যও ঠিক করে ফেলেন।
আবাসের তালিকা ধরে যাচাই প্রক্রিয়ার নেমে প্রশাসনের লোকজন সম্প্রতি পূর্বস্থলীর পশ্চিম আটপাড়া গ্রামে পৌঁছোন। সেই খবর রহিম শেখের কাছে পৌঁছায়। তখন দরিদ্র বিধবা আনসুরা বিবি এলাকারই একটি স্কুলে মিড-ডে মিল রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। রহিম শেখ দ্রুত ওই স্কুলে পৌঁছে গিয়ে আনসুরা বিবির কাছে থেকে তার বাড়ির চাবিটি চেয়ে নিয়ে চলে যান। তবে চাবি নেওয়ার কারণ ওই দিন আনসুরা বিবির কাছে স্পষ্ট করেননি রহিম। প্রশাসনের আধিকারিকরা পাড়ায় পৌঁছানোর আগেই রহিম শেখ ও তাঁর স্ত্রী সালেহার বিবি নিজেদের পাকা বাড়ি ছেড়ে আনসুরা বিবির কাঁচা বাড়িতে চলে যান। আধিকারিকরা ওই বাড়িতে পৌঁছোতেই স্বরচিত চিত্রনাট্য অনুযায়ী রহিম শেখ ও তাঁর স্ত্রী সালেহার নিখুঁত অভিনয় করা শুরু করে দেন। আনসুরার মাটির বাড়িটি তাদের বাড়ি বলে প্রমাণ করতে এই দম্পতি আগে
থেকে চিত্রনাট্য তৈরি করে রেখে ছিলেন।
আরও পড়ুন- West Bengal News Live: বিরাট রহস্যের পর্দা ফাঁস! হল না শেষ রক্ষা, কলকাতায় গ্রেফতার বাংলাদেশী নাগরিক
সেই মতো হাঁড়ি-কড়া নিয়ে আনসুরা বিবির বাড়ির উনানেই ওই সময় সালেহার বিবি রান্না করা শুরু করে দেন। সরকারি আধিকারিকদের সামনে সালেহার বিবি
একেবারে নিঁখুত অভিনয় করেন বলে প্রশাসনের কর্তাদের কোনও সন্দেহই সে সময় জাগেনি। প্রশাসনের লোকজন নিয়ম মেনে বাড়িটির ছবি ক্যামেরা বন্দি করতে চাইলে রহিম শেখ সাবলীলভাবে আনসুরা বিবির মাটির বাড়ির সামনেই দাঁড়িয়ে পড়েন। ছবি তুলে নিয়ে প্রশাসনের লোকজন অন্যত্র চলে যেতেই রহিম শেখ ও তাঁর স্ত্রী হাসি মুখে ফের নিজেদের পাকা বাড়িতে ফিরে যান।
প্রশাসনের লোকজনকে এভাবে ধোঁকা দেওয়ার বিষয়টি অবশ্যা ধামাচাপা থাকেনি। বিষয়টি জানাজানি হতেই এলাকায় তোলপাড় পড়ে যায়। বিপদে পড়তে পারেন আঁচ করে বিধবা আনসুরা বিবি তাঁর প্রতিবেশী রহিম শেখ ও তাঁর স্ত্রীর ছলচাতুরির সবিস্তার লিখিতভাবে বৃহস্পতিবার কালনার মহকুমা শাসককে জানান। সেই অভিযোগ পেয়েই নড়ে চড়ে বসে মহকুমা প্রশাসন। শুরু হয়েছে ঘটনার তদন্ত ।
আরও পড়ুন- Local Train: আজ থেকেই বাতিল গুচ্ছ গুচ্ছ লোকাল ট্রেন, কোন শাখায়? দুর্ভোগ এড়াতে আগে জানুন
এ বিষয়ে আনসুরা বিবি বলেন, "আমার কাঁচা বাড়ি নিয়ে প্রতিবেশী রহিম শেখ এমন ছলচাতুরির ঘটনা ঘটাবে তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। আমার কাঁচা বাড়িকে নিজের বসবাসের বাড়ি দেখাতে রহিম শেখ প্রশাসনের লোকজনকে দিয়ে ছবিও তোলায়। প্রশাসনকে ধোঁকা দিতে রহিম শেখের স্ত্রী সালেহার আমার বাড়ির উনানে রান্নাও করে। আমার বাড়ির চাবি নিয়ে রহিম শেখ যে এসব কাণ্ড ঘটাবে তা রহিম আমাকে জানায়নি।"
আনসুরা বিবি আরও বলেন, "রহিমের স্ত্রী কয়েকদিন আগে আমাকে বলে বেকার ভাতা পাওয়ার জন্য রহিমকে আমার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে হবে। তাই রহিম যখন আমার বাড়ির চাবিটা আমার কাছ চাইতে আসে তখন আমি সেটাই ধরে নিয়ে ছিলাম। সেই কারণেই সরল মনে আমি আমার বাড়ির চাবিটা রহিম শেখকে দিয়েছিলাম। পরে জানতে পারি বেকার ভাতার জন্য ছবি তোলার জন্য নয়, আসলে আবাস যোজনার লক্ষাধিক টাকা হাতানোর জন্য প্রশাসনের লোকজনকে ধোঁকা দিতেই রহিম আমার বাড়িটাকে ব্যবহার করেছে। প্রশাসনের লোকজনের সঙ্গে জোচ্চুরি করে রহিম শেখ ঠিক কাজ করেনি। এতে তিনিও ফেঁসে যেতে পারেন।"
এদিকে ফেঁসাদে পড়ে গিয়েছেন জানতে পেরে রহিম শেখ সব ঘটনা স্বীকার করে নেন। তাঁকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, "সরকারি আবাস যোজনায় আমার নাম এসেছে। আনসুরা বিবি ও আমার বাড়ির উঠান একই। আনসুরার বাড়িটি মাটির বাড়ি হলেও আমার বাড়িটি ইট দিয়ে তৈরি পাকা বাড়ি।
সরকারি লোকজন আবাসের তালিকা ধরে আমার বাড়ির অবস্থা যাচাই করতে এসে আমার পাকা বাড়ি আছে দেখলে আমার নামটা তালিকা থেকে কাটা যেত। তাই প্রশাসনের লোকজন ছবি নিতে চাইলে আমি আনসুরা বিবির মাটির বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েই ছবি তুলি। আমার স্ত্রী ওই সময় আনসুরা বিবির উনুনেই রান্না করছিল যাতে প্রশাসনের লোকজন সন্দেহ না করেন।"
এই ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে মাজিদা পঞ্চায়েতের প্রধান মজিবর রহমান জানিয়ে দেন। তবে কালনা মহকুমাশাসক শুভম আগরওয়াল পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন, অভিযোগ জমা পড়ার পরেই পূর্বস্থলীর বিডিও-কে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ সবিস্তারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।