Durga Puja 2024: ভক্তি ভরে দেবী দুর্গার হাতে শাঁখা ও পলা পরালেই অবিবাহিত মহিলাদের মিলে যায় সুপাত্র। এমনকী নিঃসন্তান দম্পতিরাও সন্তান চেয়ে মানত করলে তা পূরণ হয়। প্রায় ২০০ বছরের পুরনো পুরাতন মালদার মুচিয়া এলাকার তরফদার পরিবারের দুর্গাপুজোকে ঘিরে এমনই সব বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে। আজও দুর্গাপুজোর দিনগুলি তরফদার বাড়িতে আশেপাশের গ্রামের বহু মানুষ এসে ভিড় জমান। দেবী দুর্গার হাতে শাঁখা ও পলা দিয়ে নিবেদন করলেই মহিলাদের মনস্কামনা পূরণ হয়, এমনটাই দাবি এলাকার বাসিন্দাদের।
পুরাতন মালদা ব্লকের মুচিয়া পঞ্চায়েতের মোহনবাগান গ্রামে তরফদার পরিবারের বাড়ি। একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যরা আজও পুরনো ২০০ বছরের নিয়ম ও নিষ্ঠা মেনেই দেবী দুর্গার পুজো করে আসছেন। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, এই বাড়িতে মাছ, মাংস সহ আমিষ খাবার ওঠে না। ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু হওয়া পুরাতন মালদার তরফদার বাড়ির দুর্গাপুজো গ্রামবাসীদের কাছে জাগ্রত মায়ের আরাধনা হিসেবে প্রচলিত রয়েছে।
বর্তমানে এই পরিবারের চার শরিক রবীন্দ্রনাথ তরফদার, বিষ্ণুপদ তরফদার, গোবিন্দ তরফদার এবং মানিক তরফদার রয়েছেন। বাড়ির পূর্ব পুরুষের হাত দিয়ে তৈরি হওয়া এই দুর্গা পুজোর আয়োজন করে আসছেন। প্রত্যেকে শরিকেরা বিবাহিত। তাঁদেরও সংসার রয়েছে। প্রত্যেকেই নিজেদের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত। আজও এক হাঁড়িতেই রান্না করে পুজোর চার দিন আনন্দ উৎসব করে থাকেন এই পরিবারের সদস্যরা। তরফদার পরিবারে রাধাগোবিন্দ মন্দির থাকার কারণে এখানে আমিষের কোনও প্রচলন নেই।
আরও পড়ুন- POCSO: পকসোতে ফাঁসির সাজা মহিলা তান্ত্রিকের, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড শিশুর দিদার
আরও পড়ুন- Eastern Rail: পুজোর মুখে বাম্পার সুখবর! রেলের এই শাখায় পরপর নতুন ট্রেন
তরফদার পরিবারের এক প্রবীণ সদস্য রবীন্দ্রনাথ তরফদার বলেন, "১৮৫০ সালে বাংলাদেশে পূর্ব পুরুষ চন্দনাথ তরফদারের উদ্যোগেই শুরু হয়েছিল দুর্গাপুজো। সেই সময় পূর্বপুরুষ দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। দেবী দুর্গার স্বপ্ন দেখেই সেই শুরু পুজোর। এরপর ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ থেকে সেই পুজো পূর্ব পুরুষের হাত ধরে চলে আসে এদেশের পুরাতন মালদার মোহনবাগান এলাকায়। আজও সেখানেই পুরনো নিয়ম মেনেই পুজো হয়ে আসছে।"
আরও পড়ুন- Durga Puja 2024: স্বপ্নে পাওয়া বাসনে ভোগ নিবেদন মা দুর্গাকে! প্রাচীন এই পুজো ঘিরে চর্চা সীমাহীন!
ওই পরিবারের প্রবীণ কর্তা রবীন্দ্রনাথ তরফদার আরও বলেন, "প্রায় ৩৬ বছর ধরে বংশ পরম্পরায় মৃৎশিল্পী প্রভাত চন্দ্র পাল প্রতিমা করছেন। যতদিন তিনি প্রতিমা করেন তিনিও নিরামিষ খান। মূলত আমাদের বাড়ির দেবী মায়ের কাছে অনেকেই মেয়েদের বিয়ে না হওয়া এবং সন্তানের জন্য মানত করে। দেবী দুর্গাকে শাখা ও পলা দিলেই তার ফল প্রাপ্তি হবেই এই বিশ্বাস যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। তাই আজও পুজোর ক'টা দিন তরফদার বাড়ির দেবী দুর্গা পুজোয় বহু মহিলারা আসেন, তাদের বাড়ির মেয়েদের ভালো জায়গায় বিয়ে দেওয়ার জন্য মানত করতে। আবার অনেকে আসেন সন্তানের প্রাপ্তি লাভের মানত করতে। শাঁখা দিয়ে ভক্তি ভরে মানত করলে বছর ঘুরতেই সেই মনস্কামনা পূরণ করে স্বয়ং দেবী দুর্গা, এমনই বিশ্বাস এখনও আমাদের মধ্যে রয়েছে।"