/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/12/durgapur-gang-rape-2025-10-12-07-49-01.jpg)
রাজ্যে এমবিবিএস ছাত্রী গণধর্ষণকাণ্ডে আটক সহপাঠী, রিপোর্ট তলব স্বাস্থ্য দফতরের
দুর্গাপুরের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে দ্বিতীয় বর্ষের এক এমবিবিএস ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তাল রাজ্য-রাজনীতি। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ ওই ছাত্রীর এক সহপাঠীকে আটক করেছে। নির্যাতিতার পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে ইতিমধ্যেই লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গোটা ঘটনায় এখনও পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জানা গিয়েছে ধৃতরা সকলেই এলাকারই বাসিন্দা। সকাল থেকেই গ্রামে গ্রামে চলছে তল্লাশি অভিযান। ড্রোন উড়িয়ে চলছে তল্লাশি।
আরও পড়ুন- ঘুমের মধ্যেই ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ড! ঝলসে মৃত্যু বাংলার ৬ পরিযায়ী শ্রমিকের, বাকরুদ্ধ অধীর
দুর্গাপুরে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের পুলিশ। একাধিক স্থানে অভিযান চালিয়ে এই তিনজনকে আটক করেছে। এর আগে বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছিল। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আজই তাদের আদালতে পেশ করা হবে। এই গ্রেফতারের পরই মামলার তদন্ত আরও ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, নির্যাতিতা ছাত্রী ওড়িশার বাসিন্দা। ঘটনার পর রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেছে। স্বাস্থ্য দফতরের মুখ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম জানিয়েছেন, “রিপোর্ট আগামীকাল পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। রিপোর্টের ভিত্তিতেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
গোটা ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। তাঁরা কলেজ চত্বরে বিক্ষোভে সামিল কলেজের নিরাপত্তা নিয়েই গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন।পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার তদন্তে একাধিক বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং আটক ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।উল্লেখ্য শুক্রবার রাতে কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে ডিনার করতে বেরোনোর কিছুক্ষণ পরেই ওই ছাত্রীকে ৪ থেকে ৫ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি মিলে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ।পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নির্যাতিতার বাবা-মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ছাত্রীর এক সহপাঠীকে আটক করা হয়েছে। পরিবারের দাবি, ওই সহপাঠী ও তার সহযোগীরাই ঘটনায় জড়িত। বর্তমানে নির্যাতিতা ওই তরুণী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে গণধর্ষণের মামলা রুজু করা হয়েছে। নির্যাতিতার জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে এবং আটক ছাত্রকে জেরা করার কাজ চলছে। ছাত্রীর বর্ণনায় জানা গিয়েছে, ডিনারের পর ফেরার পথে কয়েকজন দুষ্কৃতী তাদের পথ আটকে মোবাইল ও টাকা দাবি করে। এরপর তিনজন মিলে তাকে জোর করে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। পরে ছাত্রীর সহপাঠী রক্তাক্ত অবস্থায় ছাত্রীটিকে উদ্ধার করে হোস্টেলে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন- তুষারঝড়ে নিহত বাঙালি সেনার দেহ গ্রামে ফিরতেই কান্নার রোল, জাতীয় পতাকায় মুড়ে গান স্যালুটে শেষ বিদায়
কলেজ কর্তৃপক্ষ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, “ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা কালীন ছাত্রীটি এক গুরুতর ঘটনার সম্মুখীন হন, যা তিনি নিজেই জানিয়েছেন ও অভিযোগ করেছেন।” নির্যাতিতার বাবা জানান, সহপাঠীর ফোন পেয়ে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে শনিবার ভোরেই দুর্গাপুরে পৌঁছান। তাঁর দাবি, ঘটনার পেছনে ওই সহপাঠীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
এদিকে, কলেজের একাধিক ছাত্রছাত্রী নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন। এক প্রতিবাদী ছাত্র বলেন, “আমরা চাই প্রিন্সিপাল লিখিতভাবে ঘটনার ব্যাখ্যা দিন এবং তদন্তের অগ্রগতি জানানো হোক।”
এই ঘটনার পর রাজ্যজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিজেপি শনিবার রাজ্যের নারী নিরাপত্তা ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে। দলের অভিযোগ, “রাজ্য সরকার তোষণের রাজনীতি করছেন তার জেরে বাংলা আজ মহিলাদের জন্য দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।”
বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য এক্স-এ পোস্ট করে লিখেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনে বাংলা ধর্ষক ও অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে। দুর্গাপুরের ঘটনায় তীব্র জনরোষ তৈরি হয়েছে। ২০২৬-এ মমতাকে বিদায় জানাতেই হবে।” ঘটনার তদন্তে নেমেছে জাতীয় মহিলা কমিশনও
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, পুরো ঘটনার তদন্তে একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে এবং অভিযুক্তদের সন্ধানে একাধিক স্থানে তল্লাশি চলছে। শনিবার সাংবাদিক সম্মেলনে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘দুর্গাপুরের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতি চাইছি। আমাদের সবাই পথে নামবে। নারী সুরক্ষা নিয়ে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে এসেছি, ভবিষ্যতেও করব। বাংলার মা–বোনরা ঐক্যবদ্ধ হোন। বাংলায় কোনও মহিলা সুরক্ষিত নন। মা–বোনরা দেবী দুর্গার ভূমিকা নিন।’