Ghatal Master Plan: ঘাটাল আর বন্যা যেন সমার্থক। ফি বছর বর্ষা এলেই প্লাবিত হয় পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল। এখনও জলের তলায় রয়েছে ঘাটাল (Ghatal)। বছরভর মুখে মুখে ফেরে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের (Ghatal Master Plan) কথা। অভিনেতা দেব (Dev) সাংসদ হওয়ার পর থেকে তাঁর মুখেও বারে বারে এসেছে এই মাস্টার প্ল্যানের কথা। কখনও রাজ্যের মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়িত হওয়া নিয়ে পুলকিত হয়েছেন। আবার যখন জলে ভেসে যাচ্ছে ঘাটাল তখন আবার হালকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে খোদ সাংসদের। কিন্তু আদৌ মাস্টার প্ল্যানের ভবিষ্যৎ কি অন্ধকারেই ঝুলে থাকবে? দিনের আলো কখনও কি দেখবে না মাস্টার প্ল্যান?
অভিজ্ঞদের কথায়, এই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কথা যুগ যুগ ধরে শোনা যাচ্ছে। সেই স্বাধীনতার আগে থেকেই। জহরলাল নেহরু (Jawaharlal Nehru) প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান মঞ্জুর হয়েছিল। বাম আমলে কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার উদ্যোগ নিলেও কাজ শুরু হয়নি। তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে রাজ্যের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল একাধিকবার বৈঠক করেছে। তাতেও ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কপাল বাক্সবন্দি থেকেছে।
এবার লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) কথা দিয়েছেন, কেন্দ্রের সাহায্য ছাড়াই রাজ্য সরকার ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ন করবে। তারপর সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর রাজ্যের মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে দেব বলেছিলেন, "সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা শীঘ্রই কাজ শুরু করবেন। ৫ বছরের মধ্যে শেষ হবে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের কাজ। মানুষের সহযোগিতা পেলে ৩ বছরেও শেষ হতে পারে।" এবারও জলের তলায় ঘাটাল, আলোচনায় সেই বহু চর্চিত মাস্টার প্ল্যান। এই প্রকল্পের জন্য নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে, সরকারি জমি বেদখল হলে দখলদারি সরাতে হবে। নদী ও খাল ড্রেজিং করে নাব্যতা বাড়ানোর পাশাপাশি জোড়ালো বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি অজিত মাইতি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, "বিগত দেড় বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী ছোটখাট খাল সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে কাজ শুরু হয়েছে বলা যায়। মাস্টার প্ল্যানের জন্য মোট অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকা। এই মাস্টার প্ল্যান সম্পূর্ণ হলে ৪০-৫০ লক্ষ মানুষ উপকৃত হবে। শুধু ঘাটাল নয়, চন্দ্রকোনা, কেশপুর, দাসপুরের দুটো ব্লক, পাঁশকুড়া, পিংলা, ডেবরার বাসিন্দারাও লাভবান হবেন।"
ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে কি বলেছেন বিধায়ক অজিত মাইতি?
ঘাটালের শীলাবতী নদীর নাব্যতা খুবই কম। এই নদীর জলধারণ ক্ষমতা ৫০ বছর ধরে ক্রমশ কমে গিয়েছে। যার জন্য প্রতিবিছর বন্যা হয়। আশেপাশে যতগুলি খাল আছে সেগুলি দিয়ে জল পরিবহণ হচ্ছে না। সেজন্য মাস্টার প্ল্যানের শুধু ঘাটালকেন্দ্রীক শিলাবতী নদী নয়, চতুর্দিকে চন্দ্রকোনার কিয়দংশ, কেশপুরের কিয়দংশ, দাসপুরের দুটো ব্লক, পাশকুড়া, পিংলা, ডেবরা এই ব্লকগুলিতে যত খাল আছে সব খনন হবে। এই মাস্টার প্ল্যানের অঙ্গ। জলের স্রোত বইয়ে দেওয়া হবে। খাল, নদী একে অপরের সঙ্গে সঙ্গে কানেক্ট করা হবে। রূপনারায়নের ওপাশে জল গিয়ে পড়বে সমুদ্রে। উপকৃত হবে ঘাটাল, কেশপর, দুটি দাসপুর ব্লক,পিংলা, ডেবরা, পাশকুড়া। প্রায় ৪০-৫০ লক্ষ মানুষ উপকৃত হবে।
স্বাধীনতার পর থেকে কংগ্রেস আমল থেকে এই মাস্টার প্ল্যানের কথা চলছে। বাম আমল থেকে কেন্দ্রীয় সরকার করবে করবে বলে করছে না। দেব সাংসদ হওয়ার পর আওয়াজ তোলে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারে বারে চিঠি দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার কৌশল করে এড়িয়ে যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে এই টাকা জোগার করে কাজটা করার চেষ্টা করছেন।
আরও পড়ুন- Howrah Railway Division: হাওড়া শাখায় রেলের দুরন্ত কর্মকাণ্ড, এখন আরও কম সময়ে উপভোগ করুন মসৃণ যাত্রা
প্রচার না হলেও ২ বছর আগে থেকে ১০০ কোটি, ১৫০ কোটি বরাদ্দ করে ২-৩টে ছোট ছোট খাল খনন হয়েছে। শীঘ্রই পুরদমে মাস্টারপ্লানের কাজ হবে। দেড় বছর সময় লাগবে। রাজ্যের বাজেটে এটা হওয়ায় উচিত নয়। নদীপথ তো কেন্দ্রীয় সরকারের এক্তিয়ার ভুক্ত। কেন্দ্র না করলে রাজ্যকে করতে হবে। রাজ্যের মানুষ ডুবে যাচ্ছে তাই বাধ্য হয়ে মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগ নিয়েছেন। এটার বাজেট প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা।