Dilip Ghosh Attacks Mamata: পাথরপ্রতিমায় বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ, ঝলসে মৃত্যু হয় একই পরিবারের আট জনের। যার মধ্যে রয়েছে চার শিশুও। এনিয়ে শাসক-বিরোধী সংঘাত সপ্তমে। এবার পাথর প্রতিমায় বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনা প্রসঙ্গে মুখ খুললেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা বলেন, "যতবার বিস্ফোরণ হয় ততবার প্রশ্ন ওঠে বাজি না অন্য কিছু। নৈহাটিতে বিস্ফোরণ হয়েছিল। গঙ্গার অপর প্রান্তে হুগলির একাধিক বাড়ির কাচ ভেঙে গেছিল। আমি নিজে পিংলা গেছি। বর্ধমান গেছি। শেষ পর্যন্ত কতজন গ্রেফতার হয়? কতজন সাজা পায়? কেউ জানে না। আমি এগরাতে ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখেছি। কোনো ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া নেই। কিছুদিনের মধ্যে মানুষ ভুলে যায়। কিছু গরীব মানুষ যারা এইসব কারখানায় কাজ করেন তারা নিজেরাও অনেকসময় জানেন না কি বানাচ্ছেন। আদৌ এই সরকার চিন্তিত? এটা অন্তর্ঘাত কিনা কোনোদিন কেউ ভেবে দেখেছে? কোথায় তৈরি হচ্ছে? কোথায় যাচ্ছে? আগে আমরা শুনেছিলাম এই রাজ্যে তৈরি জিনিস অন্য রাজ্যে যেমন ঝাড়খণ্ড ওড়িশা যাচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশেও যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়গুলো কখনও আলোচনা করেন না। উনি শুধু হিন্দু মুসলমান করেন। মানুষের প্রাণ যাচ্ছে সেটা নিয়ে উনি কিছু বলেন না। করেন না"।
পাথর প্রতিমা কাণ্ডে NIA তদন্তের দাবি তুলে দিলীপ ঘোষ বলেন, "আমরা দাবি করছি NIA হোক। কারণ এই সরকার চায়না NIA হোক। ওরা চায় এই ধরনের ঘটনা ঘটুক। মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি হোক। ভোটের আগে এরকম ভয়ের পরিবেশ তৈরি হোক। কেউ যেন আতঙ্কে বাড়ি থেকে না বেরোয়। জায়গায় জায়গায় দাঙ্গা বাঁধানো হচ্ছে। রাজ্যে শান্তিতে থাকার দিন শেষ হয়ে গেছে। আমরা কেন্দ্রীয় এজেন্সির হস্তক্ষেপ চাইছি।
বিধায়ক বলছেন বাজি কারখানার বৈধ লাইসেন্স ছিল। যদিও স্থানীয় বাসিন্দারা সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। লাইসেন্স প্রসঙ্গে শাসককে কটাক্ষ করতে ছাড়েন নি বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ। তিনি বলেন, কীসের লাইসেন্স ছিল? এই ধরনের বিস্ফোরক তৈরির লাইসেন্স ছিল? এটাই তদন্ত হওয়া উচিত। ওই পাওয়ারফুল বিস্ফোরক আসলে কি ছিল? সেখানে কি অন্য কোনো কাজ হচ্ছিল? তিনি আরও বলেন, আমরা যেতে চাইলেও সরকার যেতে দেবেনা। কারণ সরকার সমস্ত তথ্য লোপাট করতে চায়। অপরাধীদের গা ঢাকা দেওয়ার সুযোগ দিতে চায়। ওখান থেকে নৌকা করে বাংলাদেশ চলে যায় অনেকে।
কলকাতা জুড়ে রাম নবমী পোস্টার প্রসঙ্গে বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা বলেন, "এই ধরনের আয়োজন বাড়ছে। হিন্দু সমাজ মোঘল পাঠান ব্রিটিশ দাসত্বে ছিল। হীনমন্যতায় ভুগছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও হিন্দুদের ওপর অত্যাচার চলছিল। রাম নবমীর আগেই দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা হচ্ছে ভয় পাওয়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। এবারের কুম্ভ দেখুন। লক্ষ লক্ষ মানুষ গেছে। মুসলমান সমাজ যদি ঈদ মহরম পালন করতে পারে, তাতে সবাই অংশ নিতে পারে, তাহলে হিন্দুদের সবথেকে বড় উৎসব রাম নবমীতে সবার অংশগ্রহণ করা উচিত। যারা ভয় দেখাচ্ছেন তাদের থেকে সবার আলাদা থাকা দরকার" ।
পুলিশের অনুমতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সবকিছুর পারমিশন লাগে নাকি? কার বাড়িতে কালীপুজো হবে। পারমিশন লাগবে? কার বাড়িতে বিয়ে হবে। পারমিশন লাগবে? এটা কি মোঘল সাম্রাজ্য চলছে? পুলিসকে ইনফর্ম করা হয়েছে। পুলিশের কাজ বিষয়টা যাতে নির্বিঘে হয় সেটা দেখা। পুজো হবে কিনা, শোভাযাত্রা হবে কিনা, সেটা যারা আসবেন তারা ঠিক করবেন।
রেড রোড থেকে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তাকে চরম নিশানা করেছেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। কটাক্ষ ছুঁড়ে তিনি বলেন, "কালকের ভাষণে সম্প্রীতি কোথায় ছিল আমি জানিনা। দেখে নেব, করে নেব, আমি একাই একশো, এটা কোন ধরনের সম্প্রীতির বার্তা? সম্প্রীতি সেটাই যেখানে উনি বলতেন আসুন সবাই মিলে একসঙ্গে থাকি। উনি উস্কাচ্ছেন। এটা সম্প্রীতি নয়। উনি জানেন সম্প্রীতি না ভাঙলে উনি ভোটে জিততে পারবেন না। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল আসার পরেই বিজেপি বেড়েছে। উনি যাই বলুন। সিপিএমের অত্যাচারে তৃণমূল এসেছিল। তৃণমূলের অত্যাচারে লোকে বিজেপির দিকে আসছে। ভাষণ দিলে রাজনীতির মঞ্চে দিক। পবিত্র ঈদের মঞ্চ অপবিত্র করে কেন উনি রাজনীতির ভাষণ দিচ্ছেন? আমি মুসলমানদের বলব যারা ওনার তাবেদারি করছে তাদের থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করুন। ইসলাম যদি শান্তির ধর্ম হয় তাহলে শান্তির কথা হোক। ঈদ কে অপবিত্র করার অধিকার কে দিয়েছে?
কেন্দ্রের অনেক সূযোগ সুবিধা মুসলিমরা পেয়েছে। বাংলায় পিছিয়ে রয়েছে মুসলিমরা। সাচার কমিটির রিপোর্টের প্রসঙ্গ তুলে দিলীপ ঘোষ বলেন, সাচার কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সবথেকে পিছিয়ে। মানসিক সামাজিক আর্থিক ভাবে পিছিয়ে আছে। এখানে যারা শাসন করেছে তারা বরাবরই মুসলমানদের নিয়ে রাজনীতি করেছে। উন্নয়ন করেনি। পাশেই একটা গ্রাম। ঈদে লাইট লাগিয়েছে। নিচের রাস্তা ভাঙা। মুসলিম এলাকায় রাস্তা হয়না কেন? উন্নয়ন হয়না কেন? তৃণমূল জানে, আমি কাজ করি বা না করি মুসলমান আমাকে ভোট দেবে। এটা ব্লক ভোট। মুসলমানরা যদি বিজেপির ভয়ে তৃণমূল কে ভোট দেয় তাহলে এই হবে। বিজেপিকে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। বিজেপি তোমাদের ভোট চায় না। কিন্তু তোমাদের সমাজের কথা ভেবে শিক্ষিত মানুষ অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে। একটা বড় জনসংখ্যা এই ভাবে পিছিয়ে থাকছে। সে আপনি মুখে যতই এগিয়ে বাংলা বলে চেচান। উত্তরপ্রদেশে দেখুন, যোগী বলেছেন দেশে মুসলমানদের জন্য সব থেকে নিরাপদ রাজ্য উত্তরপ্রদেশে। সেখানে তারা দিব্যি আছে। উন্নয়নের স্বাদ পাচ্ছে। এখানে ঈদের সময় তাদের ভরকাবেন তারা হিন্দু পাড়ায় গিয়ে অত্যাচার করবে"।