/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/13/her-life-in-danger-bengal-rape-survivor-s-father-seeks-transfer-to-odisha-2025-10-13-10-24-36.jpg)
দুর্গাপুর গণধর্ষণ কাণ্ডে অসহায় বাবার কাতর আর্তি
দুর্গাপুর গণধর্ষণ কাণ্ডে অসহায় বাবার আর্তি: 'মেয়েকে বাংলায় রাখতে চাই না'।
দুর্গাপুরের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের এক এমবিবিএস ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ। ওই তরুণীর বাড়ি ওড়িশার জলেশ্বরে। ঘটনার পর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাঁকে। মেয়ের শারীরিক অবস্থায় ভীষণ উদ্বিগ্ন বাবা জানিয়েছেন, তিনি আর তাঁর মেয়েকে বাংলায় রাখবেন না, যত দ্রুত সম্ভব ওড়িশায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন।
আরও পড়ুন-সাতসকালে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক মৃত্যু, আর্তনাদ, হাসপাতালে হাহাকার!
ওই ছাত্রীর বাবা সংবাদ সংস্থা ANI-কে জানিয়েছেন, “আমার মেয়ে যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছে। এখন হাঁটতেও পারছে না, শয্যাশায়ী। এই রাজ্যে মেয়ের কোনও নিরাপত্তা নেই। আমরা ওকে ওড়িশায় ফিরিয়ে নিতে চাই। বিশ্বাস হারিয়ে গেছে। বাংলায় ওকে আর রাখতে চাই না। ও ওড়িশায় থেকেই পড়াশোনা চালাবে। ওর জীবন এখানে বিপদে”।
ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার রাতে, যখন ওই তরুণী এক বন্ধুর সঙ্গে রাতের খাবার আনতে বাইরে বেরিয়েছিলেন। সেই সময় কিছু দুষ্কৃতী তাঁদের পথ আটকায় এবং জোর করে তরুণীকে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে তরুণীকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যে এই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও একজনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার সময় ওই তরুণীর সঙ্গে থাকা পুরুষ সঙ্গীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
আরও পড়ুন- ছুটির সন্ধ্যায় বিরাট দুর্ঘটনা। বর্ধমান স্টেশনে প্রবল ভিড়ে পদপিষ্ট অন্তত ১০, তুমুল চাঞ্চল্যে হুলস্থূল
ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি জানিয়েছেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁর কথায়, “এই ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয় ও বেদনাদায়ক। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেন, সেই আহ্বান জানাচ্ছি। ইতিমধ্যেই আমাদের প্রশাসনিক আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বাংলার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে।”
এদিকে, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এক্স-এ (X) পোস্ট করে জানিয়েছে, “এই ঘটনার জন্য আমরা গভীরভাবে দুঃখিত। অপরাধীরা কোনওভাবেই রেহাই পাবে না। ভুক্তভোগীর যন্ত্রণা ওড়িশার যেমন, তেমনই আমাদেরও।”
আরও পড়ুন-বিহার নির্বাচনে ‘M ফ্যাক্টর'ই বড় ভরসা, বাজিমাত করবেন নীতীশ কুমার?
এই ঘটনায় রাজনৈতিক চাপানউতোরও তুঙ্গে। বিজেপি রাজ্য সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছে। বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল দুর্গাপুরে পথ অবরোধ করে প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্ষিতা মহিলার পাশে না থেকে অভিযুক্তদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। কোটি কোটি টাকা খরচ হয় দুর্গাপুজোয়, কিন্তু রাজ্যের মহিলাদের নিরাপত্তা নেই।”
#WATCH | Paschim Bardhaman, West Bengal | Father of the Durgapur alleged gangrape victim, says, "... She is unable to walk and is on bedrest. The Chief Minister, DG, SP, and Collector are all helping us a lot and regularly enquiring about her health... I have requested the Chief… pic.twitter.com/W4u54SMnwl
— ANI (@ANI) October 12, 2025
তৃণমূল কংগ্রেসের এক মন্ত্রী (যিনি একসময় বিজেপি সাংসদ ছিলেন) এই ঘটনাকে “অত্যন্ত লজ্জাজনক ও মর্মান্তিক” বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “এই ধরনের অপরাধীদের দ্রুত বিচারের মাধ্যমে কঠোর শাস্তি দেওয়া উচিত। মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই নারীদের সুরক্ষার জন্য বিশেষ প্রচার অভিযান শুরু করেছেন।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনাটিকে “অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা বলে উল্লেখ করে বলেন, আমাদের সরকার এই ধরণের অপরাধের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে চলে। তিনজন অভিযুক্তকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকেই রেহাই দেওয়া হবে না।” মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনেরই উচিত ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। রাত ১২.৩০টার সময় কীভাবে মেয়েটি ক্যাম্পাসের বাইরে এল সেটাও বড় প্রশ্ন । কলেজের দায়বদ্ধতার বিষয়টি এড়ানো যায় না।” পাশাপাশি ওড়িশা সরকারের প্রতিও কটাক্ষ করে বলেন, “ওড়িশার সমুদ্রসৈকতে ধর্ষণের ঘটনায় ওদের সরকার কী করেছে?”
দুর্গাপুরের এই ঘটনা এক বছর আগের কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসক পড়ুয়া ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার স্মৃতিকেই উস্কে দিয়েছে। মাত্র কয়েক মাস আগেই কলকাতার একটি আইন কলেজেও ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ উঠে। ফলে আবারও প্রশ্ন উঠছে — রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তা কোথায়?