প্রবল বর্ষণে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ, দুর্যোগে দার্জিলিংয়ে মৃত ১৩, আগামীকালই জরুরি বৈঠক মুখ্যমন্ত্রীর, শোকপ্রকাশ মোদীর

প্রবল বৃষ্টিতে দার্জিলিংয়ে ভূমিধস ও সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ৯ জনের। ধস ও ভারী বৃষ্টির কারণে বহুস্থানে রাস্তাঘাট বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

প্রবল বৃষ্টিতে দার্জিলিংয়ে ভূমিধস ও সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ৯ জনের। ধস ও ভারী বৃষ্টির কারণে বহুস্থানে রাস্তাঘাট বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
cats

লাগাতার বৃষ্টিতে দার্জিলিংয়ে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল সেতু

প্রবল দুর্যোগে ১৩ জনের মৃত্যু হল দার্জিলিংয়ে। এর মধ্যে শুধু মিরিকেই মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। ৪ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে সুখিয়াপোখরি থেকে। ধসের জেরে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে খবর। প্রশাসনের তরফে উদ্ধার কাজ শুরু করা হয়েছে। ফের ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে পাহাড়ে। সেকারণে বাসিন্দাদের প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে না বেরোনোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

Advertisment

শনিবার রাত থেকে শুরু হওয়া প্রবল বৃষ্টির জেরে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। বালাসন, তিস্তা, তোর্ষা, জলঢাকা, রায়ডাক, সংকোশ সহ সমস্ত নদীতে বেড়েছে জলস্তর। মিরিক, দুধিয়া, সুখিয়াপোখরি, নাগরাকাটা, বানারহাট, রামসাই এলাকা বর্ষণে ক্ষতির মুখে পড়েছে। পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় নেমেছে ধস। দুধিয়ায় লোহার সেতু ভেঙে দার্জিলিং, মিরিক সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে, কোচবিহার, দিনহাটার বিভিন্ন অংশ জলমগ্ন হয়ে পড়ছে।

টানা বৃষ্টিতে ক্ষতির মুখে পড়েছে আলিপুরদুয়ারও। বক্সা টাইগার রিজার্ভের সমস্ত সাফারি বাতিল করা হয়েছে। শালকুমারহাটের শিসামারা নদীর বাঁধ ভেঙে হুহু করে জল ঢুকছে নেপালিবস্তি, নতুনপাড়া, জলদাপাড়া বাজারে। প্রায় এক হাজার মানুষ জলবন্দি। কামাখ্যাগুড়িতে একাধিক বাড়ি জলমগ্ন। দুর্যোগের জেরে বহু এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। প্রশাসন পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে।

Advertisment

এদিকে ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত নাগরাকাটা! জলমগ্ন বহু বাড়িঘর, বন্যা পরিস্থিতি বানারহাট-বিন্নাগুড়িতেও

রাতভর ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকা। যার জেরে ভয়াবহ পরিস্থিতি নাগরাকাটায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একাধিক সেতু, কালভার্ট। জলমগ্ন এলাকার প্রায় কয়েকশো বাড়িঘর। পরিস্থিতির ক্রমশই অবনতির জেরে বামনডাঙ্গা চা বাগানে নামানো হয়েছে এনডিআরএফের টিমকে।

এদিকে, ডুয়ার্সের পাশাপাশি ক্রমাগত বৃষ্টি হয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভুটানেও। আর ভুটানের বৃষ্টির জল হাতিনালা দিয়ে এসে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে বানারহাট ও বিন্নাগুড়ি এলাকায়। কার্যত জলের তলায় ডুবে গিয়েছে বেশ কিছু বাড়িঘর। হাতিনালার জলের তোড়ে ভেসে যেতে দেখা গিয়েছে টিনের ঘর, টোটো। হাঁটু সমান জল জমে রয়েছে রাস্তাঘাটেও।

অন্যদিকে, ভারী বৃষ্টিতে ভয়াবহ অবস্থা পাহাড়েও। একাধিক জায়গায় ধস নামায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। এমনকি শিলিগুড়ির কাছে দুধিয়ায় ভেঙে পড়েছে লোহার সেতু। ইতিমধ্যেই দুর্যোগের জেরে দার্জিলিং জেলার মিরিক, সুখিয়াপোখরি, বিজনবাড়ি থেকে মোট ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।

মহানন্দা নদীতে প্রবল জলস্ফীতিতে বিপর্যস্ত শিলিগুড়ি সংলগ্ন পোড়াঝাড় এলাকা। ভেসে গেল অসংখ্য ঘরবাড়ি। গতকাল রাত থেকেই এলাকায় মহানন্দার বাঁধ ভেঙে জল ঢুকতে শুরু করে এলাকায়। জলের স্রোত এতটাই ছিল যে অনেক ঘর ভেসে যায়। বহু ঘরের থেকে আসবাবপত্র ভেসে গিয়েছে। কার্যত খোলা আকাশের নীচে এসে দাঁড়িয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দারা জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনকে জানালে প্রশাসনের নির্দেশে মহানন্দা ব্যারেজের লকগেট খুলে দেওয়ার পর জল নামতে শুরু করে। তবে পরিস্থিতি যা তাতে জল নামতে বহু সময় লেগে যাবে। এরই মধ্যে ফের বৃষ্টি শুরু হলে আরও ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হবে বলে আশঙ্কা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, কারও বাড়ির ফ্রিজ, কারো টোটো পর্যন্ত ভেসে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই রামকৃষ্ণ মিশনের তরফে স্থানীয় একটি ক্লাবে বাসিন্দাদের জন্য ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে।

পাহাড়ে একটানা ভারী বৃষ্টির জেরে জল বেড়ে গিয়েছে জলঢাকা নদীতে। আর এর জেরেই রবিবার সকালে রামসাইয়ের কামারঘাট এলাকায় জলের মধ্যে আটকে পড়েছে একপাল হাতি। পাশাপাশি স্থানীয় কালীবাড়ি এলাকাতেও একটি গন্ডার লোকালয়ে চলে আসে। তবে শুধু হাতি-গন্ডার নয়, কাশিয়ার বাড়ি এলাকায় একটি বাইসনের শাবক উদ্ধার করেছেন স্থানীয়রা। বহু বন্যপ্রাণী জঙ্গল থেকে নদীতে ভেসে গিয়েছে বলেও দাবি তাঁদের। ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছেন বনকর্মীরা। বন্যপ্রাণীদের দেখতে প্রচুর মানুষ ভিড় জমিয়েছেন এলাকায়।

এদিকে, প্রবল বৃষ্টিতে ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকাতেও যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জলমগ্ন হয়ে রয়েছে বহু এলাকা। ভেঙে পড়েছে একাধিক সেতু, কালভার্ট। ইতিমধ্যেই দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। এদিকে আগামীকালই উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্য সচিব। দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকও করবেন তিনি। 

আরও পড়ুন-দৈত্যের মত 'শক্তি', ধেয়ে আসছে বছরের প্রথম ঘূর্ণিঝড়, 'তুফানি তাণ্ডবের' আশঙ্কা, জারি হাই অ্যালার্ট

দার্জিলিং, কালিম্পং, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারের মতো জেলায় রবিবার সকাল পর্যন্ত অত্যন্ত ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাসের কারণে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর (IMD) জানিয়েছে, নিম্নচাপের কারণে সোমবার সকাল পর্যন্ত বাংলার বিভিন্ন জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি আনার সম্ভাবনা রয়েছে।

IMD এর বিশেষ বুলেটিনে আরও বলা হয়েছে, আলিপুরদুয়ারসহ উত্তরবঙ্গের অন্যান্য জেলায় সোমবার সকাল পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। দক্ষিণবঙ্গে অধিকাংশ স্থানে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে, তবে মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ও নদিয়ায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বিশেষ করে বাঁকুড়ায় সর্বোচ্চ ৬৫.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দার্জিলিং ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সতর্কতা অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের খবর অনুযায়ী, তিস্তা নদীসহ অন্যান্য নদীর জলস্তর বাড়ছে, ফলে বাড়ছে দুর্যোগের আশঙ্কা।

আরও পড়ুন-রবিবার রেড রোডে দুর্গাপুজোর কার্নিভাল, বৃষ্টিতে ভেস্তে যাবে মেগা ইভেন্ট? কী জানালো আলিপুর আবহাওয়া দফতর?

দার্জিলিংয়ের সাংসদ ও বিজেপি নেতা রাজু বিস্তা এক্স হ্যান্ডেলে এক পোস্টে লিখেছেন, ভারী বর্ষণের কারণে একাধিক মানুষের মৃত্যু এবং প্রচুর সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি ঘটেছে।  "দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলার বিভিন্ন স্থানে ভারী বর্ষণের কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মৃত্যুর খবর, সম্পদের ক্ষতি এবং একাধিক পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে।  আমি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।"

এদিকে IMD দার্জিলিং, কালিম্পং, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারের জন্য রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। রবিবারের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আলিপুরদুয়ারের জন্য রেড অ্যালার্ট এবং কোচবিহার, দার্জিলিং, কালিম্পং ও জলপাইগুড়ির জন্য ভারী বর্ষণের অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। NDRF সূত্রে খবর, ভয়াবহ বিপর্যয়ে এখনও পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। রেল পরিষেবাও পুরোপুরি বিপর্যস্ত। মিরিক লেকে এখনও নিখোঁজ ২ জন নিখোঁজ রয়েছেন। উত্তরবঙ্গে দুর্যোগ মোকাবিলায় NDRF-এর তিনটি দল মোতায়েন করা হয়েছে। 

আরও পড়ুন- মেগা কার্নিভালে শহরবাসীর মন জিতে নিল কলকাতা মেট্রো, বিশেষ পরিষেবায় আপ্লুত যাত্রীরা

দার্জিলিঙে সেতু ভেঙে প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, “দার্জিলিঙে সেতু দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় আমি গভীরভাবে ব্যথিত। যাঁরা প্রিয়জনদের হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি রইল আন্তরিক সমবেদনা। আহতরা দ্রুত আরোগ্য লাভ করুন—এই প্রার্থনা করি।”

প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, ভারী বৃষ্টি ও ধসের কারণে দার্জিলিং ও সংলগ্ন এলাকার পরিস্থিতি নিরবচ্ছিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থেকে সম্ভব সবরকম সাহায্য পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানান তিনি।

darjeeling Heavy Rainfall